পরীক্ষা দিতে পারবে ছাত্র লাঞ্ছনার অভিযোগে বহিষ্কৃত জাবির দুই ছাত্রী
সিনিয়র শিক্ষার্থীকে শারীরিক লাঞ্ছনা ও মিথ্যা অভিযোগ করার দায়ে বহিষ্কৃত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) দুই ছাত্রী পরীক্ষা ও নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট। শুক্রবার (৪ মার্চ) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রিটকারীদর আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
তিনি জানান, জাবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের দুই ছাত্রী সুমাইয়া বিনতে ইকরাম ও আনিকা তাবাসসুম মীমকে বহিষ্কারাদেশ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল জারি করে উচ্চ আদালত। পরে আদালত জানায় উচ্চ আদালতের আদেশে রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা পরীক্ষা ও নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবেন। তবে আদালত জানিয়েছে তাদের পরীক্ষার ফল অপ্রকাশিত থাকবে।
এদিকে, সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালতে হাইকোর্টের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে আপিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আপিলের আবেদনও আদালত খারিজ করে দিয়েছেন বলে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন তিনি।
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে রিট আবেদনকারীদের পড়াশুনা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে এবং আসন্ন পরীক্ষাগুলোতে অংশ নেওয়ার অনুমতি দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের ফল অপ্রকাশিত থাকবে।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কর্মকর্তা মাহতাব-উজ জাহিদ রুল শুনানির বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে এ ব্যাপারে কথা বলতে তিনি রাজি হননি।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস জানান, এখন ওই ব্যাচের কোন ক্লাস চলছে না। দুটো পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় আগামী ৬ মার্চ থেকে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, হাইকোর্টের আদেশের প্রতি আমরা সবসময়ই শ্রদ্ধাশীল। এর আগে সংক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আমাদের একটি কপি দেয়। সেটা অফিসিয়ালি গ্রহণ করার এখতিয়ার আমাদের নেই। বিশ্ববিদ্যালয় এটা দেখবে এবং বিভাগকে নির্দেশ দিবে।
আরও পড়ুন: রাবিতে আইন বিভাগের ফুটবল ফেস্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত
অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস জানান, হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার আপিল করতে যাচ্ছেন, এটা আমাকে মৌখিকভাবে বলা হয়। সেই আপিল খারিজ করা হলে আইনত তাদের পরীক্ষায় বসতে কোন বাধা নেই। এ ব্যাপারে আমি রেজিস্ট্রারকে জানাবো।
জানা যায়, ২৫ জানুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় সড়কে জায়গা ছেড়ে দেওয়াকে কেন্দ্র করে স্নাতকোত্তরের এক শিক্ষার্থীর কলার ধরে চড় মারেন সুমাইয়া বিনতে ইকরাম। এ ঘটনায় তাঁর ও সঙ্গে থাকা আনিকার শাস্তির দাবিতে সরব হন অন্য শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় উভয় পক্ষই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দেন।
পরে কোন ধরনের কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই ২৬ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া বিনতে ইকরামকে এক বছরের জন্য এবং আনিকা তাবাসসুম মীমকে ছয়মাসের জন্য বহিষ্কারের আদেশ দেয়।
এ ঘটনায় ওই দুই শিক্ষার্থীর পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের করা বহিষ্কারাদেশ চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়। এর প্রেক্ষিতে ২০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমেদ ও কাজী জিনাত হকের বেঞ্চ কারণ দর্শানোর রুল জারি করেন। এছাড়া এই বহিষ্কার আদেশকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে আগামী চার সপ্তাহ (২০ মার্চ পর্যন্ত) সময় দেন।