‘ঢাবি-বুয়েট-ইডেন ছাত্রীরা পতিতাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত’— গাইড বইয়ের তথ্যে বিভ্রান্তি-সমালোচনা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সরকরি সাত কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের কবির পাবলিকেশন্সের গাইড বইয়ের একটি তথ্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিভ্রান্তিকর এ তথ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা। আর ঢাবি ও কলেজগুলো প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা বলা হয়েছে।
অনার্স ২০১৬-১৭ সেশনের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিচ্যুতি ও অপরাধ কোর্সের বিষয় কোড ২৪২০১৩। কবির পাবলিকেশন্সের গাইড বইটিতে ‘পতিতাবৃত্তির কারণ’ বিষয়ক একটি প্রশ্নের উত্তরে ১৪৭ নম্বর পাতায় বিশ্লেষণধর্মী কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। মূলত এ প্রশ্নের উত্তরে ‘অসৎ সঙ্গ’ নামের একটি পয়েন্টের বিশ্লেষণ নিয়ে এ সমালোচনার সূত্রপাত।
ওই পয়েন্টের বিশ্লেষণে নামেমাত্র পুলিশের তথ্যের সূত্র বলা হলেও কবে, কোথাও সেটি প্রকাশিত হয়েছে সে সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। পুলিশের দেয়া এ তথ্য সূত্র সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে দায়িত্বশীল কারো কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: আরমানিটোলায় অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ গেল ইডেন কলেজ ছাত্রীর
অসৎ সঙ্গের এ পয়েন্টের বিশ্লেষণে লেখা হয়েছে, ‘‘শহরের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের মেয়েরা পতিতাবৃত্তির সাথে জড়িত। ঢাকা শহরের বিভিন্ন হোটেলে ও পতিতালয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে যে তথ্য দিয়েছে সেখানে দেখানো হয়েছে পতিতালয়ের একটা বড় অংশ ইডেন কলেজ, বুয়েট, ঢাকা মেডিকেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুলের মেয়েরাও একসময় সঙ্গীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পতিতাবৃত্তি গ্রহণ করে।’’
এবিষয়ে ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য বলেন, এ ধরনের কোনো তথ্য আমাদের আগে জানা ছিল না। এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। এটা অপবাদের শামিল। একটা অনুমান নির্ভর তথ্যের ভিত্তিতে এভাবে কারো বিরুদ্ধে ব্যক্তি আক্রমণ করা উচিৎ হয়নি। আমরা আগামীকাল সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে কথা বলবো। দেখি এ বিষয়ে কি করা যায়।
আরও পড়ুন: ব্যাংকের অফিসার সেজে ঢাবি ছাত্রীকে বিয়ে, আসলে কফি ব্যবসায়ী
সম্প্রতি বইটির এ তথ্য সামনের আসার পর থেকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের মাঝেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রী সনিয়া আফরিন বলেছেন, পতিতাবৃত্তির কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে অসৎ সঙ্গ। কারা এই সঙ্গের সাথে জড়িত? ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা ইউনিভার্সিটি, বুয়েট, মেডিকেলের মেয়েরা। এ লেখক এবং প্রকাশনীর শিক্ষা দেয়া উচিৎ। তারা এটাও জানে না যে আবেগপূর্ণ যৌনতা কি এবং পতিতাবৃত্তি কি?
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানীও। তিনি বলেছেন, বিষয়টি সত্যি হলে খুবই নিন্দনীয় কাজ হয়েছে। এসব নোট-গাইডগুলো আসলে জ্ঞান বিতরণের জন্য লেখা হয় না। সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে মার্কেটে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ধরনের আপত্তিকর একটি তথ্য লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই লেখকদের আরও সতর্ক হওয়া উচিৎ ছিল। একইসঙ্গে ওই তথ্যে গ্রহণযোগ্য রেফারেন্স উল্লেখ করা প্রয়োজন ছিল।
তবে বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছে প্রকাশনীর পরিচালক নাজমুল হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের প্রকাশনী থেকে শত শত বই প্রকাশিত হয়েছে। আসলে সবগুলো লেখকের পাণ্ডুলিপি থেকে প্রতিটি লাইন পড়ে দেখা দুঃসাধ্য। বইটির এ ধরনের তথ্য এর আগে আমাদের নজরে আসেনি। আমরা এটি চেক করে দেখে পরবর্তী সংস্করে সংশোধন করে দেবো। সংশোধন সম্ভব না হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনে বইটি বাজারে ব্যান করে দেবো।