ক্যাম্পাস ও হল খোলার দাবিতে ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে আজ মঙ্গলবার বিকেলে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) রাজু ভাষ্কর্যে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে মানববন্ধন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল-ক্যাম্পাস খুলে দেওয়াসহ চার দফা দাবি জানান। অন্য দাবিগুলো হলো অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ঢাবি শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন ও দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনা, ২৯মে’র পর ছুটি না বাড়ানো, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুরো ক্যাম্পাস সিসিটিভির আওতায় এনে নিয়মিত তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
মানববন্ধনে সঞ্চালনা করেন ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। ঢাবি সমাজকল্যাণ বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতেমা তাসনিম বলেন, ‘করোনার দোহাই দিয়ে এত দীর্ঘ সময় কোনো দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়নি। তাহলে কেন বাংলাদেশে এত সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা হলো? স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি গার্মেন্টসকর্মীরা কাজ করতে পারেন। যদি তাদের একজন লোকও মারা না যেতে পারে, তাহলে কিভাবে শিক্ষার্থীরা মারা যাবে? আমি বলতে চাই, সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা আরো সচেতন। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস করতে চাই। শিক্ষামন্ত্রী, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ও প্রক্টর মহোদয়ের কাছে এই রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দাবি জানাচ্ছি, আপনারা অবিলম্বে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিন। আপনারা যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে না দেন, হাফিজুরের মত যত শিক্ষার্থীর লাশ পড়বে এর দায় আপনাদের নিতে হবে।’
ফাতেমা তাসনিম আরও বলেন, ‘আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দিকে নজর দিন, শিক্ষার্থীদের দিকে নজর দিন। কোমলমতি শিশুরা ভিডিও গেমসে পাবজি থেকে শুরু করে কার্টুনের প্রতি আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে যাচ্ছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী যারা তাদের সামর্থ্য নেই, স্মার্টফোন দিয়ে পরীক্ষা দেয়া। আপনারা এ কেমন স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। করোনাকালীন সময়ে অনলাইন ক্লাস করতে নেটওয়ার্কের জন্য শিক্ষার্থীরা গাছের মাথায় উঠে দাঁড়িয়ে ছিল। আমরা গাছে উঠে পরীক্ষা দিব? সেটা সম্ভব না। আমি একজন নারী শিক্ষার্থী হয়ে আমার সীমাবদ্ধতা থেকে বলতে চাই, আমাদের পক্ষে ঢাকা শহরে থাকা খাওয়াসহ অবস্থান করা সম্ভব না। আমি বলতে চাই, আমাদের হল খুলে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।’
আরও পড়ুন: ডেন্টালের ভর্তি পরীক্ষা পেছানোর চিন্তা নেই মন্ত্রণালয়ের
প্রাণরসায়ণ বিভাগের শিক্ষার্থী মোয়াজ্জম হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। অনলাইন ক্লাসের নামে কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের সাথে প্রহসনমূলক আচরণ করেছে। অনলাইনে ক্লাস করতে ডিভাইস ও ডেটাপ্যাক দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তারা কথা রাখেনি। শিক্ষামন্ত্রী বারবার বন্ধের তারিখ পেছাচ্ছেন, কিন্তু দীর্ঘ ১৫ মাসেও শিক্ষামন্ত্রণালয় বা ইউজিসি মহামারিকালে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার কোনো নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারেনি। এটা তাদের চরম ব্যর্থতা। অপরদিকে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া সত্ত্বেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জাতীয় সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে আছেন। তারা নিজেরাও একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারেননি। অথচ দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের সব কার্যক্রম রীতিমতো চালাচ্ছে।’
এ ছাড়াও আরো বক্তব্য রাখেন দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ইলিয়াস হোসেন, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রিদয় হোসেন, আরবী বিভাগের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম নাফিসসহ আরো অনেকে। মানববন্ধন শেষে মিছিল নিয়ে ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে শ্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।
সেখানে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের আন্দোলন ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া পর্যন্ত চলবে। সবার প্রতি আহ্বান থাকবে নিজের ভবিষ্যৎ, নিরাপত্তা এবং সেশনজট নিরসনের দাবিতে আমাদের পরবর্তী কর্মসূচিগুলোতে অংশ নেবেন।
আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে থেকে ভিসি নিয়োগের দাবি জবি নীলদলের
আগামীকাল বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে সিদ্ধান্ত দেখে তারা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলেও জানান।
এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, যদি আবারো ছুটি বাড়িয়ে সেশনজট দীর্ঘায়িত করার পায়তারা করা হয় তাহলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।