‘নিরুপায় হয়ে মামলা করেছে মেয়েটি’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এক ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ও হাসান আল মামুনসহ সংগঠনের ৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এবার অভিযোগ করেছেন সংগঠনটির সাবেক নেতা এ পিএম সুহেল। তার দাবি, পুরো ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়েছিল মেয়েটি। কিন্তু নুর-মামুনরা বারবার কালক্ষেপেণ করেছে। ফলে বাধ্য হয়েই তাকে এই পথ বেছে নিতে হয়েছে।

বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) এ পিএম সুহেলের বেশ কয়েকটি স্ট্যাটাস নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।

এ বিষয়ে জানতে বুধবার রাতে এ পিএম সুহেলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ভুক্তভোগী ছাত্রীর বিষয় নিয়ে অনেক সমালোচনা হচ্ছে। মেয়েটির চরিত্র নিয়েও অনেক কথা হচ্ছে। এই বিষয়গুলো সম্পর্কে সাধারণ মানুষদের সঠিক ধারণ দিতেই আমি স্ট্যাটাস দিয়েছি।

যে সংগঠনের জন্য মার খেয়ে দীর্ঘ সময় আইসিইউতে ছিলেন, সেই সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের বিপক্ষে কথা বলার কারণ জানতে চাইলে সুহেল জানান, কোটা সংস্কারের জন্য যখন আন্দোলন শুরু করেছিলাম তখন থেকেই আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলি। নুর-মামুনরা এখন পাবলিক সেন্টিমেন্ট নিয়ে বিষয়টিকে অন্যদিকে ঘোরাতে চাচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত দোষী তারাই। তারা বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়ে শুধু কালক্ষেপণ করছিল। মেয়েটি নিরুপায় হয়ে অবশেষে মামলা করে।

এর আগে বুধবার দুপুরে এক স্ট্যাটাসে সুহেল বলেন, ‘‘মামলাকারী ওই ছাত্রী শুরুতে যখন শুধুমাত্র ঢাবির কয়েকজনকে নিয়ে সমাধানে বসেছিল, সেখানে তাকে হুমকি বা অপমান না করলে সে ঢাবির বাইরে আমাদের কাউকে বিষয়টি জানাত না৷ সমাধান করলেও বিষয়টা এতদুর গড়াতো না।

ভুক্তভোগী ছাত্রী যখন ঢাবির নেতাকর্মীদের কাছে বিচার না পেয়ে উল্টো হয়রানির শিকার হয়, তখন সে ঢাবির বাইরে সংগঠনের নেতৃস্থানীয়দের জানায় (জুন-জুলাই ২০)। আমরা (শাকিল উজ্জামান, নীলা, জসিম, বক্কর, আমিনুর, মাসুদ মোন্নাফ, মধু, আরিফ, মোর্শেদ, ময়মনসিংহের শহিদুল ভাইসহ আরো কয়েকজন চ্যাটগ্রুপ খুলে সমাধানের চেষ্টা করলে নুর, হাসান আল মামুন, সাইফুলসহ অন্যরা আমাদেরকে ষড়যন্ত্রকারী বলে আখ্যা দেয়।

এরপরই হাসান আল মামুনকে বাঁচাতে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে শুধুমাত্র নাজমুল হাসান সোহাগের বিরুদ্ধে মামলা করার পরামর্শ দেয় সাইফুল। এসময় তারা নিজেরাই সোহাগের নামে আইসিটি আইনে একটা অভিযোগ দায়ের করে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে দেয়। এই অভিযোগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাহিদ আর আকরাম মিলে লিখে দেয়।’’

আরেক স্ট্যাটাসে সুহেল জানায়, ‘‘অভিযোগকারী মেয়েটি ছাত্রলীগ বা অন্য কোন রাজনৈতিক সংগঠনের নয় ৷ সে আমাদের ছাত্র অধিকার পরিষদেরই একনিষ্ঠ একজন শুভাকাঙ্ক্ষী। তার হাতের রান্না খায়নি এমন খুব কম মানুষ আছে আমাদের সেন্ট্রাল কমিটিতে৷’’

প্রসঙ্গত, গত সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কোতওয়ালী থানায় নাজমুলকে প্রধান আসামী করে দ্বিতীয় মামলাটি করা হয়। এতে নুরুল হক নুরসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। তার আগে গত রোববার বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ, সহায়তা ও হুমকির অভিযোগে নুরসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় প্রথম মামলাটি করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ইসলামিক স্টাডিজ পড়ুয়া এক ছাত্রী ওই মামলা করেন।ওই ছাত্রীই কোতোওয়ালী থানার মামলাটিও করেছেন বলে জানা গেছে। তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ছাত্রী। লালবাগ থানার মামলার বর্ণনায় ওই ছাত্রী হাসান আল মামুনের সঙ্গে প্রেম ও প্রণয়ের কথা জানিয়ে বিয়ে নিয়ে টালবাহানার অভিযোগ তুলেছেন।

এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক নাজমুল হাসান, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. নাজমুল হুদা ও মো. আবদুল্লাহ হিল বাকী। একই তরুণীর করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার মূল আসামি পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক নাজমুল হাসান।

আর তিন নম্বর আসামি নুরুল হক নুর। বাকিরা হলেন আহবায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহবায়ক মো. সাইফুল ইসলাম, মো. নাজমুল হুদা ও মো. আবদুল্লাহ হিল বাকী।


সর্বশেষ সংবাদ