এক যুগ ধরে বন্ধ মনোহরপুর স্লুইসগেট, ২০ গ্রামে জলাবদ্ধতা
যশোর সদর উপজেলার মনোহরপুরের সরুইডাঙ্গা এলাকার কাটা খালের স্লুইসগেটটি এক যুগ ধরে অচল অবস্থায় পড়ে আছে। এর ফলে সাম্প্রতিক টানা বর্ষণে সদর উপজেলার ইছালী, কাশিমপুর, লেবুতলা ও হৈবতপুর ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ডুবে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি, মাছের ঘের, এমনকি বসতবাড়িও।
স্থানীয়রা বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে স্লুইসগেটটি অকেজো হয়ে পড়ে থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এত দিন তারা নিজ উদ্যোগে গেটটি সরিয়ে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতেন। কিন্তু এখন সেটাও আর হচ্ছে না। একদিকে টানা বৃষ্টি ও গেটটি বন্ধ থাকায় ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
সরেজমিনে সরুইডাঙ্গার কাটা খালের স্লুইসগেটে গিয়ে দেখা যায়, গেটের দুটি দরজার একটি সম্পূর্ণ বন্ধ আর অন্যটি স্থানীয়রা লোহার রড দিয়ে সামান্য ফাঁকা করে রাখা। গেটের যান্ত্রিক অংশগুলো নষ্ট হয়ে গেছে, ঘুরানোর হাতল নেই, এমনকি রেলিং পর্যন্ত ভেঙে পড়ে আছে। ফলে এক পাশে পানির প্রবল স্রোত জমে থাকলেও অপর পাশে তা বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
স্থানীয়রা জানান, রাতের বেলায় রেলিংহীন ব্রিজে চলাফেরা করতে গিয়ে অনেকেই পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। এ অবস্থায় স্লুইসগেটটি তাদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: চুয়েটে ছাত্রদল কমিটি ঘোষণার পর উত্তাল ক্যাম্পাস, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
এলাকার বাসিন্দা রায়হান, বাচ্চু, টুটুল, মনিরুল, শরিফুলসহ অন্তত ১০ জন বলেন, কাটা খালটি চারটি ইউনিয়নের পানি অপসারণের মূল মাধ্যম। সরুইডাঙ্গার স্লুইসগেটটি বন্ধ থাকায় বর্ষা এলেই নিচু এলাকার প্রায় সব গ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়। এক সময় গ্রামবাসী শাবল, বাঁশ, দড়ি দিয়ে গেট খোলার চেষ্টা করতেন, কিন্তু এখন সেটাও সম্ভব হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রহেলাপুর, ওসমানপুর, এনায়েতপুর, জাগলা, কেফায়েতনগর, হাপানিয়া, রসুলপুর, তেতুলবাড়িয়া বিল, সালতা, বেনেয়ালী গ্রামের বেশির ভাগ অংশের পানি বের হয় এই খাল দিয়ে। এখন সেই পানিই জমে গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মফিজুল ইসলাম, আব্দুর রহমান, খলিল হোসেনসহ অনেকের সঙ্গেই কথা হয়। কেউ বলেন, তাদের মাছের ঘের তলিয়ে গেছে, কেউ বলেন মাঠে হাঁটু পানি। কেউ কেউ বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে বাড়িতে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও তারা স্লুইসগেটটি উঠানোর জন্য গিয়েছিলেন। কিন্তু গেটটি কোনোভাবেই উঠানো সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়ে তারা ফিরে এসেছেন।
আরও পড়ুন: এসএসসি পরীক্ষায় এক উপজেলায় চার স্কুলে পাস করেনি কেউ
লেবুতলা ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আলী নেওয়াজ বলেন, ‘প্রতিবার বৃষ্টি হলে ইউনিয়নের একাংশে পানিবন্দি হয়ে পড়ে। আমরা বহুবার এই খাল খনন ও স্লুইসগেট সচলের দাবি জানিয়েও লাভ হয়নি। স্থায়ী সমাধানের বিকল্প নেই।’
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, ‘খবর পেয়ে আমাদের একটি টিম ঘটনাস্থলে যায় এবং কিছুটা পানি চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে। তবে যান্ত্রিক সমস্যার কারণে পুরোপুরি সমস্যা সমাধান সম্ভব হয়নি। স্লুইসগেট সচল করা এবং খালখননের বিষয়টি সময়সাপেক্ষ হলেও দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’