একজন আবদুস সোবহান ও রাবির দুই মেয়াদের উপাচার্য
- রায়হান ইসলাম
- প্রকাশ: ০৭ মে ২০২১, ০৪:৫১ PM , আপডেট: ০৭ মে ২০২১, ০৬:০০ PM
গতকাল ছিল ৬ মে (বৃহস্পতিবার)। পূর্ব দিগন্তের আবছা মেঘের প্রান্ত ভেদ করে সূর্যমামা যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চির সবুজ ক্যাম্পাসে উঁকি দিচ্ছে, ঠিক তখন ক্যাম্পাসজুড়ে চলমান বিতর্ক ও সমালোচনা নিয়েই উপাচার্য পদের ইতি টেনে বিদায় নিচ্ছেন উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান।
দ্বিতীয় মেয়াদে তাঁর উপাচার্যের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আলোচনা-সমালোচনায় তুঙ্গে অবস্থানে করছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। তাঁর আমলে শিক্ষা ও গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয় যেমন শ্রেষ্ঠত্বের খেতাব অর্জন করেছে, তেমনি বিভিন্ন সময়ে ঘটে চলা অনিয়ম-দুর্নীতির ফলে বিশ্ববিদ্যালয় সুনাম সুখ্যাতি হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ। উপাচার্যের পদে থেকে বারবার স্বজনপ্রীতি, অবৈধ নিয়োগ ও দুর্নীতির অভিযোগ তাঁকে করেছে বিতর্কিত। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ায় বিতর্কের মাঝেই বিদায় নিচ্ছেন তিনি।
কে এই আব্দুস সোবহান?
১৯৫৩ সালে নাটোরে জন্ম গ্রহণ করেন অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান। রাজশাহী বোর্ডের অধীনে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন তিনি। ১৯৭৪ সালে স্নাতক (বিএসসি) পাস করেন এবং ১৯৭৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেক্ট্রনিক বিভাগ থেকে এমএসসি পাস করেন।
পরবর্তী উচ্চশিক্ষার জন্য এম আব্দুস সোবহান অস্ট্রেলিয়ায় যান। তিনি অস্ট্রেলিয়ার নিউ-ক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পর্যায়ে গবেষণার জন্য বৃত্তি পান। ১৯৯২ সালে সেখান থেকে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। তাঁর পিএইচডির বিষয় ছিল সারফেস ফিজিক্স।
পড়ুন: দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছি: রাবির বিদায়ী ভিসি
১৯৭৯ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেক্ট্রনিক বিভাগের (তৎকালীন নাম) প্রভাষক পদে যোগ দেন। ১৯৯৭ সালে তাঁর অধ্যাপক হন। ২০০১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদ তথা হলের হাউজ টিউটর, সিনেট সদস্য, সিন্ডিকেট সদস্য এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আ. সোবহান।
অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান একমাত্র উপাচার্য, যিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয়বারের মতো উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। উপাচার্য হিসেবে তাঁর দায়িত্বের প্রথম মেয়াদকাল ছিল ২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এবং দ্বিতীয় মেয়াদের সময়কাল ছিল ২০১৭ সালের ৭ মে থেকে এ বছরের ৬ মে অর্থাৎ গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ ও ২৩তম উপাচার্য।
আলোচনা-সমালোচনায় উপাচার্য আব্দুস সোবহান
দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভিন্ন অর্জনে আলোচিত হলেও মেয়াদের শেষ পর্যায়ে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে বিতর্কিত হন এম আব্দুস সোবহান। তবে চার বছরের দায়িত্বকালে অবৈধ নিয়োগ কর্মকাণ্ডে সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত হয়েছেন তিনি। স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে নিয়োগ দিতে গিয়ে বরাবরই বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে।
