দুই জনের রুমে ৪, চার জনের রুমে ৮— হল খুলতে ঢাবির স্বাস্থ্যবিধি

  © ফাইল ফটো

করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ এই ছুটি আরও একদফা বাড়িয়ে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত করা হয়েছে। এরমধ্যেও কিছু মানুষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি তুলেছেন। দাবি উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ারও।

তারা বলছেন, সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, শিল্প-কারখানা, গণপরিবহন সবকিছু খুলে দেওয়া গেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে সমস্যা কোথায়। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হলে কীভাবে সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে তা নিয়ে মিলছে না সদুত্তর।

এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস চালু রয়েছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হলে নীতি কী হবে সে বিষয়ে কাজ শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, ডিন, হলের প্রাধ্যক্ষ, প্রক্টরিয়াল টিম ও ছাত্র-সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সভা করছেন।

এছাড়া সর্বশেষ প্রভোস্ট কমিটির সভায় বিশ্ববিদ্যালয় খোলার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হেয়েছে। সে মোতাবেক খসড়া নির্দেশনা তৈরি করা হয়েছে। এ নির্দেশনা অমান্য করলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা-পরিপন্থী কাজ হিসেবে গণ্য করা হবে বলে জানা গেছে।

প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির এবং প্রক্টর ও কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি সংশ্লিষ্টদের কাছে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির বলেন, নির্দেশনাগুলোর খসড়া করা হয়েছে, চূড়ান্ত করা হয়নি। যখন চূড়ান্ত হবে তখন উপাচার্য সংবাদ সম্মেলন করে জানাবেন বলে জানান তিনি।

খসড়া নির্দেশনায় বলা হয়েছে, হলের কোনো কক্ষের মেঝেতে শোয়া যাবে না। এছাড়া দুই সিটের কক্ষে সর্বোচ্চ চার জন এবং চার সিটের কক্ষে সর্বোচ্চ আট জনের বেশি শিক্ষার্থী থাকতে পারবেন না। বহিরাগত কাউকে কক্ষে অবস্থান করতে দেওয়া যাবে না। কক্ষের বাইরে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে এবং কক্ষ ও কক্ষের বাইরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

হলের ডাইনিং, ক্যান্টিন, রিডিংরুম, অডিটোরিয়াম, মেস, দোকান, সেলুন, টিভি রুম, অতিথি কক্ষ, পাঠাগার, মসজিদ এবং উপসনালয়ে ভিড় করা যাবে না। দলবেধেঁ বা একা বেড়াতে ও ঘুরতে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া সভা-সমাবেশ, রেস্তোরা ও গণপরিবহন যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।

স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রতিটি কাজের পূর্বে ও পরে সাবান দিয়ে হাত-মুখ ভালোভাবে ধুতে হবে। হাত না ধুয়ে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা যাবে না। এছাড়া হ্যান্ডশেক ও আলিঙ্গন থেকে বিরত থাকতে হবে। যেখানে-সেখানে কফ ও থুথু ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে।হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় কনুই এর ভাঁজে বা টিস্যু দিয়ে নাক ও মুখ ঢাকতে হবে।

এছাড়া সুষম খাবার খেতে হবে এবং পানি পান করতে হবে; কৃত্রিম খাবার পরিহার করতে হবে। নিয়মতান্ত্রিক ও সুশৃঙ্খল জীবন-যাপন করতে হবে। অধিক রাত পর্যন্ত জাগা যাবে না; পরিমিত বিশ্রাম নিতে হবে। খেলাধুলা ও সহশিক্ষা কাজে অধিক মনোনিবেশ করতে হবে। এছাড় প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শরীরচর্চা ও স্বেচ্ছা সেবামূলক কাজ করতে হবে।

পাশাপাশি কোনো শিক্ষার্থীর অসুখ-বিসুখ থাকলে আগেই হল প্রশাসনকে জানাতে হবে। অসুস্থ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কোনো শিক্ষার্থীর করোনা উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত সেল্‌ফ কোয়ারেন্টিনে যেতে হবে।

এ খসড়া নির্দেশনার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও প্রভোস্ট কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, করোনা সংক্রমণের ঝুকি থাকায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাকে অবশ্যই প্রাধান্য দিতে হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খোলা হলে শিক্ষার্থীদের এই নির্দেশনা মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে বলে তিনি জানান।

এদিকে যখন হল খোলা হবে তখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং বিজ্ঞানসম্মত উপায়েই খোলা হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কীভাবে আবাসিক হলগুলো খোলা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

কবে নাগাদ হল খোলা হবে? এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সামগ্রিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তবে যখন খোলা হবে তখন স্বাস্থ্যবিধি ও বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে খোলা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