অফিস সহকারী আবদুল্লাহ আল মামুন © সংগৃহীত
বিয়ের প্রলোভনে সহকর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অফিস সহকারী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ওই নারী। পরে চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা যায়, দুই কর্মচারীর মধ্যে কর্মস্থল থেকেই গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। বিয়ের আশ্বাসে ওই নারী তার আগের স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে কথিত প্রেমিকের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে একই ফ্ল্যাটে এক বছর ধরে বসবাস করেন। তবে বিয়ের কথা উঠলেই তালবাহানা শুরু করেন প্রেমিক। একপর্যায়ে আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা করায় ভুক্তভোগী ওই নারীকে মারধর করে হাসপাতালে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে।
মামলার নথি ও ভুক্তভোগীর বক্তব্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সংকেত বিভাগের অস্থায়ী নারী কর্মচারী সঙ্গে একই অফিসের অফিস সহকারী আবদুল্লাহ আল মামুনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ২০২৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। সম্পর্ক গভীর হলে মামুন তাকে বিয়ে করবেন, এমন আশ্বাস দেন। ওই আশ্বাসে ভুক্তভোগী নারী ২০২৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তার আগের স্বামীকে তালাক দেন।
এরপর একই বছরের ১ অক্টোবর নগরের ওয়াসা মোড় এলাকার একটি ফ্ল্যাটে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস শুরু করেন তারা। তবে পরে বিয়ের বিষয়টি সামনে এলে মামুন নানা অজুহাতে তালবাহানা করতে থাকেন বলে অভিযোগ।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, চলতি বছরের ২৭ অক্টোবর তিনি বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগে আদালতে মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করছে। এর আগে ৪ ডিসেম্বর শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় আরেকটি অভিযোগ করেন তিনি। এসব অভিযোগ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাপরিচালকের কাছেও লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: আজ সকাল থেকে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়
ওই নারীর আরও অভিযোগ, মামলা তুলে নেওয়ার জন্য মামুন তাকে নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছেন। গত ৪ নভেম্বর দুপুরে সিআরবি কার্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় মামুন ও তার সহযোগীরা তাকে একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে মারধর করেন। এতে গুরুতর আহত হয়ে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে আমরা প্রায় দুই বছর একসঙ্গে বসবাস করেছি। চলতি বছর বিয়ের জন্য চাপ দিলে তিনি মারধর শুরু করেন। আমি দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা হলে তিনি কৌশলে ওষুধ খাইয়ে তা নষ্ট করেন। এখন মামলা করায় আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, কর্মস্থল বদলি করে হয়রানি করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, মামুন রেলওয়ের স্থায়ী কর্মচারী হওয়ায় তার কথায় কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এর ফলে গত ২০ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাকে তিনবার কর্মস্থল পরিবর্তন করা হয়েছে। ‘আমি অসহায়ের মতো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছি। আমাকে বারবার মামলা তুলে নিতে বলা হচ্ছে,’ বলেন তিনি।
অভিযুক্ত আবদুল্লাহ আল মামুনের বক্তব্য জানতে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সংকেত ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মো. শাহিদুজ্জামান বলেন, ভুক্তভোগী আদালতে মামলা করেছেন, এ কথা তিনি শুনেছেন। তবে মামলার আগে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল কিনা, এ প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর দেননি তিনি।