বিষয়গুলো সকলের নজরে আসলে তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসতে থাকে। যেখানে ছিল নীতিমালা পরিবর্তন করে নিজ মেয়ে ও জামাতাকে নিয়োগ, রাষ্ট্রপতিকে অসত্য তথ্য দেওয়া, অন্যান্য নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ। ফলে গত বছরের শুরুর দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনিয়ম ও দুর্নীতি সংবলিত ৩০০ পৃষ্ঠার একটি অভিযোগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে (ইউজিসি) জমা দেন বিশ্বিবদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্তে নামে ইউজিসি। তদন্ত শেষে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ২৫টি অভিযোগের প্রমাণ পেলে তা প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির কার্যালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশসহ জমা দেয় ইউজিসির তদন্ত কমিটি। যেখানে ছিল ৩৬ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদন এবং ৭০০ পৃষ্ঠার সংযোজনী প্রতিবেদন।
এতে রাষ্ট্রপতিকে অসত্য তথ্য প্রদান ও অবসর গ্রহণের বিষয়ে বলা হয়। উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক আখতার ফারুককে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালনের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করে ২৪ জুন রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের অনুমতির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠান। চিঠিতে তিনি ২৯ জুন অবসরে যাওয়ার অনুমতির আবেদন করেন। উপাচার্য পদে সাময়িক শূন্যতা পূরণে ‘রাষ্ট্রপতির অনুমতি ছাড়াই’ এক দিনের জন্য বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. আখতার ফারুককে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য নিয়োগ দেন। যা ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের পরিপন্থী।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মেয়ে ও জামাতাকে নিয়োগ দিতে উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান ৪৭৫তম সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষক নিয়োগ-নীতিমালা পরিবর্তন করেন। এতে শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা কমানো হয়। আগের নীতিমালায় আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা ছিল সনাতন পদ্ধতিতে এসএসসি থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত চারটি স্তরেই প্রথম শ্রেণি।
আর গ্রেড পদ্ধতিতে এসএসসি ও এইচএসসিতে ন্যূনতম জিপিএ ৪.৫০, স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তরে ন্যূনতম সিজিপিএ ৩.৫০। একইসঙ্গে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তরে সংশ্লিষ্ট বিভাগের মেধাক্রম প্রথম থেকে সপ্তমের মধ্যে থাকতে হবে। কিন্তু সেই যোগ্যতা কমিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে সিজিপিএ ৩.২৫ করা হয় এবং মেধাক্রমে থাকার শর্তও তুলে দেওয়া হয়।
নিয়োগের যোগ্যতা শিথিলের পর উপাচার্যের মেয়ে সানজানা সোবহান ও জামাতা এটিএম শাহেদ পারভেজ শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। এর মধ্যে মার্কেটিং বিভাগ থেকে পাস করা সানজানা নিয়োগ পান ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে। আর শাহেদ নিয়োগ পান ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ)। মেয়ের মেধাক্রম ছিল ২১ এবং জামাতার ৬৭তম। আগের নীতিমালায় তারা নিয়োগের আবেদনই করতে পারতেন না।
অন্যদিকে পরিবর্তিত নীতিমালায় ‘কম যোগ্য’ শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনে জানানো হয়, নতুন নিয়োগ যোগ্যতায় উপাচার্যের মেয়ে, জামাতাসহ ৪৩ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উপাচার্যের মেয়ে ও জামাতাসহ অন্তত ৩৪ জন শিক্ষকেরই আগের নীতিমালায় আবেদন করার যোগ্যতা ছিল না। ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনে এই ৩৪ শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের পরামর্শ দেওয়া হয়।
নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তনের পর ২০১৮ সালে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগে চারজন শিক্ষক নিয়োগ হয়। যাদের মধ্যে তিনজনের আগের নীতিমালা অনুযায়ী আবেদন করার যোগ্যতা ছিল না। শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে নিয়োগ পাওয়া পাঁচজনের মধ্যে চারজন, ইইই বিভাগের চারজনের মধ্যে একজনের আগের নীতিমালায় আবেদন যোগ্যতা ছিল না।
