প্রিলি পাসে সব সাবজেক্টে অলরাউন্ডার হতে হয় না

  © সংগৃহীত

একজন শিক্ষার্থী সব সাবজেক্টে অল রাউন্ডার হয় না। হতেও পারে না। অসম্ভব! হয় গণিত না হয় ইংরেজি। হয় বিজ্ঞান না হয় আন্তর্জাতিক কিংবা অন্য কোনো সাবজেক্টে দুর্বল থাকবেই। থাকতেই হবে। It's a natural for human Being। তাছাড়া যে ব্যক্তি বিসিএসে প্রথম হন, তাঁরও এই সমস্যাটি ছিল। তাই এত সব চিন্তা না করে পড়তে বসে যান। পড়া মনে থাক আর না থাক; যা পড়েছেন তা কাজে লাগাবেন। কারো হান্ড্রেডের হান্ড্রেড প্রস্তুতি থাকে না। ভবিষ্যতেও কারো থাকবে না নিশ্চিত থাকুন। সুতরাং আপনি যে সাবজেক্ট পড়েছেন সেই সাবজেক্ট আদৌতেও পড়েছেন কিনা, নাকি ভাসা ভাসা পড়ে গেছেন এই বিষয়টা দেখার বিষয়।

মনে রাখবেন, বিসিএস হোক বা না হোক বিসিএসের প্রস্তুতি ভালো থাকলে যে কোনো চাকরি আপনি ৯৯% আশা করতে পারেন। এজন্য হতাশায় না ভুগে সৃষ্টিকর্তার নাম ধরে যা পড়বেন পড়ার মত পড়ে যাবেন। পড়াশোনা ব্যতীত এদেশে ভালো চাকরি নেই। বুকে হাত দিয়ে সেটা মানতে হবে।

আজ থেকে প্রায় আড়াই বছর (২০১৭) আগে যারা ৩৮তম বিসিএস দিয়েছেন তারা সামনে ক্যাডার হবেন। তাহলে উনারা পড়াশোনা না করে বসে থাকলে ২০২০ সালে এসে ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন? যদি দুই বছর আগে পড়াশোনা ভালো করে না করত, তাহলে আজও নিশ্চিত বেকার খাতা থেকে নিজের নামটা উঠে আসার সম্ভাবনা থাকত না।

এদিকে ৪০তমের প্রার্থীরাও কয়েক বছর পর ক্যাডার হবেন। সেটা পড়াশোনা ছাড়া সম্ভব কি? আপনি সবার চেয়ে সব জানেন সব বুঝেন কিন্তু পড়াশোনার বেলায় কিছুই বুঝেন না। কেন? দেখুন, আপনার বিসিএস ক্যাডার হওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে বেঁচে থাকার জন্য নূন্যতম চাকরি পাওয়ার দরকার আছে বৈকি! তাই নিজের জীবনকে নিজেই এভাবে হত্যা করবেন না। আশা ছেড়ে দিবেন না। কয়েকবার ব্যর্থ হয়েছেন তো কি হয়েছে! পরের বার সফল হবেন না এই গ্যারান্টি কিসের? তাই হাত গুটিয়ে নিজের মেধাকে নির্লিপ্ততা রেখে বসে থাকবেন না।

এই মুর্হূতে, এখন চাকরি করার দরকার নেই। দরকার হলেও নেই। তবে ভবিষ্যতে যেন আজকের মত বেকার থাকতে না হয় তা ব্যবস্থা করবেন। সুখী ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার মত সুখ এই পৃথিবীতে আর কিছুই নেই। কিন্তু আপনার এই সুখ এনে দিতে পারে আপনাকে কেবল পরিশ্রম ও ধৈর্য দিয়ে। তাই অযথা ধৈর্য না হারিয়ে সামনের ৪১তমের জন্য প্রস্তুতি নিন। এমনভাবে প্রস্তুতি নিন হয় ক্যাডার না হয় নন-ক্যাডার। শুভ কামনা।

