কাজে আসছে না বয়স ছাড়, ৩২ নিয়ে উচ্চপর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে জানালেন সচিব

চাকরির বয়স ৩২ করার দাবিতে আন্দোলনরতরা ও ইনসেটে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম
চাকরির বয়স ৩২ করার দাবিতে আন্দোলনরতরা ও ইনসেটে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম  © ফাইল ফটো

চলমান করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় ১৮ মাস ধরে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেই সঙ্গে বন্ধ নিয়োগ কার্যক্রমও। এ অবস্থায় সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে ৩২ করার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে দুই দফায় বয়সে ২১ মাস ছাড় পেলেও ইতোমধ্যেই তা প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনরতরা। তারা বলছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত খুব কম সংখ্যক চাকরিপ্রার্থীরই কাজে আসছে। বঞ্চিত হবেন অধিকাংশরা। তাই স্থায়ীভাবে এই বয়স ৩২ করা না হলে লাগাতার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

অন্যদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, চাকরিপ্রত্যাশীদের বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে। ক্ষতিগ্রস্তদের কথা বিবেচনা করে এর স্থায়ী সমাধান বের করার প্রক্রিয়াও খোঁজা হচ্ছে। এ বিষয়ে অগ্রগতি হলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানিয়ে দেবে মন্ত্রণালয়।

আন্দোলনরতরা জানান, সরকারি চাকরিতে বয়সে ২১ মাস ছাড় দেওয়ার ফলে হাতেগোনা কিছু চাকরিপ্রার্থী উপকৃত হবেন। বিশেষ করে করোনার শুরুতে যাদের বয়স ৩০ বছর পূর্ণ হয়েছে; কেবল তারাই এর ফল ভোগ করবেন। আর কোভিড-১৯ পরিস্থিতির শুরুতে যাদের বয়স ২৮ বছর ছিল; তাদের কোনো কাজেই আসবে না। সেজন্য চাকরির বয়স স্থায়ীভাবে ৩২ করার দাবি তাদের।

তারা বলছেন, করোনায় দেশের সবকিছুই থমকে ছিল। শিক্ষার্থী-চাকরিপ্রত্যাশীরা ইতোমধ্যেই দেড় বছর হারিয়ে ফেলেছেন। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময়সীমা ৩০ হওয়ায় করোনার শুরুতে যাদের বয়স ২৮ ছিল; তাদের সময় শেষ হওয়ার পথে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং আওয়ামী লীগ সরকারের ২০১৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখিত ‘প্রতিশ্রুতি’ অনুযায়ী করোনাকালীন ‘প্রণোদনা স্বরুপ’ সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ করা এখন সময়ের দাবি।

এ প্রসঙ্গে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ করার দাবিতে আন্দোলনরতদের এক সমন্বয়ক মানিক রিপন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, চাকরির বয়সে ২১ মাস ছাড় দিয়ে সরকার আমাদের সাথে প্রহসন করেছে। আমরা তাদের এই ছাড় প্রত্যাখ্যান করেছি। আমাদের দাবি স্পষ্ট; চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে ৩২ বছর করতে হবে। তা না হলে লাগাতার আন্দোলন করা হবে।

তিনি আরও বলেন, যে ছেলেমেয়েরা বিগত দেড় বছর ধরে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আটকে আছে তারাও সামনে ভুক্তভোগী হবে। কেননা তারাও দুইটি বছর হারিয়ে ফেলেছেন যার কোন ক্ষতিপূরণ ব্যাকডেট প্রক্রিয়ায় হবে না। ২১ মাস যে ব্যাকডেটের কথা বলা হচ্ছে তার মধ্যে ১৭ মাস ইতোমধ্যেই পার হয়েছে। এরমধ্যে চাকরির বড় কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়নি। চাকরিতে আবেদনের বয়স দুই বছর বাড়িয়ে স্থায়ীভাবে ৩২ বছর করলে সকলেই তাদের হারিয়ে যাওয়া সময় দুই বছর ফিরে পাবে।

সরকারের একটি গোয়েন্দা সূত্রের তথ্যমতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে ৩২ বছর করার দাবিতে রাজধানীতে বড় ধরনের আন্দোলনের আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ের নজরদারিতেও রয়েছে । আন্দোলন ঠেকাতে এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে উচ্চপর্যায়ে আলোচনা চলছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, চাকরির বয়সসীমা স্থায়ীভাবে ৩২ করার দাবির বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা চলছে। সেখান থেকে কোনো নির্দেশনা আসলে আমরা সেটি জানিয়ে দেব। এই মুহূর্তে এর বেশি কিছু বলা সম্ভব না।

তথ্যমতে, গত ১৯ আগস্ট চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বয়সে ২১ মাস ছাড় দিয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে নির্দেশ দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে নির্দেশনার বাইরে রাখা হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা নির্দেশনা বলা হয়, যেসব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও এর অধীন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, দপ্তর ও সংবিধিবদ্ধ, স্বায়ত্তশাসিত, জাতীয়কৃত প্রতিষ্ঠানগুলো কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে বিভিন্ন ক্যাটাগরির সরকারি চাকরিতে (বিসিএস ব্যতীত) সরাসরি নিয়োগের লক্ষ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারেনি, সেসব প্রতিষ্ঠানকে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিতব্য বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২০২০ সালের ২৫ মার্চ নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর। তবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে ৩২ বছর। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিতে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদগুলোতে নিয়োগের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের।


সর্বশেষ সংবাদ