দাম বেশি, মান কম ঢাবির হলে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হল ক্যান্টিন গুলোতে খাবারের দাম ক্রমশ বেড়েছে। তবে সে তুলনায় খাবারের মান বাড়েনি। এর সঙ্গে হলের একাধিক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, হলগুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার পরিবেশন করা হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, আগে তিন বেলা খাবারে খরচ ছিল ১০০ টাকা। এখন ১৫০ টাকার বেশি খরচে তিন বেলা ঠিকমতো খাবার খাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে ক্যান্টিন মালিকেরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, বাজারের সবকিছুর দাম বেড়েছে, তাই বাধ্য হয়েই খাবারের দাম বাড়াতে হচ্ছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও কোনো ভর্তুকি দিচ্ছেন না।
এদিকে রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের খাবারের মান বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান শিক্ষার্থীরা। যা ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনের ছয় দফা দাবির মধ্যে একটি ছিল। এছাড়া শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বরাবর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি হলের ছাত্রলীগের নেত্রীরা আট দফা স্মারকলিপি দেন। যার একটি ছিল খাবারের গুণগত মান বৃদ্ধি।
এদিকে সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ক্যান্টিনে গিয়ে দেখা যায়, খাবারের বিভিন্ন আইটেমের দাম পাঁচ/দশ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আগে পাঙ্গাশ মাছের মূল্য ছিল ৩০ টাকা, এখন তা ৪০ টাকা করা হয়েছে। অন্য মাছের তরকারিগুলোও ৪০ টাকার ওপরে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া মুরগী ও গরুর মাংসের দামও বাড়িয়ে ৫০ টাকা ও ৬০ টাকা করা হয়েছে। ৪০ টাকার নিচে হল ক্যান্টিনগুলোতে কোনো মাছ/মাংসের তরকারি পাওয়া যাচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের আশরেফা খাতুন জানান, ‘আমাদের হলে যে ভাত দেওয়া হয়, সে ভাতের চাল ভালো না। ভাত থেকে গন্ধ আসে। আর তরকারির ক্ষেত্রে মাঝে মধ্যে পচা মাছ থাকে। এক প্লেট ভাত ১০ টাকায় কিনতে হয়। ভাত খুবই অল্প থাকে। যা একজনের হয় না।’
তিনি আরও জানান, ‘আলাদাভাবে আমাদের তরকারি কেনা লাগে। ভর্তা ১০ টাকা এবং ভাজি ১৫ টাকা। এক পিস মুরগি মাংস কিনতে ২৫ টাকা দিতে হয়। যা দিয়ে হাফ প্লেট ভাতও খাওয়া যায় না। হল প্রশাসনকে এসব বিষয়ে জানানো হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেননি।’
এদিকে ঢাবি ছাত্রদের অভিযোগ, ছাত্রীদের হলের পাশাপাশি ছাত্রদের হলের খাবারের মানের তুলনায় দাম আরও বেশি।
স্যার এ এফ রহমান হলের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম শুভ জানান, ‘হলের ক্যান্টিনে পাঙ্গাশ খেতে ৪০ টাকা লাগে। যেটা আমার কাছে অনেক বেশি। যেখানে রান্না করা হয়, সেখানকার অবস্থা খুবই অস্বাস্থ্যকর। তাদের প্লেটগুলো দেখলে খাবারের রুচি থাকে না। ক্যান্টিনে কোনো ফিল্টার নেই। এতে আমরা বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছি না।’
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শিক্ষার্থী জানান, ‘বর্তমানে ক্যান্টিনগুলোয় অনেক দাম বেড়েছে। ফাস্ট ইয়ারে এসে আমি ১০০ টাকায় তিনবেলা খেতে পারতাম। কিন্তু বর্তমানে ১৫০ টাকার থেকে বেশি খরচ হচ্ছে। তাছাড়া ক্যান্টিনে খাবারের স্বাদ জঘন্য, মুখে দেওয়া যায় না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাবির এক শিক্ষার্থী জানান, ‘হলগুলোতে দাম বৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য কারণ হলের ৪০/৫০ জন নেতা বিনামূল্যে খান। প্রতিটি হলেই এ রকম অবস্থা। এটা দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসছে। এজন্য অন্য শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত অর্থ দিতে হয়। শুধু যে ছাত্রলীগ নেতারা এমন করে বিষয়টি এমন না। এর আগে, বিএনপি ক্ষমতার সময় ছাত্রদলও এটা করেছে।’
এ বিষয়ে শামসুন্নাহার হলের প্রাধ্যক্ষ ড. লাফিফা জামালকে ফোন করা হলে তার ছেলে ফোন রিসিভ করেন। পরবর্তীতে তাকে ফোন দেওয়া হলে হাসপাতালে অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি আছেন বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন : জাবিতে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় ৪ ছাত্রলীগ কর্মী বহিস্কার
এ ব্যাপারে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মো. আবদুর রহিম জানান, ‘আমাদের হলে ৩৫ টাকা ডিম ভাত পাওয়া যায়। ভাত আনলিমিটেড থাকে। অন্য খাবারের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দাম কিছু অস্বস্তি থাকলে তারাও এটা ফিল করে যে বিষয়টি সাময়িক সমস্যা।’
তিনি আরও জানান, ‘হঠাৎ করে সবকিছুর দাম বৃদ্ধির ফলে ক্যান্টিনের মালিকেরা দাম বাড়িয়েছে। এ পরিস্থিতি বেশিদিন সাসটেইন করবে না। ধীরে ধীরে দাম কিন্তু কমতির দিকে যাচ্ছে। খাবারের দাম কতটুকু সহনশীল অবস্থায় নিয়ে আসা যায় এ ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট থাকব।’
এ ব্যাপারে স্যার এ এফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।