বাকৃবিতে প্রসেসিং প্ল্যান্ট অসম্পূর্ণ রেখেই গবেষণা প্রতিবেদন জমার অভিযোগ
- বাকৃবি কন্ট্রিবিউটর
- প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৫, ০৯:২৫ PM , আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৫, ০৯:২৫ PM

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেনের বাকৃবি রিসার্চ সেন্টারের (বাউরেস) অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণায় প্রসেসিং প্ল্যান্ট অসম্পূর্ণ রেখেই গবেষণা প্রতিবেদন দাখিলের অভিযোগ উঠেছে। তবে প্রসেসিং প্ল্যান্টটির বাকি কাজ শীঘ্রই শেষ হবে বলে জানিয়েছেন ড. ইলিয়াস।
জানা যায়, তিনি ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত বাউরেসের বার্ষিক কর্মশালায় বাকৃবির পোল্ট্রি খামার নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছিলেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, প্রকল্পের কার্যক্রম দুটি ধাপে সম্পন্ন হয়েছে। প্রথমত, ময়মনসিংহের স্থানীয় বাজারে পোল্ট্রি জবাই এলাকার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা এবং স্থানীয় বাজার ও প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট থেকে উৎপাদিত মুরগির মাংসের জীবাণু গুণাগুণ মূল্যায়ন করা। দ্বিতীয়ত, বাকৃবি পোল্ট্রি খামারে একটি মিনি প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছিল। সেই খামারে একটি ১৫০ বর্গফুট খোলা-পার্শ্বযুক্ত প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যান্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
ওই তথ্য মতে, গতবছর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল সেই মিনি প্রসেসিং প্ল্যান্ট। তবে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাকৃবির পোল্ট্রি খামারে অধ্যাপক ড. ইলিয়াসের প্রসেসিং প্ল্যান্টটি এখনো সম্পন্ন হয়নি। কেবল রয়েছে কয়েকটি পিলার, ছাদ ও দেয়ালবিহীন একটি কাঠামো।
এ বিষয়ে পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, 'প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম ছিল ময়মনসিংহ ও আশেপাশের পোল্ট্রি বাজারসমূহের অবস্থা পর্যবেক্ষণ, বায়োসিকিউরিটি এবং পোল্ট্রি জবাইকরণ সম্পর্কে বিক্রেতাদের মনোভাব যাচাইকরণ। পরবর্তীতে এ বাজার সমূহ হতে সাধারণভাবে জবাইকৃত এবং স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে জবাইকৃত মুরগির মাংস ও ব্যবহৃত পানির নমুনা সংগ্রহ করে মাইক্রোবিয়াল বিশ্লেষণ করা। এ গবেষণা দিয়ে ইতোমধ্যে ১ জন ছাত্র এম এস থিসিস সম্পন্ন করেছেন এবং গত ১৮-১৯ ফেব্রুয়ারিতে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে গবেষণাটি উপস্থাপন হয়েছে।'
তিনি আরও জানান, 'প্রকল্পের একটি অংশ ছিল বাকৃবি পোল্ট্রি ফার্মের একটি রুমকে সংস্কার করে প্রসেসিং ইউনিট করা। একই সাথে বাকৃবি কমিউনিটি এবং আশপাশের এলাকাবাসীকে স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ মুরগির মাংস সরবরাহ করা। পরবর্তীতে বিভাগীয় শিক্ষকদের সভায় প্রসেসিং ইউনিট পুরাতন রুমে না করে একটি নতুন জায়গায় করার সিদ্ধান্ত হয় এবং সে অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী দ্বারা নকশা প্রস্তুত করে কাজ শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ সময়ে পোল্ট্রি ফার্মের ভিতরে অন্য একটি প্রকল্পের আওতায় পুরাতন ঘর ভেঙ্গে নতুন ৪টি শেড তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। বায়োসিকিউরিটি, প্রসেসিং ইউনিটটির কলেবর বৃদ্ধি এবং দ্বিতল ফাউন্ডেশনসহ বিল্ডিং করার জন্যে পোল্ট্রি ফার্মের পুকুরের পার্শ্বে প্রসেসিং ইউনিটটি স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়। নতুন স্থাপনাটির কার্যক্রম তদারকির জন্য বিভাগীয় ৩৮৩ তম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিভাগীয় প্রধানকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির তত্ত্বাবধায়নে কাজটি শুরু হলেও বর্ষাকাল, পুকুরের পানি সরানো, মাটি ভরাটসহ টেকনিক্যাল কারণে কাজের প্রায় ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। দ্রুত কাজটি শেষ হবে বলে আশা করছি।'
