চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর সুপারিশ, অবসরের সময় কি বাড়বে?

চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে
চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে  © ফাইল ছবি

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স পুরুষের ৩৫ ও নারীদের ক্ষেত্রে ৩৭ বছর করার সুপারিশ করেছে আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন পর্যালোচনা কমিটি। অন্তর্বর্তী সরকারকে এমন সুপারিশ দিয়েছে তারা। তবে অবসরের বয়স বাড়ানো হবে কিনা, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। যদিও সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়লে অবসরের বয়সও বাড়বে।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চাকরিপ্রার্থীরা আন্দোলন করছেন। তবে মূল্যায়ন কমিটি দাবির থেকেও বেশি বয়স বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র গণমাধ্যমকে বলেছে, বয়স বাড়ানোর সুপারিশে বড় তিনটি যুক্তি দেওয়া হয়েছে। কমিটির এক সদস্য বলেছেন, প্রথমে প্রবেশের বয়স ৩২ ও ৩৩ বছর করার চিন্তা থাকলেও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর কমিটি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে।

যদিও শেষ পর্যন্ত প্রবেশের বয়স কত হবে, তা অন্তবর্তী সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে। তবে এ সুপারিশ চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বর্তমানে চাকরিতে প্রবেশের বয় ৩০ বছর। আর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাদের নাতি-নাতনীদের ৩২ বছর প্রবেশের বয়স। সুপারিশে তাদের জন্য আলাদাভাবে কিছু বলা হয়নি।

আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সাবেক সচিব আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীকে প্রধান করে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে দেয় সরকার। এর সপ্তাহখানেক পর সরকারের কাছে সুপারিশ দিয়েছে কমিটি। এর আগে জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল চাকরিপ্রত্যাশীদের বয়সের সময়সীমা বড়ানোর পক্ষে দলের অবস্থান তুলে ধরে।

সুপারিশের যুক্তি দিয়ে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারিতে নিয়োগ বন্ধ থাকায় ক্ষতি পোষাতে বয়স ছাড় দিলেও নতুন নিয়োগ ছিল কম। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় সরকারি-বেসরকারি চাকরির সুযোগ কমেছিল। আগের সরকারের মামলা-হামলার কারণে হাজারো মেধাবী শিক্ষার্থী শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারেনি। এসব বিষয় কমিটি গুরুত্ব দিয়েছে।

এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সংযুক্ত উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, কমিটি চাকরিতে প্রবেশের বয়স কত বছর করার সুপারিশ করেছে, তা জানি না। তবে প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা পড়েছে। শিগগির বিষয়টি পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশা তাঁর।

আরো পড়ুন: চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার সুপারিশ, নারীদের ৩৭

মেয়েদের বয়স বৃদ্ধির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, অনেক সময় স্কুল থেকে ঝড়ে পড়ার পর মেয়েদের নতুন করে ভর্তি হতে হয়। অনেকের বিয়ে হওয়ায় পড়ালেখায় বিরতি দিতে হচ্ছে। সন্তান হলে চাকরির পরীক্ষা দিতে পারে না। এসব বিবেচনায় তাদের বয়স দুই বছর বেশি রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এ সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে অবসরের বয়সও বাড়াতে হবে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।

একজন সচিব বলেছেন, কমিটিকে শুধু চাকরিতে প্রবেশের বয়স পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছিল। অবসরের বয়স বাড়ানোর সুপারিশ করার সুযোগ ছিল না। তবে সরকার হয়তো দু’টিরই ঘোষণা দেবে। চাকরিতে বয়সের প্রবেশসীমা সাময়িক না স্থায়ী হবে, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়।

কমিটির এক নাম প্রকাশ না করে বলেছেন, আগের সরকার করোনার কারণে বয়স ছাড়ের কথা বললেও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়নি। এটা তাদের কূটচাল ছিল। তাই বয়স বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। কমিটির প্রস্তাব উপদেষ্টা পরিষদে উঠানোর জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হবে। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। বৈঠকের আগে আইনি দিকগুলো চূড়ান্ত করতে অনেক উদ্যোগও নিতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