বাকৃবি ছাত্রলীগ: দুই বছর মেয়াদী কমিটি শেষ হয়নি ৬ বছরেও

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ   © টিডিসি ফটো

ছয় বছর পার করলেও নতুন কমিটির প্রতীক্ষা শেষ হয়নি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) শাখা ছাত্রলীগের কর্মীদের। দীর্ঘদিন কমিটি থাকায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে অসন্তোষ, নিয়মিত ঘটে চলেছে সংঘর্ষ ও মারামারির ঘটনা। এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিতে নেতৃত্ব শূন্যতা দেখা দিয়েছে সরকার দলীয় এই ছাত্র সংগঠনে। তাই কোন্দল দূর করে সংগঠনকে চাঙা করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন নেতৃত্ব গঠনের দাবি জানিয়েছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। 

জানা যায়, সবুজ কাজীকে সভাপতি ও মিয়া মোহাম্মদ রুবেলকে সাধারণ সম্পাদক করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয় ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর। ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাবেক সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস. এম. জাকির হোসাইন এক বছরের আংশিক ওই কমিটির অনুমোদন দেন। তার এক বছর পর অর্থাৎ ২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর ২১১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর দীর্ঘ পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও নতুন কমিটি আর হয়নি। 

দীর্ঘ এ সময়ে কমিটির অনেক নেতা হারিয়েছেন ছাত্রত্ব, অনেকে বিয়ে করে হয়েছেন সংসারী। চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি ঘটা করে বাকৃবিরই এক শিক্ষিকাকে বিয়ে করেন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ রুবেল। এছাড়াও ২১১ সদস্যের কমিটির অধিকাংশেরই বিয়ে হয়েছে, অনেকে শুরু করেছেন চাকুরি। ফলে নেতৃত্ব শূন্যতায় ক্যাম্পাসে হচ্ছে না তেমন কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম। 

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জানান, যেখানে স্নাতক-স্নাতকোত্তরই পাঁচ বছরে শেষ হয়ে যায়, সেখানে পাঁচ বছরে কমিটি না হওয়ায় বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছে শাখা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে।    

দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় হতাশায় দিন পার করছে পদ প্রত্যাশী নেতাকর্মীরা। নতুন কমিটি হলে সেখানে পদের আশায় অনেকে এখন ছুটছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের পেছনে। কেউ কেউ আবার পদের আশায় থেকে চাকরির বয়স শেষ করে অপেক্ষাই করে যাচ্ছেন। নতুন কমিটিতে পদ পাওয়ার প্রতিক্ষায় থেকে রোগাক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ছাত্রলীগ নেতা নুর এ আলম তপন।  

এদিকে দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় কর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে গ্রুপিং ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল। যতটুকুই কর্মসূচী পালন করা হয়, তাও করা হয় পৃথকভাবে। এই গ্রুপিংয়ের জেরে কমিটির সদস্যদের মধ্যে নিয়মিত চলছে কথা কাটাকাটি, মারামারি ও সংঘর্ষের মতো ঘটনা।  

পাঁচ বছরেও নতুন কমিটি না দেয়ায় মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বিলুপ্তি চেয়েছেন বাকৃবি ছাত্রলীগের একটি অংশের পদপ্রত্যাশীরা। তারা দীর্ঘদিন ধরে বর্তমান কমিটি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিল।   

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাকৃবি ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী বর্তমান কমিটির একাধিক নেতা-কর্মী বলেন, এক বছরের কমিটি পাঁচ বছর ধরে কোনভাবেই থাকতে পারে না। এটা ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র বিরোধী। ষষ্ঠ বছরে একটি কমিটি পদার্পণ করছে এটি শুনতে মোটেও আমরা প্রস্তুত নই।

কমিটি না থাকায় ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটছে জানিয়ে তারা বলেন, গত ৫ বছরে এ কমিটির বেশিরভাগ সদস্য চাকুরি ও বিয়ে করেছে। সে কারণে কমিটিতে নেতৃত্বের শূন্যতা তৈরি হয়েছে। আমরা আশা করছি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দ্রুত এ কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়ে নতুন নেতা-কর্মী তৈরি করে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবে।  

এ বিষয়ে বাকৃবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ রুবেল বলেন, ২০১৯ সালে জুন মাসে সম্মেলন করার কথা থাকলেও করোনাকালীন সময়ের কারণে সম্মেলনটি দেয়া সম্ভব হয়নি। আমরা ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাথে কথা বলেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা সম্মেলন দিয়ে নতুন কমিটি দিয়ে দিবো। 

বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। বেশ কয়েকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কেউ ফোন ধরেননি। 


সর্বশেষ সংবাদ