জাবি ভর্তি পরীক্ষার ১৭ কোটি টাকার হিসাব মিলছে না

ভর্তি পরীক্ষার্থী, জাবি লোগো ও অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম
ভর্তি পরীক্ষার্থী, জাবি লোগো ও অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম  © ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ সম্মান শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি হতে প্রাপ্ত আয়ের ১৭ কোটি ২৭ লাখ ৩০ হাজার ২৯৬  টাকার হিসাব মিলছে না। 

এবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের শেষ মেয়াদের ৪ বছরের অডিট সম্পন্ন হয়। অডিট প্রতিবেদন হতে এসব তথ্য জানা যায়। 

গোপনীয় প্রতিবেদনের সংশ্লিষ্ট দুটি অনুচ্ছেদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের কাছে রয়েছে। বিষয়টিকে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম বলে চিহ্নিত করেছে হিসাব নিয়ন্ত্রক ও মহাহিসাব নিরীক্ষক এর কার্যালয়ের অধীন শিক্ষা অডিট অধিদপ্তরের অডিট টিম। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে মোট আবেদন ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৯৬৩টি হতে প্রাপ্ত মোট আয় ১৯ কোটি ৯৩ লাখ ৩৩ হাজার ২০০ টাকা । বিকাশ ও রকেট মাধ্যমে প্রাপ্তিসহ মোট প্রাপ্ত আয় ১৯ কোটি ৯৪ লাখ ২৩ হাজার ৬৬২ টাকা ।২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে মোট আবেদন ৩ লাখ ৬ হাজার ৩৬৭ টি হতে প্রাপ্ত মোট আয় ১৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৯ হাজার ৩০০ টাকা । সর্বমোট অর্থের পরিমাণ দাড়ায় ৩৫ কোটি ৩১ লাথ ৫২ হাজার ৯৬০ টাকা।

প্রতিবেদনের প্রথম অনুচ্ছেদে বলা হয়,  বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের স্মারক নং- বিম / বাজেট -৪ / ২০১৭-৩৯৭১  এর শর্ত ১১ এর নির্দেশনা অনুযায়ী ৪০ % হারে অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় তহবিলে জমা প্রদান করে বাকি অর্থ পরীক্ষা গ্রহণ সংক্রান্ত কাজে ব্যয় করা যাবে ।

আরও পড়ুন: চবিতে কী হয়েছিল সেই রাতে?

দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে বলা হয়, ২০১৪ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং- শিম / অডিট সেল / ২৪৩ / ২০১১ / ৪৭৫  এর অনুচ্ছেদ ৫ ( ক ) এর নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষা বোর্ড / বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক ও অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১০০০ জনের বেশী হলে প্রাপ্ত অর্থের ১০ % হারে সরকারি তহবিলে জমা প্রদান করে বাকি অর্থ পরীক্ষা গ্রহণ সংক্রান্ত কাজে ব্যয় করা যাবে । 

কিন্তু এক্ষেত্রে আয়ের ৪০ ভাগ (১৪ কোটি ১২ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা ) টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে ও ১০ ভাগ (৩ কোটি ১৫ লক্ষ ১৫ হাজার ২৯৬ টাকা) সরকারি তহবিলে জমা জমা দেয় নি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের তৎকালীন প্রশাসন। 

এছাড়াও, একাদশ জাতীয় সংসদের সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৮ম বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অনুচ্ছেদ  -১০.১.১ মোতাবেক যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান ফরম বিক্রির ৪০ % টাকা প্রতিষ্ঠানের তহবিলে জমা করেনি তাদেরকে অনধিক ০৪ মাসের মধ্যে টাকা জমা প্রদান করতে হবে । অনুচ্ছেদ নং -১১.১.১ মোতাবেক আপত্তিকৃত ১০% টাকা জমা প্রদান করা প্রমাণক আপত্তির পর ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে নিরীক্ষা  কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্থাপন করতে হবে । কিন্তু এক্ষেত্রে তা অনুসরন করা হয়নি। 

ভর্তি পরীক্ষার আয়ের ৪০% এর স্থলে ৩৪% অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিলে জমা রাখা হয় । অন্যদিকে অভ্যন্তরীন পরীক্ষা হতে সমুদয় আয় বার্ষিক বাজেট অন্তর্ভুক্ত করা হয় । বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয় বিধায় অভ্যন্তরীন পরীক্ষার ফিস বাবদ আয়ের ১০০% বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলে জমা করা হয় ।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জবাবে জানানো হয়, এ বছরে কভিড -১৯ এর কারণে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খরচের পরিমাণ একটু বেশী হয়েছে । ফলে ৪০% এর স্থলে ৩৪% অর্থ তহবিলে জমা করা হয়েছে। সরকারি তহবিলে ১০ ভাগ অর্থ জমা করার করার কোন দাবি করা হয় নি। 
  
তবে অডিট টিম বলছে, ‘‘প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষার প্রাপ্ত টাকার ৩৪ % অর্থ কেন্দ্রীয় তহবিলে জমার কোন প্রমাণক নথিতে সংরক্ষিত নেই , নিরীক্ষাকালে উপস্থাপন করা হয়নি এবং জবাবের সাথেও প্রেরণ করা হয়নি । বিধায় আপত্তিকৃত অর্থ কেন্দ্রীয় তহবিলে জমা করা প্রয়োজন । পূর্বে এ ধরণের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও উক্ত অর্থ বছরে ৪০ % অর্থ জমা করা হয়নি।’’

নিরীক্ষার সুপারিশে উক্ত অর্থ নিয়মানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় তহবিলে এবং সরকারি তহবিলে জমা করে জমার প্রমাণ সহ জবাব প্রদানের কথা বলা হয়েছে।

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত হিসাবাধ্যক্ষ মোসানুল কবীর বলেন, "আমরা যা কিছু করেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে করেছি, শিক্ষার্থীদের স্বার্থে করেছি। এর বেশি কিছু বলতে পারবো না।"

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের  কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলম ভর্তি পরীক্ষার প্রাপ্ত আয় নিয়মানুযায়ী সঠিকভাবে ব্যয় নিশ্চিত করার আদেশ দিয়েছেন। 


সর্বশেষ সংবাদ