এ ছাড়া আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি, পদার্থবিজ্ঞান, ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগ এবং ফলিত গণিত বিভাগে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অনেকেরই আগের নীতিমালায় আবেদন যোগ্যতা ছিল না।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতবছরের শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব নিয়োগ বন্ধ রাখার পাশাপাশি অন্যন্য আদেশ সংবলিত প্রায় ডজন খানেক চিঠি উপাচার্য বরাবর পাঠায় ইউসিজি। তবে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বরাবরই নাকচ করেছেন উপাচার্য।
পরবর্তীতে ইউজিসির নিষেধাজ্ঞার শর্তেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০৫তম সিন্ডিকেট সভায় উপাচার্য এম আব্দুস সোবহানের সভাপতিত্বে তাঁর জামাতা ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যান্ড অ্যাডমিনস্ট্রেশনের (আইবিএ) শিক্ষক এটিএম শাহেদ পারভেজসহ পাঁচ শিক্ষকের চাকরি স্থায়ী করা হয়। ফলে ইউজিসির নির্দেশনা অমান্য করেই মেয়ে জামাতার চাকরি স্থায়ী করণের প্রতিবাদ জানিয়ে তা বাতিলের দাবি জানায় প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ।
উপাচার্যের বাড়ি ভাড়া নিয়ে দুর্নীতি
উপাচার্য আবদুস সোবহান ২০১৭ সালের মে মাসে দায়িত্ব নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনে ওঠেন। এজন্য ২০১৩ সাল থেকে অধ্যাপক হিসেবে তাঁর নামে বরাদ্দ করা ডুপ্লেক্স বাড়িটি কাগজপত্রে ছেড়ে দিয়েছেন বলে দেখানো হলেও আসবাব রাখার জন্য প্রায় দেড় বছর দখলে রাখেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় বাড়ি ভাড়ার আয় থেকে বঞ্চিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ লাখ ৬১ হাজার ৬০০ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
তাছাড়া কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে তড়িঘড়ি ও পছন্দের লোককে টেন্ডার পাইয়ে দেওয়া এবং পুকুর খননের নামে ইজারাদারদের মাটি চুরির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদের হরিলুট ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে হরিলুটে সমর্থনের অভিযোগ তুলে তা বন্ধের দাবি জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। তবে পরবর্তীতে এ অভিযোগের জবাবে প্রশাসন জানায়, সময়ের মধ্যে টেন্ডারের কাজ সম্পন্ন দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সুতরাং প্রশাসন তাদের দায়িত্ব পালন করছে।
উল্লেখ্য, কৃষি প্রকল্পের টেন্ডার নেওয়া ইজারাদারদের বিরুদ্ধে শর্ত ভঙ্গ করে পুকুর খননের মাটি অবৈধভাবে বিক্রির অভিযোগ উঠলে প্রশাসনের তা বন্ধের নির্দেশ দেয়। তবে নিষেধাজ্ঞার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি চুরি বন্ধ হয়নি। এর পরে একপর্যায়ে মাটি চুরিরত অবস্থায় ট্রাক্টর উল্টে মিরাজ নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় এদিকে ইজারাদার নিজেরা একে অন্যের উপর দোষারোপ করে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন। অন্যদিকে মাটি চুরি থামাতে প্রশাসনের কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি।
সর্বশেষ ২ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ডাকা অর্থায়ন কমিটির সভায় বাধা দেয় ছাত্রলীগ। সভায় উপাচার্য শেষ সময়ে বড় রকমের দুর্নীতি করতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে উপাচার্য বাসভবন, সিনেট ও প্রশাসনিক ভবন তালাবদ্ধ করে রাখেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ফলে সভা স্থগিত করতে বাধ্য হন উপাচার্য।
এদিনই সংবাদ সম্মেলন করে প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ অভিযোগ করেন, উপাচার্য শেষ সময়ে সভা করে সব অবৈধ কাজের বৈধতা দিতে চান। এ সময় তারা সব সভা স্থগিত ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনের অপসারণ দাবি করে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং যেকোনো মূল্যে সভা বন্ধের ঘোষণা দেন।
শিক্ষকদের গুলি করে হত্যার হুমকি!
