পূঁজিবাদের কারণেই সাহিত্যের দুর্দশা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
বর্তমানে সাহিত্যের যে দুর্দশা তা মূলত প্রযুক্তির কারণে নয় বরং পুঁজিবাদের কারণে তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'উচ্চতর মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র' মিলনায়নে ''বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ''এর চতুর্থ জাতীয় সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বর্তমানে সাহিত্যের একটা দুর্দশা চলছে যা অস্বীকার করা যাবে না। লোকে বই পড়তে চায় না এবং বলে যে এর জন্য প্রযুক্তি দায়ী। তবে আমি বলবো, প্রযুক্তি এর জন্য দায়ী নয়। অতীতের দিকে তাকালে আমরা দেখবো যে প্রযুক্তি সব সময় সাহিত্যকে সহযোগিতা করেছে। যখন কাগজ বা ছাপাখানা ছিলো না, তখন প্রযুক্তিই কাগজ ও ছাপাখানা এনেছে। এরপরে যখন রেডিও এলো তখন ধারণা করা হলো সাহিত্যের বদলে এবার মানুষ রেডিও শুনবে, সাহিত্য পড়বে না। কিন্তু দেখা গেলো রেডিও সাহিত্যকে ব্যবহার করছে। ঠিক একই রকমভাবে টেলিভিশনও সাহিত্যকে শেষ করতে পারেনি। কিন্তু, আজকের চলমান সাহিত্যের এই বিপদ প্রযুক্তির কারণে সৃষ্টি হয়নি বরং প্রযুক্তির ওপর যে পুঁজিবাদের আধিপত্য সেটার কারণে সৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঢাবির ক্যান্টিনে বেহেশতি ডাল, উট পাখির ডিম, আসল রহস্য কী?
তিনি আরো বলেন, পুঁজিবাদ মুনাফা, মানুষে মানুষে বিচ্ছিন্নতা ও ভোগ বিলাসিতায় মানুষকে উৎসাহিত করে। প্রযুক্তি বা বিজ্ঞানের বিকাশের কারণে আজকের পৃথিবী বিপন্ন হয়নি বরং তা হয়েছে পুঁজিবাদ বিকাশের কারণে। বর্তমানে আমরা যে দ্বন্দ্ব দেখছি সেটা পুঁজিবাদের সাথে সাহিত্যের দ্বন্দ্ব। আজকে মানুষ বই পড়তে চায় না, স্থুল বিনোদনে ডুবে থাকে মাদকাসক্ত হয় তার প্রধান কারণ হলো পুঁজিবাদী দৌরাত্ম এবং এই সংকট একটি চরম সংকট।
লেখক প্রগতি সংঘের কাজ সম্পর্কে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমাদের কাজ হবে একটা সাংস্কৃতিক জাগরণ তৈরি করা। আমরা ইউরোপীয় রেনেসাঁর কথা শুনেছি। বঙ্গীয় রেনেসাঁর কথা শুনেছি সেই বঙ্গীয় রেনেসাঁ আমাদের জাগরণ এনে দিতে পারেনি।
বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের সহসম্পাদক অভিনু কিবরিয়া ইসলামের সঞ্চালনা ও সংগঠনটির সভাপতি গোলাম কিবরিয়া পিনুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক, নাট্য ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, স্বাগত বক্তব্য দেন সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান হীরা, শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রগতি লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদক দীপংকর গৌতম।