গুচ্ছ পদ্ধতি কি থাকছে?
- মাহমুদ বায়জীদ
- প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২২, ১২:৩৯ PM , আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২২, ০১:০৭ PM
গত শিক্ষাবর্ষে ২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছভুক্ত হয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছে। ভর্তি কার্যক্রমও পরিচালিত করেছে গুচ্ছভুক্ত হয়ে। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি ও অর্থের অপচয় রোধে এমন উদ্যোগ নেয়া হলেও সেটি ফলপ্রসু হয়নি। উল্টো কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভোগান্তি আরও বেড়েছে। বারবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও শিক্ষার্থী পায়নি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। পরে বাধ্য হয়ে আসন ফাঁকা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম শেষ করে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমন্বয়হীনতার কারণেই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে।
গতবারের মতো এবারও দেশের চারটি প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে আসছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো- ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। তারা নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখনো ভর্তির তারিখ না জানালেও পাঁচটি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা হবে বলে জানিয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, ২৪ জুলাই থেকে তারা ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু করবে। শেষ হবে ২৭ জুলাই। অন্যরা এখনো ভর্তি পরীক্ষার তারিখ জানায়নি। আগামী ৭ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সভা রয়েছে। পরেরদিন ৮ এপ্রিল উপাচার্য পরিষদের সভা হওয়ার কথা রয়েছে। এই দুইটি সভার পর ভর্তি পরীক্ষার তারিখগুলো চূড়ান্ত করবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
এদিকে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এবার টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। গুচ্ছে থাকতে চান না জগন্নাথ, কুমিল্লা ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। আলাদা আলাদা সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছেন শিক্ষকদের সংগঠনগুলো। তারা আগের নিয়মে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিলে ভর্তি কার্যক্রম থেকে বিরতি নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
আরও পড়ুন- এবার গুচ্ছে অনাস্থা জানালেন ইবি শিক্ষকরা
শিক্ষামন্ত্রী ও ইউজিসির আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতি ভর্তি পরীক্ষা নেয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তখনও বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এই পদ্ধতির বিরোধীতা করেছিলেন। এবারও গুচ্ছের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন শিক্ষকরা। এই অবস্থায় গুচ্ছের ভবিষ্যত নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন একাধিক উপাচার্য।
শিক্ষকরা বলেন, শিক্ষার্থী সঙ্কটের বিষয়টি খুবই অনাকাঙ্খিত। এছাড়া গুচ্ছে কোনোভাবেই ভোগান্তি কমে নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদা আলাদা ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয়ায় পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি হতে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। সেই সঙ্গে অর্থের অপচয়ও হয় শিক্ষার্থীদের। এমন সমন্বয়হীনতায় আবারও গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হবে বোকামি।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী বলেন, শিক্ষার্থীরা সময় ও আর্থিক ভোগান্তিতে বেশি পড়েছে। ফলে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপ হয়ে উঠেছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় এ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা পুনরায় চালু করা দরকার।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় সুফলের পরিবর্তে ভর্তিচ্ছুদের ভোগান্তি বেশি হয়েছে। এ পদ্ধতিতে সঠিকভাবে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তাই আমরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি।
আরও পড়ুন- গুচ্ছে নেই বড় চার বিশ্ববিদ্যালয়, ভর্তি নিয়ে সর্বশেষ যা জানা যাচ্ছে
এদিকে শিক্ষকদের অনাস্থার কারণে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বৈঠক করেছিলো। সেই বৈঠকেও কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। শীঘ্রই আরেকটি বৈঠক রয়েছে উপাচার্যদের। সেখানে ঠিক হবে গুচ্ছের ভবিষ্যত।
এ বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, শিক্ষকদের দাবিগুলোর একটা চিঠি হাতে পেয়েছি। তাদের দাবির সঙ্গে আমিও একমত। কয়েকদিন পর আমাদের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত মিটিং আছে সেখানে এ দাবিগুলো উত্থাপন করবো।
উল্লেখ্য, কৃষি ও প্রকৌশল গুচ্ছের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন সমস্যা নেই।