বহুমূখী সংকটের মুখে বৈশ্বিক অর্থনীতি: সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান

সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান
সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান  © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেছেন, বহুমুখী সংকটের মুখে বৈশ্বিক অর্থনীতি। মহামারির কারণে আগে থেকেই খাদ্য সংকট ছিলো। বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনগুলোও করোনার কারণে ঝুঁকিতে ছিলো। তারমধ্যেই আবার অনাকাঙ্ক্ষিত রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ। ফলে সাপ্লাই চেইনগুলোতে ঝুঁকি আরো বেড়েছে। তেলসহ সব ধরণের জ্বালানির মূল্য বেড়েছে। খাদ্যপণ্যেরও মূল্য বেড়েছে। এমনকি মানুষ সার্বিক মূল্যস্ফিতিতে চাপে পড়েছে।

মঙ্গলবার (৭ জুন) বেলা ১১টায়  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট ভবনে আয়োজিত 'বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বাংলাদেশের বাস্তবতা' শীর্ষক এক সেমিনারে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

এমন সঙ্কটের দৃষ্টান্ত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিরল উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, এপ্রিল ২০২০ থেকে মার্চ ২০২২ এ জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ৪ গুন। এসময়ে সারের দাম বেড়েছে ২২০ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ গুণেরও বেশি। যেসব খাদ্যপণ্য রাশিয়া ও ইউক্রেনে বেশি উৎপন্ন হয়, সেগুলোর দাম বেড়েছে ৮৪ শতাংশ। যা প্রায় দ্বিগুন।

মূল্যস্ফীতির চাপ দক্ষিণ এশিয়াতে কিছুটা বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের কনজ্যুমার প্রাইস ইনডেক্স ইনফ্লেশন ২১ শতাংশ এবং ৮ শতাংশ। বাংলাদেশ এ বৃদ্ধি তুলনামূলক কম। তবুও ৬% পেরিয়ে গেছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্য ৫.৩% এর চেয়ে বেশি।

বিশ্ব সঙ্কটের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পণ্য আমদানির ব্যয় বেড়ে গেছে। আগের বছরের তুলনায় রপ্তানি এখন পর্যন্ত বর্ধিষ্ণু থাকলেও বৈশ্বিক মন্দার কারণে ঝুকি তৈরি হয়েছে। উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির আশংকাও দেখা যাচ্ছে। খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে তুলনামূলক কম আয়ের মানুষেরা বিপাকে পড়েছেন। একদিকে আমদানি কমানোর চাপ রয়েছে, অন্যদিকে পুনরুদ্ধার বেগবান রাখাও দরকার।

দেশে সংকট উত্তোরণের উপায় হিসেবে গভর্নর উল্লেখ করেন, কেবল মূদ্রানীতি দিয়ে সংকট উত্তরণ হবেনা, সরকারের বাজেটেও যথাযথ  উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া টেকসই পুনরুদ্ধারের জন্য বাজেটে সামাজিক খাতগুলোতে বরাদ্দে মনোযোগ অব্যাহত রাখতে হবে। স্বাস্থ্যখাতে বাজেটের ৮ শতাংশ, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বাজেটের ২০ শতাংশ এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

কৃষির উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, কৃষি আমাদের রক্ষাকবচ। তাই, কৃষির বিকাশ নিশ্চিত করতে বাজেটে উদ্যোগ রাখতে হবে। কৃষি ভর্তুকি তিনগুন বাড়িয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা করতে হবে। কৃষি সংশ্লিষ্ট সরকারি জনবলের দক্ষতা সক্ষমতা বাড়াতে বরাদ্দ রাখতে হবে। কৃষি অবকাঠামো ও অনলাইনে কৃষি বাজারজাতকরণ বাড়াতে বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

তাছাড়া আয় বুঝে ব্যয় করার সংস্কৃতি চালু করতে হবে উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, বিদ্যমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গতানুগতিক ধারায় সরকারি ব্যয় না করে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মূল্যস্ফৃতির কারণে বিপাকে পড়া মানুষকে সুরক্ষ দিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে, কৃষিখাতে দেওয়া ভর্তুকি আরো বাড়াতে হবে। জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ও বিচক্ষণতার সাথে করতে হবে। চাহিদা নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ বাড়ানো উভয় দিকেই নীতি-মনোযোগ সক্রিয় রাখতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালামের সঞ্চালনায় সেমিনারে মুখ্য আলোচক হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক আতিউর রহমান। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সনৎকুমার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক অবায়দুর রহমান প্রামাণিক প্রমূখ।

এসময় সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল- ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মোঃ জাকারিয়া ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক (অবঃ) অবায়দুর রহমান প্রামাণিক। এছাড়া জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডেসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সেখানে উপস্থিত ছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