এর আগে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে ঊর্মি চৌধুরী লিখেন, শুধু প্রিলির জন্য পরীক্ষাতে বসবেন নাকি বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য পরীক্ষা দিবেন- এ দু’টি বিষয় নিয়ে বিসিএস পরীক্ষা দেয়ার আগে নিজেকে প্রথমে প্রশ্ন করতে হবে। যদি ক্যাডার হতে চান, তাহলে পুরোপুরিভাবে নিজেকে পাল্টে নিতে হবে। কারণ একজন স্বাভাবিক মানুষের দুটো দিক রয়েছে। একটা ভাল দিক আর একটা খারাপ দিক।

খারাপ দিক বলতে বুঝাতে চাচ্ছি, রাত জেগে ফেইসবুকিং করা, প্রেমিক-প্রেমিকার সাথে হি হি হা হা করা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারা, পড়তে গেলে আলসেমি ও ঘুম চলে আসা, অলসতা নিয়ে দিনযাপন করা; সেই সঙ্গে ফাঁকিবাজি ইত্যাদি। এই খারাপ দিকগুলো প্রথমে আপনাকে বুড়িগঙ্গা নদীতে বস্তা ভরে ফেলে দিতে হবে। তারপর প্লানিং করে নিজের একটা পড়ার রুটিন বানাতে হবে। আপনার পড়ার রুটিন অনুসারে আপনি সামনে এগুবেন। এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই।

সিলেবাসের এক সাইট থেকে পড়ে পড়ে গেলে এক পর্যায়ে দেখবেন পড়ার মত আর কিছু খুজে পাবেন না। আর যে সাবজেক্টে হিউজ পরিমাণে মার্কস আছে; সে সাবজেক্টগুলোর প্রতি বেশি বেশি মনোযোগ দেবেন। সবসময় ১২০/১৩০ টার্গেট নিয়ে প্রস্তুতি নেবেন। বাংলা ও ইংরেজিতে নিজের মত করে কমপক্ষে ৩০ জন কবির নাম তালিকা করবেন। ইংরেজিতে ৩০ জন, বাংলায় ৩০ জন মোট ৬০ জন কবির সাহিত্য কর্মগুলো এক মাসে শেষ করার চেষ্টা করবেন।

ইংরেজিতে গ্রামার বেশি বেশি চর্চা করবেন। Vocabulary'তে Strong হওয়ার জন্য বাজার থেকে বই না কিনে The daily star Editorial কলাম বা ইংরেজি মাধ্যম পত্রিকাগুলো থেকে Vocabulary শিখবেন। জব সলিউশন শেষ করা আবশ্যক। যদিও এটি প্রিলির একমাত্র নির্ভর নয়। গণিত বেশি বেশি চর্চা করবেন। সুতরাং বয়স ফুরিয়ে যাওয়ার আগে নিজের মনকে শক্ত করে প্রস্তুতি নিন।

আলসেমি করে বসে থাকলে অন্যদের সাফল্য দেখা ছাড়া আর কিছুই পাবেন না। অতীতে কী কী করেছেন, সেটা নিয়ে আর ভাবার সময় নেই। কাজেই ভবিষ্যৎতে কী করবেন তা নিয়ে ভাবুন। আজকে যারা আপনাকে দাম দিল না তাঁদেরকে দেখিয়ে দিন আপনিও সেরাদের মধ্যে সেরা ছিলেন। কেবল সময়ের ব্যবধানে সেটি আপনি কাউকে দেখাতে পারেন নি।

মনে রাখবেন, বাইরে থেকে মৌমাছির মৌচাক দেখতে ভয়ানক হলেও ভেতরে কিন্তু মধু আছে। যে মধু সর্বজনপ্রিয়। সুতরাং আপনিও আপনার ভেতরটাকে নিংড়ে দিন। দেখবেন আজকে যারা আপনাকে অপ্রিয় বলেছেন; তারাই সুরসুরে প্রিয় ব্যক্তি হিসেবে বরণ করে নিবে। তাই পড়ার মত করে পড়ে নিজেকে সাজিয়ে ফেলুন।

লেখক: ঊর্মি চৌধুরী


সর্বশেষ সংবাদ