৩০ জানুয়ারি ২০২২, ০৮:৫৯

শিক্ষক নিয়োগে বেশি সিজিপিএ পাওয়া প্রার্থীকে বাদ দেয়ার অভিযোগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক পদের নিয়োগ পরীক্ষায় ওই বিভাগের একাডেমিক ফলে এগিয়ে থাকা প্রার্থীকে বাদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে নিয়োগ বোর্ড দাবি করেছে, ভাইভা বোর্ডে ভালো না করায় বেশি সিজিপিএ পাওয়া প্রার্থীকে চাকরির সুপারিশ করা হয়নি।

সুপারিশ না পাওয়া প্রার্থীর নাম সৈয়দা আছিয়া আশা। তিনি মনোবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকে সিজিপিএ ৪ এর মধ্যে ৪ ও স্নাতকোত্তরে ৩ দশমিক ৭১ পান। পরে যুক্তরাষ্ট্রের চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেন আছিয়া।

অন্যদিকে সুপারিশ পাওয়া আমিনুল ইসলাম স্নাতকে ৩ দশমিক ৬৭ ও স্নাতকোত্তরে ৩ দশমিক ৮১ সিজিপিএ পেয়েছেন। তিনি স্নাতকোত্তরে স্কুল সাইকোলজি থেকে ১০-১২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছেন। যেখানে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই ইডেন, বদরুন্নেসা ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী।

সৈয়দা আছিয়া মনোনয়ন না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক। তাদের ধারণা, বিভাগ থেকে যে দুজন শিক্ষক ভাইভা বোর্ডে ছিলেন তারা উভয়ই স্কুল সাইকোলজির শিক্ষক। আর সৈয়দা আছিয়া আশা ছিলেন সাইকোলজির মূল মাস্টার্স প্রোগ্রামের শিক্ষার্থী। সেখানে হয়তো পক্ষপাতমূলক আচরণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ঢাবি ছাত্রলীগের হল সম্মেলন আজ

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের এক শিক্ষক গণমাধ্যমকে বলেন, আছিয়া আশার যে শিক্ষকতা যোগ্যতা সেটি এই বয়সে অনেক শিক্ষকেরও ছিল না। ক্লাসে তার প্রেজেন্টেশনও ছি ব্যতিক্রম। সিজিপিএ মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীর চেয়ে অনেক ভালো। কেন তাকে সুপারিশ করা হলো না সেটি আসলেই বুঝেতে পারছি না।

আরেক শিক্ষক বলেন, আশা অনার্সে সিজিপিএ ৪ পেয়ে প্রথম হয়েছেন, যেখানে মনোনীত প্রার্থীর সিজিপিএ ৩.৬৭। এছাড়া মাস্টার্সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫০ শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন, সেখানে মনোনীত প্রার্থী বিভিন্ন কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছেন। এখানে অবশ্যই কোনো কিন্তু রয়েছে। না হলে এত ভালো ব্যাকগ্রাউন্ডের একজনকে মনোনয়ন না দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, নিয়োগ সুপারিশে কোনো পক্ষপাতমূলক আচরণ করা হয়নি। এ বিষয়ে নির্বাচনী বোর্ডের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্যের (শিক্ষা) সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

আরও পড়ুন: ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৮টিতেই নেই ভিসি-ট্রেজারার

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মনোবিজ্ঞান বিভাগে নিয়োগের দুজন প্রার্থীই বিভাগের ভিন্ন দুটি ব্যাচে স্নাতকে প্রথম হয়েছিলেন। যাঁকে সুপারিশ করা হয়নি, তাঁর একাডেমিক ফলাফল থেকে শুরু করে কোনো কিছুই খারাপ নয়, সাক্ষাৎকারেও খারাপ করেননি৷ তবে যে প্রার্থীকে সুপারিশ করা হয়েছে, তিনি সাক্ষাৎকারে তুলনামূলক ভালো করেছেন। তাঁদের দুজনের একাডেমিক ফলাফল কাছাকাছি। বোর্ডে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, সেই অনুযায়ীই সুপারিশ করা হয়েছে। বোর্ডে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা তাঁদেরই শিক্ষক। তাঁরা মতামত দিয়েছেন, আমিও পর্যবেক্ষণ করেছি। বোর্ড যাঁকে যোগ্য মনে করেছে, তাঁকেই সুপারিশ করা হয়েছে।’

মাকসুদ কামাল আরও বলেন, ‘একাডেমিক ফলাফল, সাক্ষাৎকারের পারফরম্যান্স ও প্রকাশনা—সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়ে থাকে। যদি শুধু ফলাফলই নিয়োগের একমাত্র বিবেচনা হতো, তাহলে বিভাগই বলত যে ফলাফলের ভিত্তিতেই নিয়োগ দিয়ে দেওয়া হোক। সাক্ষাৎকারের প্রয়োজন নেই। সাক্ষাৎকারে প্রশ্নের উত্তর কীভাবে দিচ্ছেন, একজন প্রার্থী শিক্ষক হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করতে পারছেন কি না, তাও বিবেচনায় নেওয়া হয়।’