১০ অক্টোবর ২০২১, ০৯:৪৪

গুচ্ছ ভর্তি: কেন্দ্র পরিবর্তন নিয়ে যা বললেন শাবিপ্রবি উপাচার্য

ভর্তি পরীক্ষার্থী ও শাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ  © ফাইল ফটো

আগামী ১৭ অক্টোবর বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে গুচ্ছভুক্ত ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে। গত ৭ অক্টোবর থেকে ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র সংগ্রহ শুরু হয়েছে। তবে নিজেদের পছন্দক্রম অনুযায়ী আসন না পড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভর্তিচ্ছুরা।

বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এর সাথে।

কেন্দ্র পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ হাজার ৯১৫ জনের পরীক্ষা নেওয়ার ধারণ ক্ষমতা আছে। সেখানে আবেদন করেছে ৩৭ হাজার ৭৪৯ জন। শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ হাজার ধারণ ক্ষমতার বিপরীতে আবেদন করেছে ২০ হাজার ৮৯৪ জন। নির্ধারিত আসনের চেয়ে বেশি আবেদন আসায় যারা স্কোরে এগিয়ে ছিল তারাই এই কেন্দ্রগুলোতে পছন্দক্রম অনুযায়ী আসন পেয়েছেন।

আরও পড়ুন: গুচ্ছ ভর্তি: পরীক্ষার হলে যতটি এমসিকিউ পূরণ করতে হবে

শাবিপ্রবি উপাচার্য আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার কেন্দ্র যেখানে পড়েছে, তাকে সেখানেই ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে। কেন্দ্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে ১০০ নম্বরের যে মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়েছে সে অনুযায়ীই কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই।

এদিকে প্রবেশপত্র সংগ্রহের পর থেকেই পছন্দক্রম অনুযায়ী কেন্দ্র না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। অনেকের দাবি, এমন কেন্দ্রে তাদের আসন পড়েছে যেখানে এর আগে কখনো যায়নি তারা। এর ফলে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নারী শিক্ষার্থীরা। নিজ জেলা থেকে কেন্দ্র অনেক দূরে হওয়ায় ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে তাদের।

তাসমি সরকার নামে এক ছাত্রী জানান, আমার বাসা রংপুরে। আমার স্কুল-কলেজ থেকে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরত্ব সামান্য। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় সেভাবেই পছন্দক্রম দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার সিট পড়েছে গোপালগঞ্জে। গোপালগঞ্জে আমার কোনো আত্মীয়-স্বজন নেই। আমার পরিবারেরও পরিচিত কেউ নেই। একদম অচেনা নতুন এক জায়গা। কোথায় থাকবো কিভাবে যাবো? কোথায় যাবো? কোন রাস্তা দিয়ে যাবো কিছুই জানিনা। এমতবস্থায় হয়তো পরীক্ষাই দেওয়া অসম্ভব হয়ে যাবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন এখানেই থেমে যাবে।

আরও পড়ুন: পাস-ফেল থাকছে না গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায়

সাইফুর রহিম নামে এক ভর্তিচ্ছু জানান, আমার বাড়ি কক্সবাজার। চট্টগ্রামসহ আশেপাশের পাঁচটি কেন্দ্র ভর্তি পরীক্ষার জন্য পছন্দক্রম দিয়েছিলাম। অথচ আমার সিট পড়েছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। যেখানে আমি কখনও যায়নি। ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের চেয়ে এখন যাওয়া এবং থাকার জায়গা নিয়ে চিন্তায় পড়েছি। এর ফলে এক ধরনের মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছি।

ফারিহা ওয়াসিমাত জানান, আমার বাড়ি কুমিল্লা। কুমিল্লা এবং ঢাকার কেন্দ্রে পরীক্ষা কেন্দ্রের পছন্দক্রম দিয়েছিলাম। আমার সিট পড়েছে পটুয়াখালীতে। একজন মেয়ে হয়ে আমি সেখানে কীভাবে যাবো? গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কবমানোর জন্য। অথচ এখন আমাদের আরও বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। কেননা অন্যান্য ইউনিভার্সিটি তাদের কেন্দ্রের কথা আগেই জানিয়ে দেয়। ফলে আমরা সেভাবেই নিজেদের প্রস্তুত করি। অথচ গুচ্ছ কমিটি বিজ্ঞপ্তিতে এক ধরনের কথা বলে এখন কেন্দ্র দিয়েছে দূরে। গুচ্ছ কমিটির এমন সিদ্ধান্তে আমার মতো অনেক নারী শিক্ষার্থাই ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন না।

মমতাজ নাসরিন নামের আরেক শিক্ষার্থী জানান, পছন্দক্রম অনুযায়ী কেন্দ্র না দিলে কেন্দ্র চয়েস অপশন কেন দেওয়া হলো? চয়েস দেওয়া হয়েছে নোয়াখালী এসেছে, পটুয়াখালী এর মধ্যে দুইদিন পর বুয়েটের পরীক্ষা। ছাত্ররা পটুয়াখালী যাবে কখন আসবে কখন। প্রশাসনের খামখেয়ালির বলি হবে শিক্ষার্থীরা।

রাজধানীর রামপুরার তরিকুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক জানান, তার মেয়ে পড়ালেখা করেছে ঢাকায়। করোনার কারণে সে তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীতে অবস্থান করছে। তাই সে ঢাকা, রাজশাহী, পাবনাসহ আশেপাশের ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচন করেছিল। কিন্তু তার পরীক্ষার কেন্দ্র খুলনায় দেওয়া হয়েছে। যেখানে সে জীবনে কখনও যায়নি। এমনকি তাদের পারিবারিক কোনো যোগাযোগও নেই।

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটি বলছে, কেন্দ্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে ১০০ নম্বরের মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে স্কুলের অবস্থানের (কেন্দ্র হতে দূরত্ব) জন্য ২০ নম্বর, কলেজের অবস্থানের (কেন্দ্র হতে দূরত্ব) ক্ষেত্রে ৩০, এসএসসিতে প্রাপ্ত নম্বরের ক্ষেত্রে ১০, এইচএসসিতে প্রাপ্ত নম্বরের ক্ষেত্রে ২০, এইচএসসি পাসের বছর (২০১৯-০৫, ২০২০-১০) ১০ এবং ছেলে/মেয়ে (ছেলে- ০৫, মেয়ে- ১০) ক্ষেত্রে ১০ নম্বর ধার্য করা হয়েছে। প্রাপ্ত স্কোর ও কেন্দ্রের পছন্দক্রমের ভিত্তিতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আগামী ১৭ অক্টোবর বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ২৪ অক্টোবর মানবিক বিভাগ ও ১ নভেম্বর বাণিজ্য বিভাগের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।