‘ইতিহাস-ঐতিহ্যের পাঁজর ভেঙ্গে টিএসসি’র উন্নয়ন চাই না’
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২১, ০৮:০৫ PM , আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২১, ০৮:০৫ PM
‘ইতিহাস-ঐতিহ্যের পাঁজর ভেঙ্গে টিএসসি’র উন্নয়ন চাই না’ শীর্ষক ‘উন্মুক্ত আলোচনার আয়োজন করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) বিকাল তিনটায় টিএসসির উন্মুক্ত প্রান্তরে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
সংগঠনটির ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রগতি বর্মণ তমার সঞ্চালনায় এবং সভাপতি সালমান সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, শিশু ও শিক্ষা রক্ষা আন্দোলনের আহবায়ক রাখাল রাহা, সাবেক ছাত্রনেতা ও গল্পকার মাহমুদুল হক আরিফ, ইঞ্জিনিয়ারিং ও আর্কিটেক্টস ডেভেলপমেন্ট এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল্লামা আল রাজি, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ঢাকা মহানগর ইনচার্জ সুস্মিতা রায় সুপ্তি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজিব কান্তি রায় এবং ডাকসু আন্দোলনকারী ওয়ালিদ আশরাফ।
কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) ভেঙ্গে ফেলে সেখানে ২০ তলা ‘আধুনিক ভবন’ তৈরির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। কেমন হবে এর নকশা সে সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ কোনো ধারণাও দেওয়া হয়নি। এত বড় একটি সিদ্ধান্ত অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীজনসহ বিশেষজ্ঞদের কোন মতামত নেওয়া হয়নি। এমন সিদ্ধান্ত প্রশাসনের অগণতান্ত্রিক আচরণেরই পরিচায়ক। এ সম্পর্কে স্থপতিবিদদের অনেকেই তাঁদের মতামত গণমাধ্যমে জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য-টিএসসি’র স্থাপত্যরীতি ও গঠনশৈলী অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। ফলে ২০ তলা ভবন নির্মাণ নিঃসন্দেহে এর মূল অবকাঠামো নষ্ট ও জনপরিসরকে ধ্বংস করবে। এর মূল কাঠামোর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সর্বোচ্চ চারতলা ভবন এখানে নির্মাণ করা যেতে পারে।
সাবেক ছাত্রনেতা মাহমুদুল হক আরিফ বলেন, টিএসসি শুধুমাত্র কতগুলো ইঁটের স্থাপনা নয়। গ্রীক স্থপতিবিদ কনস্ট্যান্টিন ডক্সিয়াডিস টিএসসি’র নকশা দেন ১৯৬১ সালে এবং ১৯৬৪ সালে টিএসসির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এরপর থেকে টিএসসি যেকোনো সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। পাকিস্তান আমলে এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে টিএসসি’র অবদান গুরুত্বের সাথে স্মরণীয়।
ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, প্রশাসন আসলে কি চায় সেদিকে ইঙ্গিত করে বক্তারা বলেন, গত কয়েক বছরে সারা দেশে এবং একই সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানের জনপরিসরগুলোকে সংকুচিত করা হচ্ছে। মত বিনিময় ও চর্চার জায়গাগুলোকে ধ্বংস করা হচ্ছে। তাদের আশঙ্কা, প্রশাসন টিএসসি’র জনপরিসরকে সংকুচিত করে সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক পরিবেশকে নষ্ট করতে চায়। বহুতল ভবন তৈরীর মধ্য দিয়ে বাণিজ্যিক আদলে টিএসসিকে গড়ে তুলতে চায়। ছাত্র-শিক্ষকের স্বার্থে তা কতটুকু ব্যবহার হবে তা নিয়ে তারা সন্দিহান।
ইঞ্জিনিয়ার আল্লামা আল রাজি বলেন, প্রকৃতিকে ধ্বংস করে প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব না। বইমেলা, বৈশাখ উদযাপন থেকে শুরু করে যেকোনো সাংস্কৃতিক আয়োজনের কেন্দ্রে থাকে টিএসসি। তাই টিএসসি শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়। এর সাথে দেশের ইতিহাস-জাতীর লড়াইয়ের ইতিহাস জড়িত। ঐতিহাসিক ও সামাজিক গুরুত্বের তোয়াক্কা না করে টিএসসির বর্তমান অবকাঠামো ভেঙ্গে ফেলার বা বিকৃত করার বা এর জনপরিসরকে সংকুচিত করার সিদ্ধান্ত ইতিহাসকে মুছে ফেলার সামিল।