বেতন পেয়ে যেন ঈদের চাঁদ হাতে পেলেন শিক্ষকরা
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৫, ০৮:১০ PM , আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৫, ০৮:১০ PM

নানা জটিলতায় তিন মাস বন্ধ থাকার পর অবশেষে বেতন পেলেন যশোরের বীর প্রতীক ঈসা হক কলেজের এক শিক্ষক। বেতন পাওয়ার পাশাপাশি মিলেছে ঈদ বোনাসও। তবে টাকা তুলতে পারবেন কি না, তা নিয়ে ছিল উদ্বেগ। শুক্রবার ব্যাংক খোলা থাকায় সকালেই লাইনে দাঁড়ান তিনি। কোনো জটিলতা ছাড়াই টাকা হাতে পেয়ে যেন ঈদের চাঁদ হাতে পেলেন। শুধু তিনিই নন, সারা দেশের পাঁচ লাখের বেশি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আটকে থাকা বেতন পেয়েছেন।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন তোলার সুবিধার্থে গতকাল শুক্রবার (২৮ মার্চ) ছুটির দিনেও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখাগুলো খোলা রাখা হয়। সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত লেনদেন চলে। যেসব শাখায় শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন হয়, সেখানে ব্যাপক ভিড় দেখা যায়। সাধারণ গ্রাহকরাও এ সুযোগে টাকা তুলতে ও জমা দিতে আসেন।
প্রত্যেক বিভাগে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন পরিশোধের জন্য একটি নির্দিষ্ট ব্যাংক রয়েছে। তবে কোনো এলাকায় নির্ধারিত ব্যাংকের শাখা না থাকলে সেখানে অন্য সরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে বেতন দেওয়া হয়।
খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাংক রূপালী ব্যাংক। যশোর কর্পোরেট শাখা থেকে এ অঞ্চলের সর্বাধিক শিক্ষকের বেতন পরিশোধ করা হয়। শুক্রবার এই শাখা থেকে এক হাজার চেকের বিপরীতে ৩ কোটি ২৬ লাখ টাকার বেশি বিতরণ করা হয়েছে। একই দিন বিভিন্ন গ্রাহক ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন।
রূপালী ব্যাংকের যশোর কর্পোরেট শাখার ব্যবস্থাপক (এজিএম) শহীদুল ইসলাম জানান, সকাল ৯টা থেকেই শিক্ষকেরা লাইনে দাঁড়াতে শুরু করেন। কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই সবার হাতে বেতন ও বোনাস তুলে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, "বৃহস্পতিবার প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনার পর আমরা দ্রুত প্রস্তুতি নিয়ে নেই। ছুটির দিনেও যেন সব কর্মী উপস্থিত থাকেন, সে ব্যবস্থা করা হয়। এটিএম বুথেও পর্যাপ্ত টাকা সরবরাহ করা হয়, ফলে কোনো সমস্যাই হয়নি। সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই আমরা সেবা দিতে পেরেছি।"
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক (ইএফটিএন) পদ্ধতিতে সরাসরি ব্যাংক হিসাবে পাঠানোর উদ্যোগ নেয় বর্তমান সরকার। তবে এটি বাস্তবায়নের সময় নানা সমস্যার মুখে পড়ে শিক্ষকরা। অনেকের ব্যাংক হিসাবের নম্বর বা ডিজিট ভুল ছিল, আবার কারও ব্যাংক হিসাবের সঙ্গে নামের অসঙ্গতি দেখা যায়। এ কারণে গত ডিসেম্বর থেকে অনেকের বেতন-ভাতা আটকে যায়।
অবশেষে সমস্যার সমাধান করে ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার অনেকের অ্যাকাউন্টে বেতন দেওয়া হয়। তবে সেদিন টাকা তোলার সুযোগ না থাকায় শিক্ষকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়। ঈদের ছুটির কারণে ব্যাংকগুলো টানা ৯ দিন বন্ধ থাকার কথা থাকলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ব্যবস্থায় চারটি সরকারি ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে শিক্ষকরা কাঙ্ক্ষিত বেতন হাতে পেয়ে স্বস্তি ফিরে পান।