নিয়োগে কোটা ফিরলে মেধাবীদের দেশ ছাড়ার প্রবণতা আরও বাড়বে

হাইকোর্টের রায়ের পর রাস্তায় নেমে আসেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী
হাইকোর্টের রায়ের পর রাস্তায় নেমে আসেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী  © ফাইল ছবি

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনরে জেরে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির নিয়োগে ৫৬ শতাংশ কোটা বাতিল করা হয়। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে কোটা ব্যবস্থা আগের মতোই বহাল ছিল। এরপর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত নতুন এ পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয়েছে নিয়োগ প্রক্রিয়া। সর্বশেষ গত ৫ জুন মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এরপর আবার কোটা নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক।

আদালতের রায় ঘোষণার পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক আন্দোলনের শুরু হয়। গতকাল বৃহস্পতিবারও ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে অব্যাহত ছিল কোটা পুনর্বহালের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচি। শিক্ষার্থীরা বলছেন, সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা কোনো দেশের স্বাভাবিক শিক্ষাব্যবস্থায় হতে পারে না। এতে দেশের মেধাবীদেরকে অবমাননা করা হচ্ছে।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের সদ্য গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী তানজিল হাসান নাবিল বলেন, ১৯৭১ সালে এ দেশের মুক্তিযোদ্ধারা একটি বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্যই জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করছিলো। যেকোনো চাকরি পরীক্ষায়, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় কোনো যোগ্য প্রার্থীকে বঞ্চিত করে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্য কাউকে সুযোগ দেওয়াকে আমি সম্পূর্ণভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি।

শাবিপ্রবির পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী শিব্বির আহমেদ বলেন, সম্প্রতি হাইকোর্টের এক রায়ে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কোটা প্রথা দেশের নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীদের অধিকার বঞ্চিত ও মেধা বিমুখ করার শামিল। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কোটা ব্যবস্থা চালু করা হলেও এখন তা চরম আকার ধারণ করেছে। যার ফলে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও দেশে  চাকরি না পেয়ে একপর্যায়ে হতাশ হয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। কোটা ফিরলে এ প্রবণতা আরও বাড়বে।

লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. হেলাল হোসেন বলেন, কোটা ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনলে চাকরির প্রতিযোগিতায় দেশের মেধাবীদের বড় একটা অংশ হুমকির মুখে পড়বে। যথেষ্ট মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও দেশের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে তারা বঞ্চিত হবেন। এর একটা সমীকরণ করলে দেখা যাবে, যদি কোনো সরকারি চাকরিতে পদ সংখ্যা থাকে ২ হাজার, তাহলে এই ৫৬ শতাংশ কোটায় পদ বরাদ্দ থাকে ১১২০টা। আর বাকি মেধাবীদের জন্য বরাদ্দ থাকে ৮৮০টা। এই বৈষম্যের হিসেব কে দেবে?

খাদ্য প্রকৌশল ও চা প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জাবির বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশের সূর্য সন্তান। তাদেরকে আমরা সম্মান জানাই। তারা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে। কিন্তু তাই বলে তাদের সন্তান এমনকি নাতি-নাতনিরা তুলনামূলক কম পরিশ্রম করেই কোটায় চাকরিতে যোগ দেবে আর মেধাবীরা পরিশ্রম করেও চাকরি পাবে না এটা হতে পারে না।

সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী মুরাদ মিয়া বলেন, যুগের পর যুগ মেধাবীদের এভাবে বৈষম্য করলে শিক্ষার্থীরা দেশে থাকতে ইচ্ছা পোষণ করবে না। ইতোমধ্যে মেধাবীরা দেশের বাইরে পাড়ি জমাচ্ছেন। কারণ এদেশে মেধাবীদেরকে সঠিক মূল্যায়ন করা হয় না। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরাই বাইরে গিয়ে ভালো ভালো গবেষণার কাজে কৃতিত্বের সাথে সাফল্য লাভ করে যাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের দেশে থাকতে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ এদেশে মেধার মূল্যায়ন করা হয় না।

 

সর্বশেষ সংবাদ