গ্রন্থমেলায় ইসকন, ক্ষেপলো হেফাজত

  © টিডিসি ফটো

প্রতি বছরের মতো এবারো বইমেলার উদ্বোধন করেছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত রোববার উদ্বোধনের পর বিকাল ৫টায় সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয় মেলার গেট। মেলায় অন্যান্যবারের মতো হরেকরকমের স্টল বসলেও এবারে একটি হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইসকনের বসানো স্টল নিয়ে দেখা দিয়েছে বিতর্ক। এদিকে বিষয়টি নিয়ে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে সংগঠনটির স্টল বরাদ্দ দেওয়ার ঘটনাকে বাংলা একাডেমির উস্কানিমূলক পদক্ষেপ বলে দাবি করা হয়েছে।

গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে হেফাজতে ইসলামীর নেতা আল্লামা বাবুনগরী গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ইসকন উগ্র ও ফ্যাসিবাদী হিন্দুত্ববাদের মতাদর্শের প্রচার প্রসারে জড়িত একটি বিতর্কিত আন্তর্জাতিক সংগঠন।

তিনি বলেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নয়ন এবং প্রসারের লক্ষ্যে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি এই বইমেলার আয়োজন করে। বাংলা একাডেমি হওয়ার কথা বাঙালি মুসলমানের মননের প্রতীক। বাংলা একাডেমির মূল কাজ বাঙালি মুসলমানের সাহিত্য, জীবনবোধ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করা। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতো একজন বুজুর্গ এই প্রতিষ্ঠান গড়ায় মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন। আজ সেখানে আমরা দেখছি উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের স্টল।এটা বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতাদের চিন্তার সম্পূর্ণ বিপরীত।

বাবুনগরী বলেন, এরকম একটি প্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম ও মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো সংস্থাকে তার দর্শন প্রচারের জন্য জায়গা করে দিতে পারে না। এটা জনগণের অর্থে জনগণের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি আক্রমণ বৈষম্য ছাড়া কিছু নয়। বাংলা একাডেমির এই উস্কানিমূলক পদক্ষেপের জন্য জনগণের যেকোনো ক্ষোভের প্রকাশ ঘটলে তার দায়ভার বাংলা একাডেমির ওপরই বর্তাবে।

সামাজিকমাধ্যমগুলোতেও ইসকনের স্টল নিয়ে বেশ বিতর্ক দেখা গেছে। আহমেদ কবির সুদীপ্ত বিশ্বাস নামে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘ইসকন সংগঠন হয়ে স্টল পেলে ইসলামি পাবলিকেশন স্টল না পাওয়াটা মারাত্মক বৈষম্য। এটা নিয়ে কথা বলা যেতেই পারে।’

তবে এ বিষয়ে আব্দুল্লাহ আল রাশীদ নামে এক ব্যবহারকারী ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে একুশে বইমেলায় ইসলামি বইয়ের স্টল না থাকা অন্যায়। ইসকনের স্টল থাকুক, সেই ধর্মাবলম্বীরা পড়ুক কোনো অসুবিধা নয়। কিন্তু দ্বিমুখী নীতি মানা যায় না।’

এদিকে বইমেলা ঘুরে দেখা গেছে, বাঙলা একাডেমি প্রাঙ্গণে স্টল বরাদ্দ পেয়েছে ইসকন। বইমেলার প্রায় প্রতিটি দোকানেই এখন নতুন বইয়ের সারি। সেখান থেকেই পছন্দের বই খোঁজার কাজটি করছেন পাঠকরা। বইয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে নানা বয়সের বইপ্রেমীরা এসেছেন মেলায়। স্কুল শেষে মেলায় এসেছে শিক্ষার্থীরাও। সকলের মতো তাদেরও বেচাবিক্রি জমে উঠতে শুরু করেছে।

বইমেলায় বিকাল গড়ালে সন্ধ্যায় বাড়তে থাকে ভিড়। কেউ কেউ আসছেন বই দেখতে, আবার অনেকেই ব্যাগভর্তি বই নিয়েও বাড়ি ফিরছেন। আর বইপ্রেমীদের আনাগোনা কম থাকলেও বিক্রি তুলনামূলকভাবে ভালো বলেই মত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর। গতকাল ছিলো অমর একুশে গ্রন্থমেলার পঞ্চম দিন। মেলায় এদিন নতুন বই এসেছে ১১৮টি।

এ বিষয়ে অমর একুশে গ্রন্থমেলার সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদকে বারবার ফোন দেয়া হলেও তাদের থেকে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।


সর্বশেষ সংবাদ