শেরপুরের গজনী অবকাশ কেন্দ্রে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়

  © টিডিসি ফটো

ঈদের চতুর্থ দিনেও শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত গজনী অবকাশ কেন্দ্রে বিপুলসংখ্যক পর্যটক আর দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত। কর্মজীবনের নানা ব্যস্ততা ও শহরের যান্ত্রিক কোলাহল ভুলে গারো পাহাড়ের নৈসর্গিক প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে ছুটে এসেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ। 

ঈদের দিন থেকেই অবকাশকেন্দ্রে আসছেন পর্যটকেরা। গত চারদিন ধরে দলে দলে পর্যটকেরা ভ্রমণ করছেন বিনোদনের জনপ্রিয় এই স্থানে। কেউ আসছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে, আবার কেউ আসছেন বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে। 

বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বিপুলসংখ্যক পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসু মানুষ গজনী অবকাশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ সেলফি তুলছেন। আবার কেউবা প্রিয়জনের ছবি মুঠোফোনে ক্যামেরাবন্দি করছেন। বিশেষ করে ঝুলন্ত ব্রিজ, ভাসমান সেতু, ওয়াটার পার্ক ও গারো মা ভিলেজ কর্নারে দর্শনার্থীদের অনেক ভিড় ছিল।

অনেকে আবার অবকাশের লেকে প্যাডেল বোটে চড়ে আনন্দ উপভোগ করছেন। অবকাশের ‘চুকোলুপি’ শিশুপার্কের বিভিন্ন রাইডে চড়ে ও খোলামেলা পরিবেশ পেয়ে শিশুরাও আনন্দে মেতে ওঠে। এক কথায় গজনী অবকাশ কেন্দ্র এখন বিপুলসংখ্যক পর্যটক আর দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কানাডাপ্রবাসী আখতার আহমেদ বাংলাদেশে এসেছেন। ঈদ উদ্যাপনের অংশ হিসেবে সপরিবারে ঢাকা থেকে গজনী অবকাশে বেড়াতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘এখানে বেড়াতে এসে চমৎকার লাগছে। গারো পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়েছি।’

সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রীতম সাহা রায় বলেন, ‘কয়েক মাস আগে গজনী অবকাশ সম্পর্কে ধারণা পেয়েছিলাম। তখন থেকেই ইচ্ছে ছিল সেখানে বেড়াতে যাব। আর এবার ঈদের ছুটি পেয়ে গজনী অবকাশ কেন্দ্রে বেড়াতে এসেছি। ভীষণ ভাল লাগছে। পাহাড় আর বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরাজি দেখে নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। স্বজনদের সঙ্গে ছবি তুলেছি, আনন্দও করছি।’

শেরপুর শহরের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী নাহিদুল হাসান ১০ বছরের ভাতিজিকে সঙ্গে নিয়ে গজনী অবকাশের চুকোলুপি শিশু পার্কে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘ঈদের আনন্দতো শিশুদের বেশি। তাই ভাতিজিকে নিয়ে এলাম। শিশু পার্কে অনেক ভিড়। একেকটা রাইডে উঠতে প্রচুর সময় চলে যাচ্ছে। তারপরও মেয়েটা আনন্দ পাচ্ছে। তাতেই আমি খুশি।’

অবকাশ পর্যটন কেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আব্দুর রহিম বলেন, এখানে প্রায় ১০০টি দোকান আছে। শীতকালে পর্যটন মৌসুমে বেচাকেনা ভালোই হয়। তবে গত বছরের তুলনায় এবার ঈদে পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। ঈদের দিন থেকে পর্যটকেরা বেড়াতে আসছেন। এতে দোকানগুলোয় ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। আশা করা যায়, আগামী শনিবার পর্যন্ত দর্শনার্থীদের সমাগম অব্যাহত থাকবে। 

তিনি আরও বলেন, এখানে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের রাত যাপনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবকাশ কেন্দ্রের নিকটবর্তী স্থানে হোটেল-মোটেল স্থাপন করা হলে এটি পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় হয়ে ওঠবে। পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।

জেলা প্রশাসক ও অবকাশ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সভাপতি তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য গজনী অবকাশ কেন্দ্রের উন্নয়ন কাজ অব্যাহত আছে। সেইসঙ্গে বাংলাদেশ পর্যটন উন্নয়ন কর্পোরেশনের মাধ্যমে অবকাশ কেন্দ্রের অদূরে হোটেলসহ রিসোর্ট নির্মাণের কাজও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

অপরদিকে ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আল-আমীন বলেন, ঈদ উপলক্ষে গজনী অবকাশ কেন্দ্রে দর্শনার্থী বেড়েছে। আগত দর্শনার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরা করতে পারেন তার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করছেন।


সর্বশেষ সংবাদ