বাকৃবি পোল্ট্রি খামারের অফিসার-ইনচার্জ লেকচারার তানভীর আহমেদ জানান, বর্তমান খামারে কোনো প্রসেসিং প্ল্যান্ট নেই। তবে একটি প্রসেসিং প্ল্যান্ট তৈরির কাজ চলমান আছে। এদিকে বাউরেসের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. পরেশ কুমার শর্মা নিশ্চিত করেছেন, প্রকল্পটি ২০২৪ সালে শেষ হয়ে গেছে।
বাউরেসের নিয়ম অনুযায়ী, গবেষণা শেষে ফলাফল যাচাই করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটিতে ছিলেন পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন, পশু পুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক ড. খান মো. সাইফুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল-মামুন।
কোনো প্রকার সম্পূর্ণ প্রসেসিং প্ল্যান্ট ছাড়াই কিভাবে গবেষণা ফলাফল জমা পড়েছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. খান মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, "ওই গবেষণার যাচাই টিমে আমি ছিলাম। তবে যাচাই টিমের কাজ হলো গবেষণা প্রবন্ধের ফাইন্ডিংস, অবজারভেশন অর্থাৎ গবেষণা সংক্রান্ত বিষয়সমূহ পর্যবেক্ষণ করে মূল্যায়ন করা। আর্থিক মনিটরিংয়ের কাজ আমাদের নয়, এটি করে থাকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম (বাউরেস)।"
এদিকে যাচাই কমিটির আরেক সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল-মামুনকে বার বার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
প্রসেসিং প্ল্যান্টটির বিষয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. বাপন দে বলেন, "এ ধরনের একটি প্রকল্প নেয়ার জন্য প্রফেসর ড. মো. ইলিয়াস হোসেনকে ধন্যবাদ জানাই। প্রসেসিং ইউনিটটি তৈরি হলে এর মাধ্যমে বাকৃবি কমিউনিটি স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ মাংস ক্রয় করতে পারবেন। এটির গুরুত্ব বিবেচনা করে পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগ প্রসেসিং ইউনিট সম্পন্ন করার দায়িত্ব গ্রহন করে এবং সকল ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট প্রদান করছে। আশা করি খুব শীঘ্রই এটি উদ্ভোধন করা হবে।"
এ বিষয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বাকৃবির গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের সভাপতি এবং পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সুবাস চন্দ্র দাস বলেন, "আমরা যারা পিআই আমাদের অনেক লিমিটেশন থাকে। ড. ইলিয়াসের প্রকল্পটি ৮ লক্ষ টাকার। ১ম বছরে সে মুরগি কিনেছে, ২য় বছরে ৪ লক্ষ বাজেট। এর মধ্যে ছাত্রের বেতন, মনিটরিং ইভালুয়েশন ইত্যাদি খরচ মিলিয়ে বাকি থাকে কেবল দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা। কিন্তু ১৫০ বর্গফুটের একটা প্রসেসিং প্ল্যান করতেই লাগে কমপক্ষে ১৫ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ প্রকল্পটির ডিজাইনই সঠিক ছিল না। এ জন্যই প্রসেসিং প্ল্যান্ট তৈরিতে সময় লাগছে। তিনি হয়তো অসতর্কতাবশত রিপোর্ট লিখেছেন প্ল্যান্টটি হয়ে গেছে। কিন্তু প্রসেসিং প্ল্যান্টটি তৈরির কার্যক্রম এখনো চলমান। প্রসেসিং প্ল্যান্টটি এখনো সম্পন্ন হয়নি। এটা সত্য কথা, কিন্তু কেন সম্পন্ন হয়নি এটাও সবার জানা উচিত।"