নিয়োগ বাণিজ্যে জড়ানো ১১তম গ্রেডের এই কর্মচারীর আছে ডুপ্লেক্স বাড়িও
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৩, ০৭:৫০ PM , আপডেট: ০৭ মে ২০২৩, ০৮:৩৮ PM
প্রায় তিন বছর আগে প্রথম পোস্টিং হিসেবে রাজধানীর মতিঝিল মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র বর্তমানে কামরাঙ্গীরচর ৩০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ফার্মাসিস্ট পদে (১১তম গ্রেডে) চাকরিতে যোগ দেন মো. জহিরুল ইসলাম (৩২)৷ এরপর থেকেই শুরু হয় তার নিয়োগ বাণিজ্য। কৌশলে এ নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে তিনি বেকার ফার্মাসিস্টদের কাছ থেকে হাতিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। আর এর মাধ্যমেই তিনি মালিক হয়েছেন একটি ডুপ্লেক্স বাড়িরও।
এছাড়াও মো. জহিরুল ইসলাম সরকারি আইন লঙ্ঘন করে আরও কয়েকজনের সঙ্গে মিলে ঢাকার লালমাটিয়ায় খুলে বসেছেন ওষুধের ব্যবসাও৷ এলাকাবাসী ও তার সহকর্মীরা বলছেন, চাকরি নয়, যেন ‘আলাদীনের চেরাগ’ হাতে পেয়েছেন জহিরুল ইসলাম৷ সেই ‘চেরাগের’ জাদুতে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠেছেন নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান জহিরুল৷ ওপরে ওঠার সিঁড়ি হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগপন্থী এক চিকিৎসক নেতাকে৷ তাঁকে ব্যবহার করে গত মাসে তিনি বঙ্গবন্ধু গবেষণা সংসদ নামের একটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও হয়েছেন৷
এসব নিয়ে তার নামে বেশ কয়েকটি প্রতারণার মামলাও রয়েছে; দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে এসেছে সেসব মামলার কপি। এছাড়া চলতি মাসে বা আগামী মাসে বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিডিপিএ) নামের একটি পেশাজীবী সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে; দীর্ঘ ১৯ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনে মহাসচিব পদে প্রার্থী হয়েছেন জহিরুল ইসলাম৷ অভিযোগ রয়েছে, জহিরুলসহ তার প্যানেলের সব প্রার্থী বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মী৷ এই প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী গাজী সাইফুল ইসলামও বিএনপির সমর্থক।
গত রমজানে ঢাকার লালমাটিয়ায় নিজের ওষুধের ফার্মেসীর ওপরের একটি কক্ষে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন জহিরুলসহ বিএনপি-জামায়াতের একদল নেতা-কর্মী৷ সেখানে জহিরুলের সঙ্গে ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট বিএনপি-সমর্থক মজিবর রহমান, পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কাছিপাড়া ইউনিয়ন বিএনপি-সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ফোরকানসহ কয়েকজন৷ খবর পেয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের বিতাড়িত করেন৷ মজিবর ও ফোরকান- দুজনই ঢাকা মেডিকেলের অবসরপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট৷ তাঁদের মধ্যে মজিবর বিডিপি’র আসন্ন নির্বাচনে জহিরুলের প্যানেলে সহসভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন৷
বিডিপিএ-সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি ও জহিরুলের সহকর্মীরা বলেন, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে চাকরি পাওয়ার আগে জহিরুল ইসলাম বেকার ফার্মাসিস্ট অ্যাসোসিয়েশন নামের একটি সংগঠনের সভাপতি ছিলেন৷ চাকরি পেয়ে যাওয়ার পর তিনি এখন নতুন বেকার ফার্মাসিস্টদের মধ্যে পছন্দের কয়েকজনকে সামনে রেখে পেছন থেকে সংগঠনটি নিয়ন্ত্রণ করছেন৷ এই সংগঠনের মাধ্যমে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বেকার ফার্মাসিস্টদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন জহিরুল৷ সেই অর্থেই তিনি নিজের এলাকায় ডুপ্লেক্স বাড়ি করেছেন ও ওষুধ ব্যবসায়ী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন৷
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গতকাল শনিবার (৬ মে) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে সরকারি হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট নিয়োগের একটি পরীক্ষা ছিল৷ এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জহিরুল ইসলাম এবং তাঁর দুই সহযোগী আলমগীর ও নূর ইসলামের বিরুদ্ধে৷ বিডিপিএর নেতারা বলছেন, নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে সারা দেশের বেকার ফার্মাসিস্টদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়েছেন জহিরুল ও তার সহযোগীরা৷
এক্ষেত্রে বেকার ফার্মাসিস্ট অ্যাসোসিয়েশনকে ব্যবহার করছেন জহিরুল৷ সংগঠনটির নিয়ন্ত্রণ তার হাতে থাকায় অবাধে ও সহজে নিয়োগ-বাণিজ্য করতে পারছেন তিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পরীক্ষার্থী টাকা লেনদেনের কথা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কাছে স্বীকার করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জহিরুল ইসলাম বলেন, আমি সামনে বিডিবিএ’র নির্বাচন করছি। এ কারণে আমার প্রতিপক্ষ একটি গোষ্ঠী আমার নামে এ ধরনের মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। বাড়ির বিষয়ে তিনি বলেন, এটি আমি করিনি; আমার বাবা তার কিছু জমি বিক্রি করে এই বাড়ি করেছেন।
ফার্মেসীর বিষয়ে তিনি বলেন, আমি সেখানে পার্ট-টাইম বসি। আমি সেই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নই। গোপন বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, কেউ একজন ভুল তথ্য দেন স্থানীয় কাউন্সিলরকে; পরবর্তীতে এর সমাধান হয়ে গেছে।