০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:৫৭

চবির আশায় কোথাও ভর্তি হননি ফাহিমা, জিনাতুলের কৃতজ্ঞতা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

আইনি লড়াইয়ে জয়ী হয়ে অবশেষে দুই বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ভর্তির অনুমোদন পেয়েছেন ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের দুই ছাত্রী। রবিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের ভর্তির অনুমোদন দেয়।

এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে তাদেরকে ভর্তির বিষয়টি বিবেচনা করতে চবি কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। চান্স পেয়েও দুই বছর ধরে ভর্তি হতে না পারা দুই ছাত্রীর একজনের নাম ফাহিমা আক্তার, অপরজন জিনাতুল ফেরদৌস নাহিন।

২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জিনাতুল কলা ও মানববিদ্যা অনুষদভুক্ত ‘বি’ ইউনিটে ১০৯১তম ও ফাহিমা বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘এ’ ইউনিটে ৪৩৪তম হয়েছিলেন। উচ্চমাধ্যমিকে মানোন্নয়ন পরীক্ষা দেয়ার কারণে তাদের দুজনের ভর্তি নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

আরও পড়ুন: আইনি লড়াইয়ে জিতে দুই বছর পর চবিতে ভর্তির সুযোগ দুই ছাত্রীর

জানা যায়, ২০১৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে মানোন্নয়ন পরীক্ষা দেয়া চবির ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় (‘এ’ ‘বি’ এবং ‘সি’ ইউনিটে) মেধাতালিকায় স্থান পাওয়ার পরও ভর্তি প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে ৮২ জন শিক্ষার্থী তিনটি রিট করেন।

‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া একজন শিক্ষার্থী একটি রিট করেন। এসব রিটের শুনানি নিয়ে ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগ চবির ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের তিন ইউনিটে মেধাতালিকায় স্থান পাওয়া ৮২ শিক্ষার্থীর ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়।

এছাড়া ‘ডি’ ইউনিটে মানোন্নয়ন দেয়া ভর্তি পরীক্ষার্থীদের ফলাফল প্রকাশ না করায় রিট আবেদনকারীর ফলাফল প্রকাশ ও সেই অনুযায়ী ভর্তির বিষয়টি বিবেচনা করতে বলা হয়। পরে ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু আবেদনগুলো দীর্ঘদিন শুনানিতে না আসায় শিক্ষার্থীরা গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ভার্চ্যুয়ালি বিষয়টি আপিল বিভাগের নজরে এনে বলেন, আমরা কোথাও ভর্তি হইনি। চবিও আমাদের ভর্তি করেনি। আমাদের শিক্ষাজীবন আটকে আছে।

এরপর আদালত শুনানির জন্য দিন ধার্য করে। একই বছর ২২ সেপ্টেম্বর শুনানিতে ৮২ শিক্ষার্থী নয়, কেবল যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে দুই শিক্ষার্থীকে ভর্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চবি কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

আরও পড়ুন: ভর্তি পরীক্ষায় সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ইস্যু বিবেচনা করবে ঢাবি

ভর্তির অনুমোদন পেয়ে আনন্দে বিমোহিত ফাহিমা আক্তার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মেধা তালিকায় স্থান পেয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারিনি। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী আমাদের ভর্তি হওয়ার কথাই ছিল। সে জন্যই আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম।

অন্যদিকে দীর্ঘদিন পরে হলেও ভর্তির সুযোগ পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন জিনাতুল ফেরদৌস। তিনি বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে চবিতে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছি। কিন্তু চান্স পেয়েও ভর্তি হতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। আব্বু-আম্মু অনেক কষ্ট করেছেন। অবশেষে ভর্তির অনুমতি পেয়েছি। অনেক আনন্দ লাগছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিও কৃতজ্ঞতা; দেরি হলেও তারা আমাদের ভর্তির সুযোগ দিয়েছেন।

ফাহিমা আক্তার বলেন, চবিতে ভর্তির আশায় এতদিন কোথাও ভর্তি হইনি। যারাই আমার জন্য সহায়তা করেছেন সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। বিশেষ করে রাকিব উদ্দিন ভাই আমাদের রায়ের কপি আনতে অনেক পরিশ্রম করেছেন। দীর্ঘদিন পর হলেও ভর্তি হতে পারছি অবশ্যই ভালো লাগছে।

আদালতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহবুব শফিক। শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী বিএম ইলিয়াস কচি। বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার অধ্যাপক (ভারপ্রাপ্ত) এস এম মনিরুল হাসান বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে আমরা ওই দুই শিক্ষার্থীকে ভর্তির অনুমোদন দিয়েছি। তাদের ভর্তি হতে আর কোনো আইনি বাধা নেই।’