ছাত্রলীগের ব্যানারে রাবির সাবেক ভিসির নিয়োগ বাণিজ্য

সদ্যবিদায়ী ভিসি এম আব্দুস সোবহান
সদ্যবিদায়ী ভিসি এম আব্দুস সোবহান  © ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সদ্যবিদায়ী ভিসি প্রফেসর এম আব্দুস সোবহানের দেওয়া ১৪১ জনের নিয়োগ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সর্বত্র চলছে আলোচনা সমালোচনা। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ব্যানারে তিনি এ ‘নিয়োগ বাণিজ্য’ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ৫ মে রাতে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কিছু নেতাকর্মীকে নিয়োগ দেওয়া হলেও সিংহভাগই নিয়োগ পেয়েছেন ছাত্রদল ও শিবির ক্যাডার বলে মন্তব্য করছেন সমালোচনাকারীরা।

প্রফেসর সোবহানের নিজের জেলা নাটোর এবং তার মেয়ে-জামাতার জেলা বগুড়ার লোকজনকে বেশি চাকরি দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসিপন্থি কিছু শিক্ষকের সন্তান ও আত্মীয়স্বজন নিয়োগ পেয়েছেন। এমন গণনিয়োগে রাবির ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে শিক্ষকরা মন্তব্য করেন। এ নিয়োগ নিয়ে তারা বলছেন, এভাবে লুকোচুরি করে গণহারে নিয়োগ দেওয়া নজিরবিহীন ঘটনা। এসব নিয়োগ নিয়ে বিতর্কের জেরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে। সবাই এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন।

তবে, বিদায়ী ভিসির হাতে নিয়োগ পাওয়াদের ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। এ বিষয়ে রাবির ভারপ্রাপ্ত ভিসি প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা বলেন, বিদায়ী ভিসি সোবহান সিনেটের ভোটে ভিসি প্যানেল থেকে নির্বাচিত ভিসি ছিলেন না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছিলেন পাঁচ বছরের জন্য। এ কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে চলা তার উচিত ছিল। তিনি সেটা করেননি। মন্ত্রণালয় সব ধরনের নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। সেটা লঙ্ঘন করেই তিনি গণনিয়োগ দিয়েছেন। এখন নিয়োগপ্রাপ্তরা কেউ যদি অফিস করতে শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়-এমন পরিস্থিতিতে তিনি কী করবেন-জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত ভিসি আরও বলেন, এ সুযোগ তিনি দিতে পারবেন না। কারণ শিক্ষা মন্ত্রণালয় জারি করা আদেশে এসব নিয়োগকে অবৈধ বলা হয়েছে। সুতরাং নিয়োগপ্রাপ্তরা অফিসে আসবেন অফিস করবেন-এ সুযোগ নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি সব পদক্ষেপ নেবেন। এর বাইরে নয়।  

এ বিতর্কিত নিয়োগের বিষয়ে রাবির সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু বলেন, ঠিক বিদায়ের প্রাক্কালে ভিসি সোবহান যেভাবে ঢালাও নিয়োগ দিয়েছেন তা কোনোভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-পদ্ধতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এর আগে সাবেক ভিসি ফারুকী ৫৪৪ জনকে গণনিয়োগ দিয়ে চরম বিতর্কিত হয়েছিলেন। এসব বিদায়ের আগেই করতে পারতেন প্রফেসর সোবহান। কিন্তু ঠিক বিদায়ের কয়েক ঘণ্টা আগে রেজিস্ট্রারকে বাইপাস করে এসব করেছেন। এর উদ্দেশ্য সৎ বলার কোনো অবকাশ নেই।

এদিকে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বর্তমান ও সাবেক নেতাকর্মীদের কয়েকজনের নাম নিয়োগ তালিকায় রয়েছে। অন্যদিকে ২৩ কর্মকর্তার পদে শিবির ও ছাত্রদল নেতাকর্মী ছাড়াও ভিসিপন্থি শিক্ষকদের ছেলেমেয়ে ও আত্মীয়স্বজন এবং বগুড়া ও নাটোর জেলার লোকরা নিয়োগ পেয়েছেন বেশি। ৮৫টি কর্মচারী পদের মধ্যে অনধিক ২৫ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী নিয়োগ পেয়েছেন। বাকিদের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার আশপাশের লোকজন নিয়োগ পেয়েছেন যারা একজন প্রোভিসিকে টাকা দিয়ে নিয়োগ নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে যে ৯ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন বিভাগে সেসব বিভাগের প্ল্যানিং কমিটিকে না জানিয়ে।

আরও দেখুন: রাবি উপাচার্যের শেষ দিনে নিয়োগ পেয়েছেন চার সাংবাদিক

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাবির রেজিস্ট্রার প্রফেসর আব্দুস সালাম বলেন, এসব নিয়োগ নিয়ে এখন কিছু বলা কঠিন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি করেছে। কমিটি খুব শিগগির রাজশাহীতে আসবে বলে শুনেছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী নির্দেশনা ছাড়া এখন তাদের বিশেষ কিছু করণীয় নেই। তিনি আরও বলেন, ১৪১ জন নিয়োগের প্রক্রিয়ায় ক্রটি রয়েছে। যেহেতু শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর ভিসিকে চিঠি দিয়ে সব ধরনের নিয়োগ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছিল। বিদায়ী ভিসি তা লঙ্ঘন করেই গণনিয়োগ দিয়েছেন। তিনি কিছু জানতে পারেননি। তাকে এড়িয়েই এসব করা হয়েছে একজন উপরেজিস্ট্রারকে দিয়ে।

প্রসঙ্গত, সদ্যবিদায়ী ভিসি এম আব্দুস সোবহান শেষ কার্যদিবসে ১৪১ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। পরে কড়া পুলিশ পাহারায় ক্যাম্পাস ছাড়েন তিনি।

আরও দেখুন: নিয়োগের কাঁঠাল ছাত্রলীগের মাথায় ভেঙেছেন রাবির বিদায়ী উপাচার্য