পর্দা নামলো অমর একুশে বইমেলার

  © সংগৃহীত

বছরটা লিপ ইয়ারের হলেও একদিন পরে শুরু হওয়া অমর একুশে বইমেলার পর্দা নামলো ২৮ দিনেই। শনিবার সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত সমাপনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ১১ মাসের অপেক্ষার প্রহর শুরু হলো পাঠক, লেখক ও প্রকাশকদের। 

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীকে উৎসর্গ করে ২ ফেব্রুয়ারি মেলার উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেলায় শেষ দিন পর্যন্ত মোট বিক্রি হয়েছে ৮২ কোটি টাকার বই। এবারের বইমেলায় মানসম্পন্ন বই এসেছে ৭৫১টি।

সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। তিনি বলেন, আজ আনন্দ ও বেদনার দিন। আনন্দ এই কারণে যে, আমরা সবাই মিলে বাংলা একাডেমি আয়োজিত মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা সফলভাবে সমাপ্ত করতে সক্ষম হয়েছি। পাশাপাশি বেদনার এই কারণে যে, প্রাণের মেলায় আজ বেজে উঠেছে বিদায়ের রাগিণী। তবে মেলা শেষ হয়ে এলেও প্রাণে রয়ে যায় প্রাণেরই অনিঃশেষ রেশ। তাই আজ আমরা আনন্দকেই প্রধান করে তুলতে চাইছি।

তিনি আরও বলেন, এবারের বইমেলা বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করা হয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে ঘোষিত মুজিববর্ষে তাঁকে উৎসর্গ করে আয়োজন করা এই বইমেলা ছিল তাঁকে উৎসর্গিত এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক আয়োজন। কারণ, অমর একুশে বইমেলার বিশ্বের দীর্ঘসময়ব্যাপ্ত জ্ঞানের মেলা হিসেবে স্বীকৃত।

স্বাগত বক্তব্যে বাংলা একেডেমীর মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, দেখতে দেখতে এই মেলা একটি মাস পেরিয়ে এলো। এবারের মেলা অতীতের যেকোনও সময়ের তুলনায় ছিল বিস্তৃত, ব্যাপক ও বর্ণাঢ্য। সব আয়োজনই কিছু ত্রুটি থাকে, অমর একুশে বইমেলাও এর ব্যতিক্রম নয়। আমরা আমাদের এবারের সীমাবদ্ধতা ও ঘাটতি পর্যালোচনা করে আগামীর আয়োজন আরও সার্থক ও সুন্দর করতে সচেষ্ট থাকবো এবং সে প্রচেষ্টায় নিশ্চয়ই আপনাদের সবাইকে সঙ্গে পাবো।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, মেলায় মানুষের মাঝে বই নিয়ে যে আগ্রহ দেখা গেছে, তাতে প্রমাণ হয় প্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশেও মুদ্রিত বইয়ের গুরুত্ব একটুও কমেনি।

সমাপনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুল মান্নান ইলিয়াস, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ, স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর প্রমুখ।

বই বিক্রির নতুন রেকর্ড: বই বিক্রিতে আবারও নতুন রেকর্ড গড়লো এবারের অমর একুশে বইমেলা। এবার মেলায় ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ। যা গতবারের তুলনায় দুই কোটি টাকা বেশি। এদিকে আজ পর্যন্ত বাংলা একাডেমির নিজস্ব বিক্রি ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার বই।

বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের মেলায় বিক্রির পরিমাণ ছিল ৮০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে ছিল ৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ২০১৭ সালে ৬৫ কোটি ৪০ লাখ, ২০১৬ সালে ৪০ কোটি ৫০ লাখ, ২০১৫ সালে ২১ কোটি ৯৫ লাখ, ২০১৪ সালে ছিলো সাড়ে ১০ কোটি এবং ২০১৩ সালে ১০ কোটি ১৪ লাখ টাকা।

শেষ দিনে মেলায় বই এসেছে ১৮৪টি। এ নিয়ে এবারের বইমেলায় প্রকাশিত মোট বইয়ের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪ হাজার ৯১৯টি। এর মধ্যে গল্প ৬৪৪টি, উপন্যাস ৭৩১টি, প্রবন্ধ ২৭১টি, কবিতা ১ হাজার ৫৮৫টি, গবেষণা ১১২টি, ছড়া ১১১টি, শিশুতোষ ২০৩টি, জীবনী ১৪৯টি, রচনাবলী ৮টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ১৫২টি, নাটক ৩৪টি, বিজ্ঞান ৮৩টি, ভ্রমণ ৮২টি, ইতিহাস ৯৬টি, রাজনীতি ১৩টি, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য ৩৬টি, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক ১৪৪টি, রম্য ও ধাঁধা ৪০টি, ধর্মীয় ২০টি, অনুবাদ ৫৬টি, অভিধান ১৪টি, সায়েন্স ফিকশন ও গোয়েন্দা বিষয়ক ৬৭টি এবং অন্যান্য ধরনের ২৬৮টি।

এবারের মেলায় ৭৫১টি মানসম্পন্ন বই এসেছে বলেও জানানো হয়েছে আয়োজক সংস্থা বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে।


সর্বশেষ সংবাদ