জাল সনদে ১৯ বছর ধরে চাকরি, নীরব প্রশাসন

 ঢাকা সিটি ইন্টারন্যাশনাল কলেজ
ঢাকা সিটি ইন্টারন্যাশনাল কলেজ  © ফাইল ছবি

রাজধানীর ঢাকা সিটি ইন্টারন্যাশনাল কলেজে সনদ জালিয়াতি করে ১৯ বছর ধরে শিক্ষকতা করার অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এই সময়ে ওই শিক্ষক অন্তত ৭৯ লাখ টাকা বেতন উত্তোলন করেছেন জানা গেছে। অভিযোগ ওঠা ওই শিক্ষকের নাম মিজানুর রহমান মিজান। তিনি ঢাকা সিটি ইন্টারন্যাশনাল কলেজে সাচিবিক বিদ্যা বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত।

কলেজের একাধিক শিক্ষকের অভিযোগ, শাহজাহানপুরের শান্তিনগরে অবস্থিত কলেজটিতে ২০০৪ সালে সাচিবিক বিদ্যার প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান মিজানুর রহমান। কলেজের সাবেক এক অধ্যক্ষ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাকে এই পদে নিয়োগ দেন। 

সাচিবিক বিদ্যা বিষয়ে নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে ট্রেড কোর্স করা বাধ্যতামূলক। তবে এই ট্রেড কোর্সের সার্টিফিকেট জাল করেছেন মিজানুর রহমান বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি উচ্চতর স্কেলের জন্য আবেদন করলে বিষয়টি ধরা পড়ে। এছাড়া যোগদান গৃহীত হওয়ার আগেই তাকে এমপিওভুক্ত করার অভিযোগও রয়েছে।

বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ঘেঁটে দেখা গেছে, সাচিবিক বিদ্যা ও অফিস ব্যবস্থাপনা বিষয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে মাস্টার্স ডিগ্রির পাশাপাশি ৬ মাস মেয়াদী বাণিজ্যিক ডিপ্লোমা/সেক্রেটারিয়াল বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে। তবে অভিযোগ উঠেছে, এই কোর্সের সনদই জাল করেছেন মিজানুর রহমান।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মিজানুর রহমানের বাড়ি গাজীপুরের টঙ্গীতে। ২০০১ সালে অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল ট্রেনিং সেন্টার থেকে ৬ মাস মেয়াদি কোর্স করেছেন তিনি। প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা শান্তিনগর দেওয়া রয়েছে। তবে শান্তিনগরে এই নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল কলেজে যোগদান করেন মিজানুর রহমান। এদিন থেকেই তিনি এমপিওভুক্ত হন। অথচ তার যোগদানপত্র গৃহীত হয় ২০০৪ সালের ২ ডিসেম্বর। ফলে বিধিবহির্ভূতভাবে তাকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ কলেজে কর্মরত শিক্ষকদের।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত তিনবার জ্যেষ্ঠতার স্কেলের আবেদন করেছেন মিজানুর রহমান। তবে প্রতিবারই তার আবেদন বাতিল করা হয়েছে। আবেদন বাতিলের কারণ হিসেবে আঞ্চলিক কার্যালয় জানিয়েছে, ‘পেশাদার প্রশিক্ষণ সনদ সঠিক নয়’।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা সিটি ইন্টারন্যাশনাল কলেজের এক শিক্ষক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, মিজানুর রহমান কলেজের সাবেক অধ্যক্ষকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন। বিষয়টি সকলে জানলেও অজানা কারণে সব পক্ষই নীরবতা পালন করছেন। জাল সনদধারী শিক্ষক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অবিলম্বে  তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষক মিজানুর রহমানের ব্যবহৃত নাম্বারে কল দেওয়া হলে সাংবাদিক পরিচয় শুনে তিনি ফোন কেটে দেন।

ঢাকা সিটি ইন্টারন্যাশনাল কলেজের অধ্যক্ষ মো. মাহাবুবুল হক ভুঁইয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মিজানুর রহমানের সনদ জাল বলে আমরা জানতে পেরেছি। তিনি তিনবার জ্যেষ্ঠতার আবেদন করেও তার ফাইল বাতিল হয়েছে। ফাইল বাতিলের কারণ হিসেবে তার ট্রেড কোর্সের সার্টিফিকেট সঠিক নয় বলে জানানো হয়েছে।

জানতে চাইলে মাউশির ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ঢাকা সিটি ইন্টারন্যাশনাল কলেজের একজন শিক্ষকের সার্টিফিকেট জালের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