দফায় দফায় চলছে চবি ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতদের আন্দোলন
দু’দিনের পরপর কর্মসূচি শেষে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা৷ পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অছাত্র, বিবাহিত, চাকুরিজীবীসহ অযোগ্যদের স্থান দেওয়ার অভিযোগ উঠার পর থেকেই জোরালো হচ্ছে এ আন্দোলন।
বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরের সামনে ছাত্রলীগের উপগ্রুপগুলোর নেতাকর্মীরা গণস্বাক্ষর এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় পদবঞ্চিত নেতাদের পক্ষে গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে শাখা ছাত্রলীগের পদধারী নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।
উপগ্রুপগুলোর মূল দাবিগুলো- পদবঞ্চিত ত্যাগী ও পরিশ্রমী কর্মীদের মূল্যায়ন করে কমিটিতে অর্ন্তভুক্তকরণ, কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতাদের যোগ্যতা অনুসারে পদগুলোর পুনঃমূল্যায়ন এবং কমিটিতে পদপ্রাপ্ত বিবাহিত, চাকরিজীবী ও দীর্ঘদিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থাগ্রহণ।
এর আগে, ৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে বিক্ষুব্ধ উপগ্রুপ গুলো মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। গ্রুপগুলো হলো- ভিএক্স, বাংলার মুখ, রেড সিগনাল, একাকার, কনকর্ড, এপিটাফ ও উল্কা। এসব আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দৃষ্টি আকর্ষণ।
এর আগে, গত ১০ আগস্ট সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুর প্রতি অনাস্থা জানান ৯৪ জন পদধারী নেতা।
পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পরদিন ১১ আগস্ট হতেই আন্দোলন শুরু হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক অবরোধ করেন তারা৷ এতে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অচল হয়ে যায়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি আবাসিক হলের প্রায় ৫০টি কক্ষ তচনচ করে পদবঞ্চিত ও বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ কর্মীরা৷
তবে অছাত্রত্বের অভিযোগ নতুন কিছু নয়৷ মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা ১১ জন নেতারই ছাত্রত্ব নেই। এছাড়াও রয়েছেন খুন ও মারামারি মামলার আসামি। চাঁদাবাজি ও শিক্ষককে মারধরের হুমকিতে অভিযুক্ত নেতাও রয়েছেন। এছাড়া কমিটিতে থাকা সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল রিমন স্নাতক প্রথমবর্ষও উত্তীর্ণ হতে পারেননি।
২০১৯ সালে ১৪ জুলাই রেজাউল হককে সভাপতি ও ইকবাল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে চবি শাখা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এ আংশিক কমিটি প্রায় তিন বছর পরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে সমর্থ হয়। তবে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে সমালোচনার জোয়ারে ভাসছেন তারা৷ ৪১৮ সদস্যের কমিটি দিয়েও শান্ত করতে পারেনি নেতাকর্মীদের৷ গুঞ্জন উঠছে দেন-দরবারসহ বিতর্কিতদের সুযোগ দিয়ে ত্যাগীদের অবহেলার।
আরও পড়ুন : নবীন শিক্ষার্থীকে হলে তোলা নিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের হাতাহাতি
এ ব্যাপারে উপগ্রুপ রেড সিগনাল গ্রুপের নেতা রাকিবুল হাসান দিনার বলেন, ‘দীর্ঘ ৩ বছর পর চবি গত ৩১ জুলাই রাতে চবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘদিন সময় নিয়ে ঘোষিত কমিটি ত্যাগী নেতাকর্মীদের মন জয় করতে পারেনি। উল্টো নিষ্ক্রিয়, জামায়াত-বিএনপি পরিবারের ছেলেদের স্থান নিয়ে কমিটি হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ।’
ভিএক্স গ্রুপের নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় বলেন, ‘ঘোষণার পর থেকেই নতুন কমিটি ব্যাপক সমালোচিত। কমিটি সংশোধনের জন্য আমরা অনেকদিন থেকেই আন্দোলন করে আসছি। আমরা আমাদের সাংগঠনিক আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’
এ ব্যাপারে চবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মী আছে কয়েক হাজার। যতোই চেষ্টা করি সবাইকে তো কমিটিতে সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি যোগ্যতার ভিত্তিতে কমিটি দিতে।’
উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই প্রায় ৩ বছর পর চবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকেই ধারাবাহিক আন্দোলন করে আসছে পদবঞ্চিতরা।