বুক রিভিউ: প্রদোষে প্রাকৃতজন
- ফারিদ মুস্তাকিম
- প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২০, ০২:২৩ PM , আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২০, ০২:২৩ PM
লেখক শওকত আলীর রচিত ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ পুরো উপন্যাসটি ইতিহাসের কোন এক বিশেষ ক্রান্তিকালকে আশ্রয় করে রচিত হয়েছে। ‘প্রদোষ’ মানে হচ্ছে একটা বিশেষ সময়, যা আলো এবং অন্ধকারের মাঝামাঝি মুহূর্ত কে বুঝিয়ে থাকে আর ‘প্রাকৃতজন’ মানে সাধারণ মানুষ। অধিকাংশ সময় ইতিহাসের নির্মাতা হিসাবে আমরা বিজয়ী বা ক্ষমতাবল শ্রেণিকে দেখে থাকলেও,এই উপন্যাসে আলো-আধারির এক বিশেষ ক্রান্তিকালে সাধারণ মানুষরে দৈনন্দিন জীবনযাপনের স্বাভাবিক আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে ইতিহাসের গতিপথকে প্রগাঢ়ভাবে নির্মাণ করেছেন লেখক শওকত আলী। উপন্যাসে কিছু কাল্পনিক চরিত্রের বদৌলতে সাধারণ মানুষের মুখের ভাষায় বিদিত হয়েছে ইতিহাসের কিছু সংকটময় মুহূর্ত।
কাহিনী সংক্ষেপে:
পুরো ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে উপমহাদেশে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার পূর্বে নগরভিত্তিক সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় গ্রাম্য জীবনের আলোকে। পুরো উপন্যাস জুড়ে আছে ইতিহাসকে কেন্দ্র করে গভীর প্রেমের প্রতিচ্ছবি,আছে জীবনমুখী নানা প্রশ্ন,আছে স্ববিরোধী কিছু চরিত্র। উপন্যাসে আরো দেখানো হয়েছে,উপমহাদেশে পালদের পরে সেনরা কিভাবে এবং পরবর্তীতে মুসলিমরা কিভাবে এ অঞ্চলের শাসনক্ষমতা জয় করলো সে সম্পর্কে কিছু সত্যকথন। চরিত্রগুলোর মধ্য দিয়ে নিখুঁতভাবে দেখানো হয়েছে মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে কিভাবে ধর্মের সাহায্য কামনা করেছে আবার সেই ধর্ম, কি করে দ্রোহ কিংবা সাম্প্রদায়িক কোন্দলের জন্ম দেয়। চরিত্রগুলোর আলাপচারীতায় মানব মুক্তির নানাদিক সুচারুরূপে ফুটে উঠেছে। সর্বোপরি দেখানো হয়েছে, ইতিহাসকে পুঁজি করে নাটকীয় কিছু কাল্পনিক ঘটনার আলোকে সেন শাসনামলে সমাজের নিম্নশ্রেণির মানুষ কিভাবে নিজেদের দুঃখ দুর্দশাগ্রস্থ অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে ভিন্ন ধর্মের আশ্রয় নিয়েছে।
বাংলা সাহিত্যের এক অনবদ্য সৃষ্টি এই উপন্যাসটি
ব্যক্তিগত মতামত: ইতিহাস কে কেন্দ্র করে যেসকল উপন্যাসের কাহিনী শুরু হয়ে ইতিহাসের ই বিভিন্ন মোড়ে ঘুরপাক খায়,তাদের মধ্যে প্রদোষে প্রাকৃতজন অন্যতম। চতুর্দশ শতকের কাহিনী হওয়ার দরুণ ভাষাগত কিছু দুর্বোধ্যতা থাকলে ঘটনার প্রতি বাঁকে উত্তেজনা আর গভীর রসবোধ সবকিছু কে পাশ কাটিয়ে যায়। আমার পড়া অন্যতম সেরা একটা বই।
বই: প্রদোষে প্রাকৃতজন
লেখক: শওকত আলী
মূল্য: ২৭৫ ( মুদ্রিত)
প্রকাশনী : UPL
বুক রিভিউ লেখক: শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়