রাবিতে ৫০৩ তম সিন্ডিকেটের নিয়োগ নিয়ে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্তদের প্রশ্ন
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ৫০৩ তম সিন্ডিকেটে ৩ জন কর্মকর্তাকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয়া হয়। যদি ওই সময় নিয়োগপ্রাপ্ত ৩ কর্মকর্তার চাকরি যদি বৈধ হয়, তবে গত ৬ জুন নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকরি কেন বৈধ হবে না- মর্মে প্রশ্ন তুলেছেন সদ্য চাকরিপ্রাপ্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
বুধবার (১৯ মে) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পিছনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয়ে কথা বলেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে তারা দাবি করেন, গত ১০ ডিসেম্বর-২০২০ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার পরও ১২ ডিসেম্বর ৩ জনকে স্থায়ী ও গত ১১ জানুয়ারি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকশন অফিসার পদে একজনকে মানবিক কারণে এডহক ভিত্তিতে নিয়ােগ দেওয়া হয়েছে। এসব নিয়োগ যদি বৈধ হয়, তাহলে আমাদের নিয়োগ কেন অবৈধ হবে?এছাড়া এডহক নিয়ােগ বন্ধ রাখতে ২০০৯ সালেও একই রকম নিষেধাজ্ঞা মন্ত্রণালয় থেকে এসেছিলাে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়ােজনে নিজ অধ্যাদেশ বলে এডহক নিয়ােগ প্রক্রিয়া চলমান রেখেছে বলেও দাবি করেন তারা।
আরও পড়ুন
রাবিতে টিকার আবেদনে এনআইডি’র ছবিও যুক্ত করতে হবে
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আবদুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাত শতাধিক পদ দীর্ঘ দিন যাবত শূন্য রয়েছে। আমরা উক্ত শূন্য পদের বিপরীতে নিয়ােগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে যোগাযােগ করে জীবন বৃত্তান্ত জমা দেই। কিন্তু বিশ্বব্যাপী মহামারী কলােনাভাইরাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিয়ােগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে পারেননি। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সােবহান গত মে মাসে ৫ তারিখে ১৯৭৩ সালের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ এর ১২(৫) ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে শূন্য পদের বিপরীতে আমাদেরকে এডহক ভিত্তিতে ছয় মাসের জন্য স্থায়ীভাবে নিয়োগ প্রদান করেন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে প্রাপ্ত নিয়োগপত্রের আলােকে ০৬/০৫/২০২১ তারিখে যােগদান করি।
তিনি আরো বলেন, 'গত ৬ মে আমাদের যােগদান প্রক্রিয়া চলাকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন এবং আমাদের নিয়ােগকে অবৈধ ও বিধিবহির্ভূত, আখ্যায়িত করে। যদিও ১৯৭৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ এর ১২(৫) ধারা মােতাবেক, এই নিয়ােগকে অবৈধ বলার কোনাে সুযােগ নেই। নিয়মানুযায়ী, এই নিয়ােগকে অবৈধ ঘােষণার আগে,৭৩ এর অধ্যাদেশ-এর উপরিউক্ত ধারা বাতিল করা উচিত ছিল বলে আমরা মনে করি।'
এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, 'দৈনন্দিন রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা স্যার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মাে. আব্দুস সালাম স্যারকে দিয়ে আমাদের যােগদানের চলমান প্রক্রিয়া গত ৮ মে স্থগিত ঘােষণা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। আমাদের জানামতে, নিয়মিত উপাচার্যের প্রদানকৃত নিয়ােগ, দৈনন্দিন রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য স্থগিত করতে পারেন না।'
এ সময় সম্মেলনে সদ্য চাকরিপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের প্রায় ৩৫ জন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, গত ৬ মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৩৭ জনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এডহক নিয়োগ দিলে ঐদিন রাতেই মন্ত্রণালয় তা অবৈধ ঘোষণা করে তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং গত ৮ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড আব্দুস সালাম সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নিয়োগ স্থগিত করা হয়।
উল্লেখ্য, বিদায়ী উপাচার্য এম আব্দুস সোবহানের দেয়া এসব নিয়োগে সজন প্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ আছে এবং অনেক অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় নিয়োগ স্থগিতের আদেশ দিয়েছিল মন্ত্রনালয়ের। এছাড়া সর্বশেষ নিয়োগের সাথে জড়িত সকলতে চিহ্নিত করতে তদন্ত করছে মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি।