হত্যা মামলার প্রধান আসামী কুবি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সম্পাদক

বিপ্লব চন্দ্র দাস
বিপ্লব চন্দ্র দাস  © ফাইল ছবি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মার্কেটিং বিভাগের ৬ষষ্ঠ ব্যাচের বিপ্লব চন্দ্র দাসকে। তিনি কুবির মার্কেটিং বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি।

মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল এবং সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল আমিন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বর্তমান সাধারণ  সম্পাদক মোঃ মীর শাহাদাত হোসেনকে অব্যাহতি দিয়ে বিপ্লব চন্দ্র দাসকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়।

তবে অব্যাহতির বিষয়ে বর্তামনে দায়িত্বে থাকা মীর শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ঠিক কি কারণে আমাকে অব্যবহিত দেয়া হয়েছে তা আমি জানিনা, এ ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে আমাকে কিছুই জানানো হয় নি।’

একজন এজহারভুক্ত হত্যা মামলার আসামীকে কেন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে- জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন বলেন, কারো নামে মামলা হলে তো সে অপরাধী নয়। আদালতে যতক্ষণ পর্যন্ত বিচার না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে অপরাধী বলা যায়না। তার বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকে, আদালত যদি তাকে সাজা তাহলে আমরা তাকে সরিয়ে দিতে পারি। অনেকের নামেই তো অভিযোগ থাকে, মামলা থাকে। আমিও তো গ্রেফতার হয়েছি নূরুর সাথে ঝামেলা করে, আদালত তো আমাকে সাজা দেয়নি। দেশের অনেক মন্ত্রী-এমপি তো গ্রেফতার হয়ে জেলে গেছে, তারা কি অপরাধী? অভিযোগ থাকলে, মামলা হলেই কেউ অপরাধী না।

আর মীর শাহাদাত হোসনকে অব্যাহতি দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার নিষ্ক্রিয়তার জন্য তাকে সরিয়ে দিতে হয়েছে। সংগঠনের যে কার্যক্রম সেগুলোতে নেই শাহাদাত। তাহলে কেন আমরা তাকে পদে রাখব? শাহাদাত সক্রিয় না থাকায় আমরা বিপ্লব দাসকে দায়িত্ব দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে যদি তারা সাংগঠনিক গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে না পারে তাহলে এ কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন করে জীবন বৃত্তান্ত আহ্বান করবো।

আরও পড়ুন: পাওয়ার পলিটিক্স নয়, রিসার্চ পলিটিক্সে গুরুত্ব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের

মুক্তিযুদ্ধ পরিবারের সদস্য না হয়েও কমিটিতে দায়িত্ব নিতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের গঠনতন্ত্রে স্পষ্ট বলা আছে যে মুক্তিযুদ্ধার সন্তান, নাতি নাতনি ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরাও এখানে কাজ করতে পারবে। এখন যদি মুক্তিযুদ্ধা পরিবারের কেউ দায়িত্ব নিয়ে কাজ না করে তখন তো আমার সংগঠন ফেলে রাখতে পারব না। তাই সংগঠনের কার্যক্রম চালু রাখতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আদর্শে বিশ্বাসীদের দায়িত্ব দিতে হয়।’

এর আগে গত ২০১৬ সালের আগস্টের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে মোমবাতি প্রজ্বালনের পর আধিপত্য বিস্তার ও হল দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান কুবি শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ। 

হত্যাকাণ্ডের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি রোধে সিন্ডিকেটের ৬২তম জরুরি সভা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এবং পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে। তদন্ত কমিটি ঘটনার ২ মাস ২৬ দিন পর ২৬ অক্টোবর প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, টেন্ডারবাজি ও ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে অনেক দিন ধরে চলে আসা দ্বন্দ্বের কারণে এ সংঘর্ষ হয়েছে।

এ হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০১৬ সালের ১ আগস্ট ১০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় একটি হত্যা মামলা করে। কুমিল্লা পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) শাখা তদন্ত শেষে মামলাটির চার্জশিটও জমা দিয়েছিল। মামলার আসামি ও মার্কেটিং চতুর্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী বিপ্লব চন্দ্র দাসকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে ডিবি হত্যাকাণ্ডের ৫ দিন পর ৬ আগস্ট। তখন বিপ্লব হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় বিপ্লব চন্দ্র। যদিও বিপ্লব চন্দ্র এখন জামিনে মুক্ত।

খালিদ সাইফুল্লাহ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক ছিলেন মিন্টু দত্ত। তিনি জানান, মামলার বাদীর নারাজির পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি পিবিআইয়ের কাছে আসে। একজনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নথিভুক্ত আছে এ মামলায়।


সর্বশেষ সংবাদ