১২ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯:৩৬

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় এবারও থাকতে চাচ্ছে না ইবি-জবিসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়

ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পর কেন্দ্র ত্যাগ করছেন শিক্ষার্থীরা  © ফাইল ছবি

২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছভুক্ত দেশের সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় না থাকার আভাস জানিয়েছে। এছাড়াও এবার পরিবর্তন আসছে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয়োজক কমিটির নেতৃত্বেও। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু হওয়া এই পরীক্ষা আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

সম্প্রতি দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) পক্ষ থেকে এই নেতৃত্ব পরিবর্তনের আভাস জানানো হয়েছে। ফলে পরপর টানা তিনবার তিনি গুচ্ছে থাকা উচ্চশিক্ষালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার আয়োজক কমিটির নেতৃত্বে থাকছে না শাবিপ্রবি। 

এর আগে বিগত গুচ্ছ ভর্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা, সময়ক্ষেপণ, উপাচার্যদের সিদ্ধান্তহীনতা, ভর্তিতে নানা জটিলতা ও হয়রানি এবং আর্থিক বিষয়ে একক সিদ্ধান্তে আসতে না পারায় অনীহা তৈরি হয় খোদ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদেরই। সেজন্য ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ও গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষক সমিতি গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যেতে দাবি জানিয়ে আন্দোলনও করে। এছাড়াও শাবিপ্রবি এবার গুচ্ছের নেতৃত্বে ছাড়ার পাশাপাশি গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি নিতে চায় নিজস্ব কাঠামোতে।

আরও পড়ুন: গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার নেতৃত্ব হারাচ্ছে শাবিপ্রবি

সর্বশেষ ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের সম্ভাবনার প্রেক্ষিতে গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। অবশ্য সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন দেশের সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আচার্য এবং রাষ্ট্রপতি। ফলে সরকারের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মোট ২২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। 

মূলত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনার কারণেই গুচ্ছে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়ে এখনও কোনো নির্দেশনা নেই সরকারের। ফলে ইউজিসির সভা থেকে গুচ্ছ নিয়ে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত না আসলে ভাঙন আসবে শিক্ষার্থীদের বহুল প্রত্যাশার গুচ্ছে।

এবার বিগত বছরে নানা আশার সঞ্চার করেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসির দ্বন্দ্বে একক ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে কোনো অধ্যাদেশ না হওয়া সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনাই পায়নি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ফলে শুরু থেকেই গুচ্ছে থাকতে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবার নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের পক্ষে জোরালো অবস্থান ব্যক্ত করছে।

আরও পড়ুন: গুচ্ছ পদ্ধতি ধরে রাখতে চান শিক্ষামন্ত্রী, বেরিয়ে যেতে হাঁসফাঁস শিক্ষকদের

এর মধ্যে নতুন করে দেশের চলমান নয়টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নবীন তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দুই গুচ্ছভুক্ত (সাধারণ ও কৃষি) মোট ৩৪টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্তাকে নিয়ে সভা আহ্বান করেছে দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। তবে সভার আলোচ্যসূচিতে থাকবে নতুন গুচ্ছ কমিটি এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো। 

তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবার ভর্তির বিষয়ে গুচ্ছে না গিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে আগ্রহী নিজেদের একাডেমিক কাউন্সিলে। ফলে ইউজিসির সভায় উপাচার্যরা আলোচনায় থাকলেও নিজেদের একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনার বাইরে সিদ্ধান্ত গ্রহণে আগ্রহী নন। এছাড়াও গুচ্ছ থেকে ইবি, জবি কিংবা শাবিপ্রবির মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেরিয়ে গেলে থাকার পক্ষে নয় অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্তা ব্যক্তিরা বলছেন, গুচ্ছ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক সমিতি আগ্রহী নয়। তারা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে বেশি আগ্রহী। এছাড়াও গুচ্ছের নানা সমস্যা এবং নেতৃত্ব নিয়েও হতাশা রয়েছে তাদের মধ্যে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যেতে আগ্রহীদের কাতারে রয়েছে ইবি, জবি ও বশেমুরবিপ্রবি। এছাড়াও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) পাশাপাশি এবার গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যেতে আগ্রহী গুচ্ছের নেতৃত্বে থাকা উচ্চশিক্ষালয় শাবিপ্রবিও।

আরও পড়ুন: উপাচার্যদের সিদ্ধান্তহীনতায় আর্থিক ক্ষতিতে গুচ্ছের ভর্তিচ্ছুরা

গুচ্ছ থেকে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বের হয়ে গেলে আবারও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের কথা জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যেতে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির শুরু থেকেই দাবি জানিয়ে আসছে।

এ বিষয়ে ইউজিসির আসন্ন সভা এবং অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানের উপর তাদের সিদ্ধান্ত অনেকাংশে নির্ভর করছে জানিয়ে উপাচার্য বলেন, আমরা একাডেমিক কাউন্সিলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বের হয়ে গেলে আমরা গুচ্ছে থাকবো না।

এছাড়াও গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি আয়োজনের পক্ষে নিজেদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষক সমিতি। সমিতিগুলোর শীর্ষপর্যায়ের নেতৃবৃন্দ তাদের অবস্থানের বিষয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন: একক ভর্তি পরীক্ষা: অধ্যাদেশে সিদ্ধান্ত আসবে দ্বিতীয়বার ভর্তিসহ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে

একই বিষয়ে ইবি উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ইউজিসির সভায় যে সিদ্ধান্ত আসবে তা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পূর্বের অবস্থান বিবেচনা করে শিক্ষকদের দাবির প্রেক্ষিতে গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আভাসও জানিয়েছেন তিনি। 

ইউজিসির মতামত এবং তার প্রেক্ষিতে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষা সিদ্ধান্ত আসবে বলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (উপাচার্য) অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম।

আর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জাকির হোসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যেতে জবি শিক্ষক সমিতি শুরু থেকেই দাবি জানিয়ে আসছে। এবারও আমাদের অবস্থায় অপরিবর্তিত রয়েছে।