খাগড়াছড়ির তেরাং তৈ কালাই ঝরনায় পর্যটকদের ঢল
চলমান তাপপ্রবাহে যখন দেশের নানা প্রান্তে হাঁসফাঁস অবস্থা, তখন খাগড়াছড়ির নিভৃত কোণে যেন প্রশান্তি হয়ে উঠেছে তেরাং তৈ কালাই ঝরনা। ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে এ ঝরনা এখন হয়ে উঠেছে হাজারো পর্যটকের কাছে স্বস্তি খোঁজার নতুন ঠিকানা।
আলুটিলা পাহাড়ি পথ পেরিয়ে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই প্রাকৃতিক জলপ্রপাত যেন গ্রীষ্মের দাবদাহে প্রকৃতির এক নির্মল প্রস্তাব। পাহাড়ি বনভূমির বুক চিরে নেমে আসা শীতল জলধারা ছুঁয়ে যাচ্ছে ক্লান্ত ভ্রমণপিপাসুদের হৃদয়।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা তরুণ পর্যটক শাওন বলেন, ‘প্রথমবার এসেছি। ঝরনার ঠান্ডা পানির ছোঁয়ায় মনে হচ্ছে গরমটা পুরো ভুলে গেছি। শহরের ব্যস্ততা আর কোলাহল থেকে যেন একেবারে আলাদা, এক নতুন জগতে চলে এসেছি।’
এই ঝনার আগের নাম ছিল ‘রিছাৎ ঝরনা’। তবে স্থানীয় ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ভাষায় নামকরণ করা হয় তেরাং তৈ কালাই—যার অর্থ ‘পাথরের নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া জলধারা’। শুধু একটি জলপ্রপাত নয়, এটি হয়ে উঠেছে স্থানীয় সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ধারক।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি এ নামের পেছনের লোককথাও আকর্ষণ করে ভ্রমণকারীদের। অনেকেই জানান, ঝরনার ধারে দাঁড়িয়ে শুধু ছবি তোলা নয়, এখানকার মানুষের মুখে মুখে শোনা গল্পগুলোও যেন মনে গেঁথে যায়।
আরও পড়ুন: ১৯ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি আবেদনের সময় বাড়ানো হবে কি না, যা জানা গেল
ঈদের ছুটিতে প্রতিদিনই শত শত পর্যটকে মুখর হয়ে উঠছে এই ঝরনা। শুধু ঈদই নয়, প্রতি সপ্তাহান্তে এবং সরকারি ছুটিতেও এখানে দেখা যায় পর্যটকদের ভিড়। পরিবারের সঙ্গে বেড়াতে আসা অনেকে জানান, শিশুরা এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশে খেলে বেড়াতে পারে, যা শহুরে জীবনে কল্পনাও করা যায় না।
স্থানীয় দোকানপাটেও বেড়েছে ব্যস্ততা। পর্যটকদের জন্য বিক্রি হচ্ছে পাহাড়ি ফল, হাতে তৈরি জিনিসপত্র, নাশতা ও ডাবের পানি। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি চলে জমজমাট কেনাবেচা।
তবে এত মানুষের আগমন শুভ হলেও, এর সঙ্গে বেড়েছে পরিবেশ বিপন্নতার আশঙ্কা। ঝর্ণার ধারে পড়ে থাকা পলিথিন, প্লাস্টিক বোতল ও অন্যান্য বর্জ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা।
আলুটিলা এলাকার বাসিন্দা দিবাকর ত্রিপুরা বলেন, ‘প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন আমাদের গর্ব, তেমনই এর রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের দায়িত্ব। প্রশাসনের পাশাপাশি পর্যটকদেরও সচেতন হতে হবে।’
আরও পড়ুন: এমপক্স নিয়ে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার’ হুঁশিয়ারি: দিয়েছে একগুচ্ছ সুপারিশ
খাগড়াছড়ি শহর থেকে আলুটিলা পর্যন্ত রিকশা বা অটোয় সহজেই পৌঁছানো যায়। সেখান থেকে কয়েক মিনিট হেঁটেই পৌঁছে যাবেন তেরাং তৈ কালাই ঝর্ণার পাদদেশে।
এই গ্রীষ্মে যদি প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে চান, তাহলে একবার ঘুরে আসুন খাগড়াছড়ির তেরাং তৈ কালাই ঝর্ণা থেকে। হয়তো এখানেই আপনি খুঁজে পাবেন সেই কাঙ্ক্ষিত প্রশান্তির ছায়া।