২১ এপ্রিল ২০২২, ১৭:৫৭

চিকিৎসকের ভুলে মৃত্যুর সাথে লড়ছে ঢাবি ছাত্রের মা

মো. আশরাফুল ইসলাম  © ফাইল ফটো

চিকিৎসকের ভুল অস্ত্রপাচারের কারণে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মা। শুধু তাই নয়; বাড়তি চিকিৎসার জন্য সহায় সম্বল সব বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে ওই শিক্ষার্থীর পরিবার।

ভুল চিকিৎসার অভিযোগ ওঠা ওই ডাক্তারের নাম মো. আশরাফুল ইসলাম। তিনি সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। বর্তমানে অবসরে আছেন। জেনারেল এন্ড ল্যাপারোস্কোপিক বিষয়ক সার্জন তিনি। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার আভিসিনা হাসপাতালে সপ্তাহে তিনদিন গিয়ে অপারেশন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থীর নাম নাহিদ হাসান তারেক। তিনি দর্শন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

জানা যায়, তারেকের মা শাহানাজ বেগমের জরায়ুতে টিউমার হওয়ায় গত বছরের ২৮ নভেম্বর অস্ত্রপাচার করানো হয়। এই অস্ত্র পাচার করেন ডা. আশরাফুল। কিন্তু অভিযোগ উঠে তিনি জরায়ুর অপারেশন করতে গিয়ে তারেকের মায়ের মূত্রথলি কেটে ফেলেন। কিন্তু যদিও তিনি ইউরোলজিস্ট না তারপরও মূত্রথলিতে সেলাই করেন। কিন্তু তার সেলাই ঠিকমতো না হওয়ায় পরবর্তীতে মূত্রনালীর সাথে রক্ত বের হওয়া শুরু হয়। এই অবস্থায় তারেক দিশেহারা হয়ে পড়ে। সে ওই ডাক্তারকে (আশরাফুল) ফোন দিয়ে সবকিছু বলে এবং কেন এরকম হচ্ছে তা জানতে চাইলে তিনি নিজের ভুল ঢেকে রেখে বলেন, ‘ঠিক হয়ে যাবে’। এমনকি তারেক তাকে অন্য ইউরোলোজিস্ট ডাক্তারের কাছে রেফার করতে বললেও তিনি নিজে আবার অপারেশন করতে চান।

এদিকে মায়ের চিকিৎসার জন্য শক্তি ফাইন্ডেশন নামক একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা ও নিজেদের শেষ আশ্রয় স্থল বসতভিটা বিক্রি করেন তারেকের পরিবার। পরবর্তীতে তার কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করলে তিনি তা না দিয়ে উল্টো তাকে হুমকি দেন বলে জানান তারেক।

এ বিষয়ে তারেক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলে, দুইদিন দেখা গেল ক্যাথেটারের পাইপের বাইরে রক্ত আসে।পরে প্রস্রাব আসতেছে। তাকে জানালাম আমার মায়ের কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা। এটা অনেকবার জানতে চাইছি? উনি তখনও স্বীকার করেননি যে মূত্রথলি কেটে গেছে। আমাকে বলে, ‘‘এখন আর কিছু করার নেই৷ তিন চারমাস পর এটার জন্য আবার অপারেশন করবো।

আরও পড়ুন: এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-বোনাস ঈদের আগেই

তারেকের মা শাহানাজ বেগম বলেন, আমার মূত্রনালীতে সংযুক্ত ক্যাথেটারের বাইরে যখন প্রস্রাব বের হচ্ছিল তখন আমার ছেলে আমাকে হাসপাতালে (আভিসিনা) নিয়ে যায়। তখন ওই ডাক্তার ছিল না। তার সহকারী তাকে ফোন করে আমার পরিস্থিতি জানায়। পরে তিনজন নার্স একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে সবকিছু ডাক্তারকে বলে। তখন তাদের মধ্যে একজন বলল, আপনার ভাগ্য খারাপ। আপনার মূত্রথলি কেটে গিয়েছিল যার কারণে এই সমস্যা।

এদিকে পরবর্তীতে তারেকের মায়ের অবস্থা খারাপের দিকে যাওয়া শুরু করলে সে তার মাকে ঢাকায় ল্যাব এইড হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে অপারেশন করানো হয়। এখানে তার মায়ের অপারেশন যেই ডাক্তার করেছেন তিনি রিপোর্টে জানান যে আগের অপারেশনে মূত্রথলি কেটে গিয়েছিল যার কারণে এই সমস্যা।

এদিকে এই অপারেশন করার জন্য তারেক ঢাকার একটি বেসরকারি সংস্থা পঞ্চাশ হাজার টাকা ঝণ নেয়। কিন্তু ডাক্তারের ভুলের কারণে আবার অপারেশন করাতে হবে। অভাবের সংসার তাদের। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার। বাবা সবজি বিক্রেতা। কোন উপায়ন্তর না পেয়ে নিজেদের শেষ আশ্রয় স্থল বিক্রি করেন।

তারেক বলেন, আমরা বর্তমানে নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। আমার বাবা একজন সবজি বিক্রেতা। তার (ডাক্তার) এর এই ভুলের জন্য আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল বসতভিটা বিক্রি করতে হয়েছে। ঢাকার একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। তার কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিলাম কিন্তু তিনি তা না দিয়ে উল্টো খারাপ ব্যবহার করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ওই ডাক্তারের সহকারী সারোয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তার (আশরাফুল) সাথে কথা বলতে বলেন।

আরও পড়ুন: প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ করা হবে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে: প্রতিমন্ত্রী

এদিকে অভিযুক্ত ডা. আশরাফুল ইসলাম বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এগুলো তো হতেই পারে। অপারেশন করতে গিয়ে এগুলো অনেক হয়। আমিতো আবার অপারেশন করতে চেয়েছিলাম। তারা যদি গরিব হয় তাহলে ল্যাব এইড হাসপাতালে কেন গেল?

আপনি তো ইউরোলজিস্ট না এরপরও আপনার এই অপারেশন করাটা ঠিক হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি বলেন, ইউরোলজিস্ট না হলেও তো আমরা এসব অপারেশন অনেক করি। আমি অনেক করেছি।

তারেক ও তার বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন বড়ভাই ক্ষতিপূরণ চাইতে আপনার কাছে গিয়েছিলেন কিন্তু আপনি তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে আশরাফুল বলেন, এটা মিথ্যা কথা। আমি কখনো তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করিনি।