তরুণদের বিপদ থেকে রক্ষা করতে সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দাঁড় করানো প্রয়োজন
যৌন নিপীড়নের ঘটনায় তরুণদের সম্পৃক্ততা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ২০২১ সালে তরুণ জনগোষ্ঠী সংশ্লিষ্ট সহিংসতার বেশির ভাগই ছিল লাঞ্ছনা, যা ৫৪ দশমিক ৭ শতাংশ এবং যৌন নিপীড়নের ঘটনা ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ। তাই তরুণদের এসকল বিপদ থেকে রক্ষা করতে সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দাঁড় করানোর কথা বলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সাইন্স বিভাগের সভাপতি মো: সাখাওয়াত হোসেন৷
`অপরাধের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ: প্রেক্ষিত তরুণপ্রজন্ম' শীর্ষক একটি সেমিনার চবি তরুণ কলাম লেখক ফোরামের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩১ আগস্ট (বুধবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে বেলা সাড়ে ১২টায় এটি অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান আলোচক ছিলেন সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ-দৌল্লাহ। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদেরকে সমাজের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করে মানুষের মতো মানুষ হয়ে অপরাধমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে হবে। কারণ, ডাইভার্সিটি ইজ মেটার, অর্থাৎ সমাজ হলো বিভিন্ন বৈচিত্র্যের সম্ভার। সকল বৈচিত্র্যকে সাথে নিয়ে কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গড়তে তরুণ যুবদের আরও বেশি কাজ করা প্রয়োজন। আধুনিক সমাজ বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বাধীনতার চেতনা নিয়ে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে যেতে হবে।
আরও পড়ুন: প্রভাষকের হাতে মাদ্রাসা অধ্যক্ষ জখম!
সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সাইন্স বিভাগের সভাপতি মো: সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশে ৫ কোটি ৯০ লাখ তরুণ জনগোষ্ঠী আছে। এরা জনসংখ্যার প্রায় ৩৫ শতাংশ। বর্তমান বিশ্বে তরুণদের সহিংস কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কেননা তরুণ প্রজন্মের সারথিরাই আগামী বিশ্ব বিনির্মাণে নেতৃত্ব দিবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পিস অবজারভেটরির (বিপিওর) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সাল থেকে তরুণদের সহিংস প্রবণতা বেড়েছে। ২০১৯ সালে ২ হাজার ৪১১টি যুব সহিংস ঘটনা ২০২০ সালে ২ হাজার ৩৬৩টি ঘটনা এবং ২০২১ সালে তা কিছুটা কমে হয় ১ হাজার ৮৯৬টি সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনাগুলো ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কখনো কমেছে এবং কখনো বেড়েছে। তবে তা কখনোই ১ হাজার ৫০০ ছাড়ায়নি। কিন্তু ২০১৯ সালে হঠাৎ বেড়ে যায়। তিন বছরে দেশে অন্তত ৩ হাজার ৯২২ কিশোর-কিশোরীকে হিংসাত্মক ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। উল্লেখ করার মতো বিষয় হচ্ছে, করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাধ্যতামূলকভাবে ছুটি থাকায় তরুণদের মধ্যে নানাবিধ কারণে অপরাধের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
তরুণ প্রজন্মকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে তিনি সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দাঁড় করানোর কথা বলে তিনি বলেন, সামাজিক প্রতিষ্ঠান বলতে মূলত পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে বোঝানো হয়ে থাকে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে যদি পূর্বের ন্যায় সচল করতে পারি তাহলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা, অনাচার, নৈরাজ্য কমে আসবে। সঙ্গত কারণেই তরুণ প্রজন্ম বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাবে। বিভিন্ন গবেষণায় আমরা দেখেছি, সামাজিক অপরাধের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অচল হয়ে পড়া।
সেমিনারটিতে বিশেষ আলোচক হিসেবে ছিলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরিদুল আলম, চবি প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোরশেদুল আলম। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠকনটির চবি শাখার সভাপতি মুরাদ হোসেন।