৪ মে উপাচার্যের পূর্বঘোষিত সিন্ডিকেট সভা নিয়ে ক্যাম্পাসে শুরু হয় লঙ্কাকাণ্ড। সকাল থেকেই উপাচার্য ভবন ঘিরে রাখেন চাকরি প্রত্যাশীরা। বাড়তে থাকে চাঞ্চল্য। সভা শুরুর আগে দুর্নীতিবিরোধী প্রগতিশীল শিক্ষকেরা উপাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে বাঁধা দেন তারা। ফলে বাকবিতন্ডা শুরুর একপর্যায়ে আকাশ নামের এক ব্যক্তি শিক্ষকদের গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়।
এমনকি শিক্ষকদের সাথে তাদের হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।। পরে শিক্ষকদের করা এক সংবাদ সম্মেলনে তারা, বহিরাগতদের দ্বারা তাদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগ তোলার পাশাপাশি দায়িত্বহীনতার অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের অপসারণ দাবি করেন। ক্যাম্পাসে এমন ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিন্ডিকেট সভা স্থগিত করতে বাধ্য হয় প্রশাসন।
মেয়াদের শেষ দিনে ক্যাম্পাস জুড়ে লঙ্কাকাণ্ড
৬ মে নিয়োগ বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে লঙ্কাকাণ্ড। দফায় দফায় সংঘর্ষ, পুলিশের লাঠিচার্জ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে৷ মেয়াদের শেষে উপাচার্য অ্যাডহক নিয়োগ দিচ্ছেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে চাকরিপ্রত্যাশী ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই উপাচার্যের বাসভবন অবস্থা করতে থাকেন।
কিন্তু মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এলে তাদের দু'গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যেই দুপুর ২টার দিকে পুলিশের পাহারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসভবন ত্যাগ করেন উপাচার্য। তবে বিদায়কালে অ্যাডহক নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে, পরে জানতে পেরেছেন বলে জানান তিনি।
উপাচার্যকে বিদায় জানাতে আসেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ!
৫ মে উপাচার্য ২০-৩০ মিনিটের জন্য নিজ কার্যালয়ে যান। সেখানেই কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তিনি বিদায় শুভেচ্ছা জানান। শেষ দিনে তিনি আর কার্যালয়ে যাননি। তাঁকে বিদায় শুভেচ্ছা জানাতেও কেউ বাসভবনের সামনে আসেননি। তিনি বের হয়ে যাওয়ার পরই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে, শেষ সময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী পদে ১৪১ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন। পরে অ্যাডহকের মাধ্যমে ৯ জন শিক্ষক, ২৩ জন কর্মকর্তা, ৮৫ জন নিম্নমান সহকারী এবং ২৪ জন সহায়ক কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বলে জানা যায়।
অবদান ও অর্জনে উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান
বিদায়কালে উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো, ভৌত অবকাঠামো, শিক্ষা-সংস্কৃতি, গবেষণা ও ক্রীড়াসহ সর্ববিষয়ে উন্নয়নের কথা জানান। কেননা, তিনিই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল আর্কাইভস প্রতিষ্ঠা, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছেন।
তাছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রযুক্তিনির্ভর অত্যাধুনিক ক্যাম্পাসে পরিণত করতে প্রণয়ন করেছেন ৫০ বছরের মেগা-প্রকল্প। এ ছাড়া তিনি শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালায় বঙ্গবন্ধু কর্নার এবং মুক্তিযুদ্ধ কর্নার স্থাপন করেছেন।
এম আব্দুস সোবহানের আমলে গবেষণায় শ্রেষ্ঠস্থান অর্জনের পাশাপাশি উল্লেখ্যযোগ্য অবস্থানে ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা কোপাস-এর জরিপে দেখা যায়, ২০১০ সালে গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ এবং ২০১৯ সালে সামগ্রিকভাবে গবেষণায় বাংলাদেশে প্রথম স্থান অর্জন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
২০২০ সালে বিশ্বের এক লাখ ৫৯ হাজার ৬১২ জন শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীর তালিকায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ২৮৪তম স্থান অর্জন করেন। ২০২১ সালে স্পেনের শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিমাগো ইনস্টিটিশন কর্তৃক প্রকাশিত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৪১২৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রাবি ১১তম স্থান অর্জন করেছে। (জরিপকাল ২০১৫-২০১৯)।