সংস্কারের পর কেমন রূপে ফিরবে টিএসসি?
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২১, ১১:০০ PM , আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২১, ১১:০৯ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬১ সালে। চলতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়টির শতবর্ষপূর্তী উপলক্ষে টিএসসির মূল স্থাপনা ঠিক রেখে নতুনভাবে সংস্কার করা হবে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গণপূর্ত অধিদপ্তরের তৈরি নতুন নকশার প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে। যদিও এর কাজ শুরু হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের পর।
এর আগে গণপূর্ত অধিদপ্তর পুরো টিএসসি ভেঙে নতুনভাবে করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু এই নিয়ে বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিলে সেই পরিকল্পনা বাদ দেয়া হয়।
এরপর কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় গণপূর্ত অধিদপ্তর মূল স্থাপনা ঠিক রেখে সংস্কারের নতুন নকশা তৈরি করে, যা উভয় পক্ষের বেশ কয়েকটি সভার মাধ্যমে গৃহীত হয়।
গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা মেডিকেল কলেজ, টিএসসি এবং শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরি সংস্কারের পরিকল্পনার কথা জানান। এসময় তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ল আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এবং আমরা টিএসসিকে আধুনিক ভাবে তৈরি করতে চাই।
দেখতে কেমন হবে নতুন টিএসসি ভবন?
নতুন খসড়া নকশা অনুযায়ী, টিএসসির মূল স্থাপনা ঠিক রেখে পূর্বের সুইমিং পুলের জায়গা দশতলা নতুন একটি ভবন তৈরি করা হবে।
টিএসসির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক সৈয়দ আলী আকবর বলেন, বর্তমান স্থাপনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে নতুন স্থাপনাটি তৈরি করা হবে। টিএসসি-ভিত্তিক সংগঠনগুলো জন্য আধুনিক প্রযুক্তিসহ আলাদা রুমের ব্যবস্থা, রিহার্সালের জন্য আলাদা জায়গা, ইনডোর খেলার সুবিধা, আলাদা ক্যাফেটেরিয়া, দু’টি অডিটোরিয়াম, ব্যায়ামাগার, শিক্ষকদের লাউঞ্জ, দুই-তলা গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থাসহ আরও নানান উন্নত সুবিধা এই ভবনটিতে রাখা হচ্ছে।
তিনি জানান, নতুন ভবনের প্রবেশ গেইট হবে টিএসসির পশ্চিম দিক দিয়ে। এছাড়া নির্মাণ কাজ শুরু হবে টিএসসির পেছন দিক থেকে, যেখানে পুরনো সুইমিং পুলের অবস্থান।
তিনি আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল শাখা এই নতুন নকশা বা কাজের সাথে জড়িত নয়। প্রধানমন্ত্রী যেমন নির্দেশনা দিবেন, সেইভাবে কাজ করবে গণপূর্ত অধিদপ্তর।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রধান স্থপতি মীর মনজুরুর রহমান বলেন, ঢাবির চাহিদামতো আমরা নতুন নির্মিতব্য এই ভবনে সকল সুবিধা যোগ করেছি। দু’টি সম্মেলন কক্ষ, লেকচার হলসহ অন্যান্য সুবিধা সম্বলিত নতুন ভবনের নকশায় সন্তুষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
তিনি জানান, পুরনো স্থাপনাটুকুতে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ করা হবে।
এর আগে গত বছরের ১৮ অক্টোবর টিএসসি পরিচালক ঢাবির প্রকৌশল বিভাগের কাছে চাহিদাপত্র জমা দেন, যা পরবর্তীতে গণপূর্ত অধিদপ্তরে পাঠানো হয়।
ঢাবির উপ-উপাচর্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, নতুন নকশা অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য। গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে এই নকশা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তার অনুমতি পাওয়ার পরপর ই কাজ শুরু করা হবে।
নতুন ভবন সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন মাহির কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক-সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের কেন্দ হলে টিএসসি। যখন এটি তৈরি করা হয়েছিল তখন শিক্ষার্থী ছিল বর্তমানের তুলনায় অনেক কম। বর্তমানে নতুন ভবন তৈরির পরিকল্পনাটি একটি মহৎ উদ্যোগ।
তবে টিএসসি বর্তমান সৌন্দর্য্য অক্ষুন্ন রাখার ব্যাপারে ঢাবি কর্তৃপক্ষকে সচেতন থাকার আহবান জানান মাহি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী এবং সমাজতান্ত্রিক বাম ছাত্র জোটের সভাপতি সালমান সিদিক্কি বলেন, টিএসসিতে আধুনিক সুযোগ সুবিধার প্রয়োজন রয়েছে। আমরা আধুনিকায়নের বিপক্ষে না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে খেয়াল রাখতে হবে যেন ঢাবির ইতিহাস এবং সৌন্দর্য বিনষ্ট না হয়।
এই বাম ছাত্র নেতা আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক সমস্যাসহ আরও বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। কর্তৃপক্ষের উচিৎ আগে সেসকল বিষয় নিয়ে কাজ করা।
এক নজরে টিএসসি
টিএসসিকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং আধুনিক স্থাপত্যশিল্পের অন্যতম নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করা। গ্রিক স্থপতি কনস্ট্যান্টিন ডক্সিয়াডেস ষাটের দশকের শুরুতে টিএসসির নকশা করেছিলেন। পরবর্তীতে ষাটের দশকের শেষ দিকে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের তথাকথিত উন্নয়নের দশকের (১৯৫৮-৬৮) অংশ হিসেবে এর নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়।
ডক্সিয়াডিস টিএসসির নকশা করার ক্ষেত্রে এ দেশের সংস্কৃতি ও আবহাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখেছিলেন। গম্বুজ আকৃতির এই টিএসসি কমপ্লেক্স সারা ঢাকা শহরের মধ্যেই এক অন্যন্য স্থাপনা হিসেবে বিবেচিত হয়। এখানেই প্রতিদিন হাজার হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
এর আগেও বেশ কয়েকবার টিএসসির সংস্কার কাজের উদ্যোগ নেয়া হলেও সমালোচনার কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে মূল স্থাপনা ঠিক রেখে টিএসসি সংস্কার ও নতুন ভবন নির্মাণ প্রকল্প এখনও আলোর মুখ দেখতে পায়নি।
সূত্র: ইউএনবি