চলে গেলেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত পদার্থ বিজ্ঞানী হারুন-অর-রশীদ

পদার্থবিজ্ঞানী ড. এ. এম. হারুন-অর-রশীদ
পদার্থবিজ্ঞানী ড. এ. এম. হারুন-অর-রশীদ  © সংগৃহীত

স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পদার্থবিজ্ঞানী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. এ. এম. হারুন-অর-রশীদ মারা গেছেন। 

বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতা নিয়ে ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। শনিবার (৯ অক্টোবর) সকালে সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই বিজ্ঞানী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন।

বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদের জানাজা শেষে মিরপুরের একটি কবরস্থানে দাফনের জন্য তার কফিন নিয়ে যাওয়া হয়।

মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

এক শোকবার্তায় উপাচার্য বলেন, অধ্যাপক ড. এ. এম. হারুন-অর-রশীদ ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পদার্থবিদ। তিনি ছিলেন আদর্শবান, দেশপ্রেমিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ সম্পন্ন একজন নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক ও গবেষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোস অধ্যাপক এই গুণী শিক্ষকের অসংখ্য গবেষণা প্রবন্ধ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান, বোস সেন্টার ফর এডভান্সড স্টাডিজ এন্ড রিসার্চের পরিচালক এবং ইউজিসি অধ্যাপকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অত্যন্ত সততা, দক্ষতা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। পদার্থ বিজ্ঞান শিক্ষা প্রসার ও গবেষণায় অসামান্য অবদানের জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

বিজ্ঞানী হারুন-অর-রশিদের জন্ম ১৯৩৩ সালের ১ মে বরিশালের নলছিটির বাহাদুরপুর গ্রামে। ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে পদার্থবিজ্ঞানে বিএসসি এবং সমন্বিতভাবে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের উপর সর্বোচ্চ নম্বরসহ ১৯৫৪ সালে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্র হিসেবে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজা কালীনারায়ণ বৃত্তি লাভ করেন।

১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন হারুন-অর-রশীদ। এরপর পিএইচডি ডিগ্রি নেন যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো ইউনিভার্সিটি থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে ১৯৭২ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন তিনি। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোস সেন্টারের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

নোবেলজয়ী পদার্থ বিজ্ঞানী আবদুস সালামের সঙ্গে গবেষণায় কাজ করেছেন অধ্যাপক হারুন। তিনিই একমাত্র বাংলাদেশি যিনি সর্বোচ্চ তিন বার নোবেল পুরস্কার মনোনয়ন কমিটির সদস্য (১৯৭২, ১৯৮৬, ১৯৯৩) ছিলেন। বিজ্ঞানে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ১৯৯১ সালে ‘একুশে পদক’ এবং ২০০৯ সালে ‘স্বাধীনতা পদকে’ ভূষিত করে। প্রথিতযশা এই বিজ্ঞানীর তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ওপর ইংরেজি ও বাংলায় পঞ্চাশটিরও বেশি বই রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