রাবির ‘অবৈধ’ গণনিয়োগের হোতা সাবেক সেই ছাত্রলীগ নেতা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০২ জুন ২০২১, ০৯:৪৮ AM , আপডেট: ০২ জুন ২০২১, ০৯:৫৭ AM
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিতর্কিত গণনিয়োগকে কেন্দ্র করে অনেকেরই নাম উঠে আসছে। তার মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও এমএস এন্টারপ্রাইজের মালিক ইব্রাহীম হোসেন মুন। বর্তমানে তিনি যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তার একটি রেস্টুরেন্টও রয়েছে।
জানা গেছে, ক্যাম্পাসে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সময় নানা কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত একটি নাম ইব্রাহিম হোসেন মুন। গত ৬ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান তার শেষ কর্মদিবসে সরকারের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৩৭ জন এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়।
ওই দিন সন্ধ্যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে এর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ইব্রাহিম হোসেন মুনের নাম উঠে এসেছে।
আরো পড়ুন উপাচার্যের শেষদিনে রাবিতে গণনিয়োগ, অবৈধ বলছে মন্ত্রণালয়
জানা গেছে, ২০০৬ সালে ইব্রাহিম হোসেন মুনকে সভাপতি ও বর্তমান এমপি আয়েন উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ২০১০ সালে নতুন কমিটি ঘোষণা করলে নেতৃত্ব ছাড়তে হয় মুনকে। এরপর তিনি ক্যাম্পাসের একটি মার্কেটে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করেন। পরে ঠিকাদারি ও জমি কেনাবেচাসহ নানা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।
রাবির ‘বিতর্কিত’ ভিসি আবদুস সোবহানের প্রথম মেয়াদে ভর্তি নিয়ে বিতর্কে জড়ায় মুনের নাম। অভিযোগ রয়েছে, যোগ্যতা না থাকলেও তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজে (আইবিএস) ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে এমফিলে ভর্তি করা হয় মুনকে।
যদিও অভিযোগ তদন্তের পর ২০১৫ সালের ২৪ আগস্ট ২৩৮তম শিক্ষা পরিষদে তার ভর্তি বাতিলের সুপারিশ করে। এরই ভিত্তিতে সে বছরের ২৯ আগস্ট ৪৬১তম সিন্ডিকেটের সভায় তার ভর্তি বাতিলের বিষয়টি চূড়ান্ত অনুমোদন হয়।
এছাড়াও আইবিএস’র ফেলো থাকা অবস্থায় তার নামে বরাদ্দকৃত ফ্যামিলি স্যুট ‘সি’ বাসার বকেয়া পরিশোধ না করা, তার মালিকানাধীন রেস্টুরেন্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
আরো পড়ুন রাবির ১৪০ জনের গণনিয়োগ বাতিলের সুপারিশ ইউজিসির
সর্বশেষ, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের ‘অবৈধ’ গণনিয়োগের সঙ্গে জড়িয়েছে মুনের নাম। এ নিয়োগে রাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মুনের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা ছাত্রী হলের আবাসিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘অবৈধ’ গণনিয়োগ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে ৪ মে রাতে গোপন বৈঠকে বসেন উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান। আর বৈঠকটি হয় ইব্রাহিম হোসেন মুনের রেস্তোরাঁয়। বৈঠকের সমন্বয়ক ছিলেন মুন নিজেই। সেখানে কিভাবে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়, তা নিয়ে পরিকল্পনা করেন উপাচার্য।
বৈঠকে উপাচার্যের জামাতা ও আইবিএর শিক্ষক এ টি এম সাহেদ পারভেজ, ভাগ্নে ও উপরেজিস্ট্রার সাখাওয়াত হোসেন টুটুল, সদ্য নিয়োগ পাওয়া ছাত্র উপদেষ্টা তারেক নূর ও কয়েকজন ছাত্রনেতাও উপস্থিত ছিলেন। মুনও তাঁর কাছের লোকদের চাকরি দিতে চাপ প্রয়োগ করেন।
আরো পড়ুন রাবিতে এডহক নিয়োগের যোগদান স্থগিত
এদিকে ‘অবৈধ’ গণনিয়োগ প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত ৩০ মে চারজনের ব্যাংক হিসাব তলব করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তার মধ্যে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইব্রাহীম হোসেন এবং তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকার নাম রয়েছে। সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের ‘অবৈধ’ গণনিয়োগে সহযোগিতা করা এবং চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে ঘুষের অর্থ সংগ্রহে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে ওই দু’জনের নাম সামনে আসার পর এনবিআর এই উদ্যোগ নেয়।
এ বিষয়ে ইব্রাহিম হোসেন মুনের সঙ্গে মোবাইলে সাংবাদিকরা যোগাযোগের চেষ্ঠা করেও তাকে পাননি। তবে নোটিশ পাওয়ার বিষয়টি এর আগে স্বীকার করেছেন তিনি।সেখানে তাঁর এমএস এন্টারপ্রাইজের হিসাব চাওয়া হয়েছে।
ইব্রাহীম হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, তিনি ছয়-সাত বছর ঠিকাদারির কাজ করেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো সংক্রান্ত কাজেও তিনি নেই। কেউ হয়তো ষড়যন্ত্র করে বলেছে, সোবহানের নাম ভাঙিয়ে তাঁর প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটি কোটি টাকার কাজ করেছে।
আরো পড়ুন রাবির গণনিয়োগ, তদন্ত প্রতিবেদন ২৩ মে