ভাস্কর্য বিরোধীরা ধর্মকে শিল্পের প্রতিদ্বন্দ্বী বানাতে চায়—মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী
যেসমস্ত মূর্খরা ধর্মকে ইস্যু করে ভাষ্কর্যের বিরোধিতা করে তারা জানে না ভাস্কর্য শুধুমাত্র বাংলাদেশে নয় সারাবিশ্বের মুসলিম দেশে আছে। ভাস্কর্য তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া সহ সকল মুসলিম রাষ্ট্রেই আছে। এরা তারা (ভাস্কর্য বিরোধী) যারা ব্রিটিশ আমলে বলেছিলো ইংরেজি শিক্ষা হারাম। এরা ধর্মকে সব জায়গায় ব্যবহার করে ভালো ও সুন্দর বিষয়সমুহের সাথে ধর্মকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক।
বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) বিকালে ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক বিশেষ ভাষ্কর্য প্রদর্শনীর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে। আমি আমার নির্বাচনী এলাকা গাজীপুরে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। আমরা যেখানে যুদ্ধ করেছি, যেখানে আমি আমার সঙ্গীদের হারিয়েছি; সেখানে বাংলাদেশের প্রথম ভাষ্কর্য স্থাপিত হয়েছে৷ আমি সেখানে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পেরে গর্বিত।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়ের পঞ্চাশটি প্রজেক্টের মধ্যে অন্যতম হলো ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক ভাস্কর্য প্রদর্শনী। এটার জন্য যখন মন্ত্রণালয়ের চিঠিটি পেয়েছিলাম তখনই মনে হয়েছিলো এটা একটা সুযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় পর্যায়ে অবদান রাখার। সেই সুযোগ আমরা পেয়েছি এবং কাজে লাগিয়েছি। এখানকার প্রদর্শনীর কালেকশন ছিলো অত্যন্ত সমৃদ্ধ।
আরও পড়ুন: ক্রিকেটের মাঠ থেকে হাসপাতালের বেডে ঢাবি শিক্ষার্থী মোশাররফ
উপাচার্য বলেন, আমি মনে করি যারা ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে উগ্রতা ছড়ায় এভাবে ভাস্কর্য নির্মানের মাধ্যমে তাদের (উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির) সমুচিত জবাব দেয়া হবে৷ সারাদেশের মুক্তাঙ্গনের সব ভাস্কর্য নিয়ে একটি সংরক্ষণশালা করতে হবে হবে। আমাদের চারুকলা অনুষদ এ বিষয়ে একটা প্রপোজাল তৈরি করে দিবে। আশা করি মন্ত্রণালয় এবিষয়ে সুদৃষ্টি দিবে।
ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর শতবর্ষ ও বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছর উপলক্ষে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমরা আয়োজন করেছি। যখন নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো তখন থেকে আমাদের হাতে পর্যাপ্ত সময় ছিল না। তবুও আমরা চেষ্টা করেছি ভালোভাবে সম্পন্ন করার। আমরা দেখতে পাই এত বিরোধিতা সত্বেও মুক্তাঙ্গনের ৯০ ভাগ ভাষ্কর্য মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর। এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ভাস্কর্য বিভগের চেয়ারপারসন নাসিমা হক মিতু ও বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
সমাপনী অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ভাস্কর্য চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ ভাস্কর হামিদুজ্জামান খানকে সম্মাননা প্রদান করা হয় এবং প্রদর্শনী থেকে সেরা ৩টি ভাস্কর্যের ভাস্করকে সম্মাননা স্মারক ও পঞ্চাশ হাজার করে টাকা পুরষ্কার দেয়া হয়।