ভেঙে যাচ্ছে ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ, কী করবেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা?
- এম টি রহমান
- প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০০ AM , আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৬ AM
এইচএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি প্রক্রিয়া সহজ করতে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু হয় গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা। প্রথমবার ২০টি এবং পরের বছর থেকে ২২টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়। আর সর্বশেষ ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে ছিল ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়। একইভাবে বুয়েট বাদে বাকি তিন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ছিল প্রকৌশল গুচ্ছ।
কৃষি গুচ্ছে ছিল কৃষি বিষয়ে ডিগ্রি দেওয়া ৯ বিশ্ববিদ্যালয়। এতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমেছিল অনেক। খরচও কমেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। পাশাপাশি ভর্তির সুযোগও বেড়েছিল। তবে তাদের সে সুবিধা আর থাকছে না। তিন গুচ্ছই ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা জোরালো হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিয়ে এবার বেশ ভোগান্তি পোহাতে হবে। এগুলোর অধীন মোট ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল।
এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রকৌশল গুচ্ছ থেকে কুয়েট ও রুয়েট বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে চুয়েটকে আলাদা ভর্তি পরীক্ষা নিতে হবে। সে হিসেবে, প্রকৌশল গুচ্ছ এবার আর থাকছে না। ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে গেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। শাবিপ্রবি ও বশেমুরবিপ্রবিও বেরিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে। ফলে এ গুচ্ছও ভেঙে যাচ্ছে। যদিও শেষ পর্যন্ত এ গুচ্ছে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কৃষি গুচ্ছ থেকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বেরিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে। তারা শেষ পর্যন্ত এ সিদ্ধান্তে অটল থাকলে কৃষি গুচ্ছ পুরোপুরি ভেঙে যেতে পারে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কমতে পারে। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত তিন গুচ্ছের একটি ভেঙে যাওয়া নিশ্চিত। বাকি দু’টিও ভেঙে যেতে পারে বা পরিসর কমতে পারে। এতে চলতি শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় উদ্যোগে সমন্বয়হীনতাসহ নানা কারণে সুবিধার পাশাপাশি দুর্ভোগও পোহাতে হয়েছে শিক্ষার্থীরা। এরইমধ্যে চলতি বছর গুচ্ছ প্রক্রিয়াও ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় শিক্ষার্থীদের খরচ ও ভোগান্তি বাড়বে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আলাদা, আলাদা আবেদন করতে বাড়তি টাকা লাগবে। এর সঙ্গে যাতায়াত, থাকা ও খাওয়া খরচ তো আছেই। সঙ্গে থাকবে সীমাহীন ভোগান্তি।
এবার যদি গুচ্ছ প্রক্রিয়া ভেস্তে যায় বা সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় না থাকে, তবে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অনেক নতুনের মুখোমুখি হতে হবে। প্রথমত, যে যে বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে পরীক্ষা নেবে, সেখানে আলাদাভাবে আবেদন করতে হবে। প্রতিটি ইউনিটে আবেদনের জন্য লাগবে আলাদা ফি। এতে খরচ বাড়বে ভর্তিচ্ছুদের। যাতায়াত ভাড়াসহ অন্যান্য ব্যয় তো থাকছেই।
দ্বিতীয়ত, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ধরনও একটির তুলনায় অন্যটি কিছুটা ভিন্ন হয়। যদিও অতীতে প্রশ্নপত্র প্রায় একই ধরনের দেখা গেছে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের। তবে নিয়মে কিছুটা এদিক-সেদিক থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে ভর্তিচ্ছুদের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য আলাদা মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন হবে।
আরো পড়ুন: সাত কলেজের অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন নিদের্শনা ঢাবির
তৃতীয়ত, ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির ক্ষেত্রও বিস্তৃত হবে। বিশেষ করে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা নেবে, তাদের বিষয়েও আলাদা মনোযোগ রাখতে হবে তাদের। কীভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় কবে ভর্তি পরীক্ষা ও অন্যান্য কার্যক্রম চলবে, তাও নজরে রাখতে হবে ভর্তিচ্ছুদের। সেক্ষেত্রে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিদ্ধান্তগুলো নোট রাখার প্রয়োজন হবে।
চতুর্থত, অনেকগুলো পরীক্ষা হলে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থাকা, খাওয়াসহ আনুষঙ্গিক অনেক বিষয়েও ভোগান্তির শিকার হতে হবে তাদের। বিশেষ করে থাকার জন্য অনেকের সমস্যায় পড়তে হয়। অভিভাবকসহ যাতায়াত ও অন্যান্য কাজের ঝক্কি কম নয়।
সবমিলিয়ে এবার গুচ্ছ পরীক্ষা না হলে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কমলে ভর্তিচ্ছুদের ব্যস্ততা, পড়াশোনা, খরচ ও দুর্ভোগ বাড়বে। প্রস্তুতির পাশাপাশি অন্যান্য কাজের ব্যয় হবে বেশকিছু সময়। এসবের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েই ভর্তির জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। চোখ-কান খোলা রেখে তিন-চার মাস সব দিকে নজর রাখবে হবে তাদের। এগুলো ভালোভাবে সমন্বয় করতে পারছে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া সম্ভব।
লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী।