২৩ মার্চ ২০২২, ১৬:৫০

করোনায় মওকুফ ঘোষণা করেও পরিবহন-আবাসন ফি নিচ্ছে ঢাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি ফটো

২০১৯ সালের ১৮ মার্চ করোনা মহামারীর কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) বন্ধ হয়ে যায়। গত বছরের ৫ অক্টোবর খুলে। দীর্ঘ দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা কোন প্রকার পরিবহন সেবা ও আবাসন সুবিধা নেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলেছিল পরিবহন ও আবাসন ফি নেয়া হবে না। যে ফি ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে তা পরবর্তীতে ভর্তির সময় সমন্বয় করা হবে। অর্থাৎ প্রথম বর্ষে যে পরিবহন ফি দিয়েছে তার দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তির সময় আর নেয়া হবে না। এভাবে অন্যান্য বর্ষের একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বক্তব্য এখনো কার্যকর হয়নি। উল্টো অনেক বিভাগে পরিবহন ফি নেয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতিমধ্যে ৭ টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে পরিবহন ফি নেয়া হয়েছে। এগুলো হলো- তথ্যবিজ্ঞান গ্রন্থাগার ও ব্যবস্থাপনা, ইসলামিক স্টাডিজ, ইংরেজি, উর্দু, উন্নয়ন অধ্যয়ন,আইন, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট। এছাড়াও আরও প্রায় ২০ টির মতো বিভাগে ভর্তি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আরো জানা যায়, পরিবহন ফি ১০৮০ টাকা নেয়ার পাশাপাশি হল ভেদে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত আবাসন ফি নেয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন: পরীক্ষায় নকল করায় বহিষ্কার হচ্ছেন ঢাবি ও অধিভুক্ত কলেজের ৭১ শিক্ষার্থী

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, যারা পরিবহন ও আবাসন ফি দিয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। আগামী আট থেকে দশ দিনের মধ্যে তাদের এই টাকা ফেরত দেয়া হবে। তবে এই টাকা নগদ নাকি অন্য কোনভাবে ফেরত দেয়া হবে এই বিষয়ে তিনি পরিষ্কারভাবে কিছু জানাননি।

এদিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এটা বড় কোন বিষয় নয়। প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। খুব দ্রুত এসব সমন্বয় করা হবে।

এসব ফি নেয়া সম্পূর্ণরূপে অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা। শুধু তাই নয় হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের দাবি হলে যারা থাকে তাদের জন্য এই পরিবহন ফি নেয়া সম্পূর্ণরূপে অযৌক্তিক।

এ বিষয়ে দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান তারেক বলেন, এভাবে পরিবহন ও আবাসন ফি আদায় অত্যন্ত অবিবেচনাপ্রসূত উদ্যোগ। করোনার সময়ে যে আর্থিক দুরাবস্থা তৈরি হয়েছিল তা কাটিয়ে ওঠার প্রারম্ভেই এরকম অর্থ আদায় এক প্রকার শোষণ বলে আমি মনে করি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে অবশ্যই তা শিক্ষার্থীবান্ধব ও যৌক্তিক কি না তা বিবেচনা করা উচিত।

উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী ইছমে আজম বলেন, এটা পুরাই অমানবিক কাজ। করোনা মহামারিতে আমরা কেউই পরিবহন ও আবাসন সুবিধা নিতে পারিনি। সমন্বয়ের কথা বলে আমাদের দ্বিতীয় বর্ষের ভর্তি হওয়ার সময় ১০৮০ টাকা করে নিয়েছে। যা শোষণ ছাড়া কিছুই নয়। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটা বিরাট অংশ হলে থাকে। তাদের কাছ থেকে কেন ‌পরিবহন ফি নেয়া হবে। এটা কোন ধরনের যৌক্তিকতা।

মেফতাহুল হোসাইন বলেন, যারা হলে থাকে এদের পরিবহন ফি নেয়া আর যারা অনাবাসিক তাদের আবাসন ফি নেয়া দুটোই অন্যায্য ও অযৌক্তিক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এসব অযৌক্তিক ফি নেয়া সত্যিই বেদনাদায়ক।

ছাত্রসংগঠন গুলো কি বলছে?

এ বিষয়ে সকল ছাত্র সংগঠনের বক্তব্য হচ্ছে এসব ফি নেয়া সম্পূর্ণরূপে অযৌক্তিক। এবং তাদের দাবি দ্রুত এসব ফি সমন্বয় করা হোক।

ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ বলেন, এটা নিয়ে আমরা দাবি জানিয়েছি। তবে তারা এটা কিভাবে এবং কখন সমন্বয় করবেন এর সদুত্তর আমরা পাইনি। আমরা চাই অবিলম্বে এটা সমন্বয় করা হোক।

ছাত্র অধিকার পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন বলেন,পরিবহন ফি সহ করোনায় সকল উন্নয়ন ফি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছি আমরা। পরিবহন ফি’র বিষয়টা সমন্বয় না করা হলে আমরা প্রশাসনের সাথে এটা নিয়ে কথা বলবো। এই বিষয়ে সমন্বয়ের বিকল্প কোনো সমাধান নাই।

আরও পড়ুন: গুচ্ছ ভর্তি: আঞ্চলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হচ্ছে কুবি

ছাত্রদলের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আমরা পরিবহন ফি, উন্নয়ন ফি, আবাসন নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করার অভিযোগ পাচ্ছি। এ বিষয়ে আমরা প্রশাসনকে বলেছিলাম। খুব শীঘ্রই আবারও ভিসি স্যারের সাথে সাক্ষাৎ করে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করব। তা না হলে আমরা আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করব।

ছাত্র ফ্রন্ট ঢাবি শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন,করোনার মধ্যে কেউ এই সেবা গ্রহণ করেনি। প্রশাসন বলেছিল এই ফি সমন্বয় করা হবে। কিন্তু আমরা দেখতেছি প্রশাসন তাদের দেয়া সেই প্রতিশ্রুতি রাখছে না। এটা পুরোপুরি অন্যায় ও অন্যায্য একটি সিদ্ধান্ত। আমরা প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানাই করোনার মধ্যে পরিবহন ফি সহ সকল ফি যেন সমন্বয় করা হয়।