উপাচার্য প্যানেল মনোনয়ন বিকালে, ৩ প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
বহু অনিশ্চয়তার বেড়াজাল পার করে আজ শুক্রবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) তিন সদস্য বিশিষ্ট উপাচার্য প্যানেল মনোনয়ন অনুষ্ঠিত হবে।
এদিন বিকেল চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সিনেট হলে একটি বিশেষ সিনেট সভায় মনোনয়ন বিবেচনার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে, গত ২৭ জুলাই মনোনয়ন বিবেচনার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বিশেষ সিনেট সভা আহ্বান করেন।
প্যানেল মনোনয়নকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে তিনটি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে- বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে অধ্যাপক আমির হোসেন তিন সদস্য বিশিষ্ট প্যানেল ঘোষণা করেছেন।
বুধবার এ প্যানেল ঘোষণা করেন তিনি। প্যানেলের বাকি দুইজন হলেন- প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মুস্তাফিজুর এবং বাংলা বিভাগের অধ্যাপক পৃথ্বিলা নাজনীন নীলিমা।
এদিকে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের পক্ষে ৩ সদস্যের আরেকটি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার অধ্যাপক ড. নূরুল আলম এ প্যানেলের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।
প্যানেলের বাকি ২ জন হলেন- গাণিতিক ও পদার্থবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার ও জাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. লায়েক সাজ্জাদ আন্দেল্লাহ।
আরও পড়ুন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মার্কশিটে এত ভুল!
অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের আরেক অংশ (সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানাপন্থী) থেকেও বৃহস্পতিবার ৩ সদস্যের প্যানেল ঘোষণা করা হয়। কলা ও মানবিকী অনুষদের শিক্ষক লাউঞ্জে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতারের উপস্থিতিতে প্যানেল ঘোষণা করা হয়। এতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের আব্দুল্লাহেল কাফি, ব্যবসায় প্রশাসন ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক মোতাহার হোসেন ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক তপন কুমার সাহা রয়েছেন।
এর মধ্যে অধ্যাপক ড. আমির হোসেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক। তিনি অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় সভাপতি এবং উপউপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। অধ্যাপক আমির বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে বিএসসি অনার্স ও এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে কানাডার ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ এবং অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
এছাড়া তিনি আওয়ামীপন্থী শিক্ষক প্যানেল থেকে দু’বার শিক্ষক সমিতির সম্পাদক, দু’বার ডিন, দু’বার সিন্ডিকেট মেম্বার, দু’বার সিনেট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ আবিষ্কারে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। তার নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা নরসিংদীর বেলাবো ও শিবপুর উপজেলায় অবস্থিত উয়ারী ও বটেশ্বর নামের দুটি গ্রামব্যাপী একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান আবিষ্কার করেন।
আরও পড়ুন : প্রেমের টানে দিনাজপুরে অস্ট্রিয়ান প্রকৌশলী
অধ্যাপক ড. পৃথ্বিলা নাজনীন নীলিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। ১৯৯৪ সাল স্নাতকোত্তর ১৯৮৬ সাল স্নাতক সম্মান অর্জন করেন। তিনি বাংলা একাডেমীর স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ এবং বানালা বিভাগের বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
অন্যদিকে অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম ১৯৮২ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়ে ১৯৯৭ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তিনি পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, জাবি স্কুল ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, হল প্রভোস্ট, গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের ডিন, অর্থ কমিটি, সিনেট এবং সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া অধ্যাপক ড. নূরুল আলম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী শিক্ষক পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যপন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত এবং আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের একাংশের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’ এর সভাপতি। এছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের ডিনের দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি করোনাকালীন সময়ে অনলাইন পরীক্ষা অধ্যাদেশ প্রণয়নে ভূমিকা রাখেন তিনি।
লায়েক সাজ্জাদ এন্দাল্লাহ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক। তিনি পিএইচডি প্রোগ্রামে বোল্টজম্যান ইকুয়েশনের জন্য ডিসক্রিট ভেলোসিটি মডেলে কাজ করেন।
আরও পড়ুন : জানেন না একে অপরের ভাষা, ট্রান্সলেটর ব্যবহার করেই প্রেম!
তিনি ১৯৯২ সাল থেকে তার পেশাগত জীবন শুরু করেন। অধ্যাপক এন্দেল্লাহর গবেষণার ক্ষেত্রগুলি হল- কম্পিউটেশনাল ফ্লুয়িড ডায়নামিক্স, ডিসক্রিট মডেলিং এবং নিউমেরিক্যাল সলিউশন অফ দ্য বোল্টজম্যান। তিনি স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক ও জাতীয় জার্নালে বেশ কিছু গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সম্পাদকীয় বোর্ডের সদস্য, পর্যালোচক এবং অন্যান্য পেশাগত কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছেন তিনি।
সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অনুসারী প্যানেলের অধ্যাপক আব্দুল্লাহেল কাফি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যাপনার পাশাপাশি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্ট, প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের কলা ও মানবিকী অনুষদের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
অধ্যাপক মোতাহার হোসেন ব্যবসায় প্রশাসন ইন্সটিটিউটের অধ্যাপনা ছাড়াও বেগম সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্ট, সিনেট সদস্য ও শিক্ষক সমিতির সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।
অধ্যাপক তপন কুমার সাহা বর্তমানে রসায়ন বিভাগের শিক্ষকতা করছেন। তিনি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পাশাপাশি তিনি একজন সিনেটর।
আরও পড়ুন: বিদেশে উচ্চশিক্ষার খুঁটিনাটি
চুক্তিভিত্তিক রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বলেন, ‘শুক্রবার বিকেল চারটায় সিনেট সভা অনুষ্ঠিত হবে। সিনেট সভা চলাকালীন একজন প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীর মাধ্যমে প্রার্থিতা ঘোষণা দেওয়া যাবে। সভার নির্দিষ্ট সময় প্রচারণার জন্য বরাদ্দ রাখা হবে। পরে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। নির্বাচন শেষে প্রথম তিনজনের একটি প্যানেল আচার্য তথা রাষ্ট্রপতির নিকট মনোনয়নের জন্য পাঠানো হবে।’
উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, ‘নির্বাচনে যে তিন সদস্যের প্যানেল নির্বাচিত হবে তাদের মধ্যে থেকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও আচার্য একজনকে নিয়োগ প্রদান করবেন। নির্বাচনে যেই আসুক তার জন্য শুভকামনা থাকবে।’
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ৮ বছর পর আগামী শুক্রবার (১২ আগস্ট) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ সিনেট সভায় উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।