ইমাম হোসাইনকে মিস করছেন ভাই ইমাম হাসান, প্রেমিকার ফাঁসি দাবি

ইমামের ফেসবুক থেকে
ইমামের ফেসবুক থেকে  © ফাইল ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইমাম হোসাইনের আত্মহত্যার নিয়ে আলোচনা থামছে না। শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। গত সোমবার সকালে বরিশালের উজিরপুর থানার গাজিরপাড় গ্রামের নিজ বাড়িতে ফ্যানের সঙ্গে আত্মহত্যা করেন তিনি।

এদিকে আত্মহত্যার জন্য শুরু থেকে ইমামের প্রেমিকাকে দায়ী করে আসছিলেন তার সহপাঠীরা। বৃহস্পতিবার তাতে যোগ হলেন তার ভাই (যমজ) মো. ইমাম হাসান। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবারকে যারা চেনে, তারা কেউই ভাবতে পারেনি যে আমার ভাই আত্মহত্যা করবে। কিন্তু আমার ভাই আত্মহত্যা করেছে। আমি চাই, ওই মেয়ের ফাঁসি হোক।’

এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জানিয়ে ইমাম হাসান বলেন, ‘মামলা অবশ্যই করা হবে। আগে বাবা-মা একটু স্বাভাবিক হোক, তারা কান্নাকাটি করছে।’ তিনি বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে অনেক স্মৃতি। ঈদের আগেও কত স্মৃতি। একসাথে খেয়েছি, ঘুমিয়েছি। তাকে মিস করছি, সে আমার কলিজার আপন ভাই।’

ঢাকায় পলিটেকনিকে অধ্যয়নরত ইমাম হাসান বলেন, ‘বাবা-মা দুজনেরই অনেক আশা ছিল ভাই-বোনদের নিয়ে। বাবার স্বপ্ন ছিল সবাই ভালো কিছু হবে। যেদিন বাইরে যায়, আমি সেদিন চুম্বন দিয়েছিলাম ভাইকে। কিন্তু সেটাই যে শেষ চুম্বন হবে ভাবতে পারিনি।’

তিনি বলেন, ‘ভাইকে অনেক বুঝিয়েছি। কিন্তু মেয়েটার প্রতি এত মায়া জন্মেছে যে, ছাড়তে পারেনি। আমরা শুনেছিলাম, ছয় মাস আগেই সম্পর্কটা ভেঙে গেছে। মেয়েকে অনেক বুঝিয়েছে, কিন্তু সে জবাব দেয়নি। তাদের সম্পর্কের কথা পরিবারের সবাই জানে। মেয়েটির পরিবারের পক্ষ থেকেও কেউ যোগাযোগ করেনি।’

ইমামের আত্মহত্যা ও তার ভাইয়ের বিচারের দাবি চাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহবুব কায়সার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ইমাম হোসাইন বেশ কয়েকদিন আগে ফেসবুকে একাধিক হতাশামূলক পোস্ট দিয়েছে। কিন্তু তার পেছনে কোন কন্টেন্ট আছে কিনা, জানি না। তবে এতটুকু বলতে পারি, প্রত্যেকে তার নিজের জীবনকে ভালোবাসে, নিজেকে ভালোবাসে। কিন্তু আমরা দেখি নিজেকে ভালোবাসলেও নিজের উন্নয়নের জন্য অনেকে কাজ করে না। তাহলে এটা তো আর প্রকৃত নিজের জীবনকে ভালোবাসা হলো না। তেমনি সে নিজের জীবন তুচ্ছ ভেবে এ কাজটি করেছে। সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে তার একাধিক কারণ রয়েছে।

তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ড হলে তো আইনের আশ্রয় নেওয়া যায়। আর এটা তো একটি আত্মহত্যা। তবে এই বিষয়টি (আত্মহত্যা) নিয়ে বাংলাদেশে আইন রয়েছে তা খুব একটা শক্তিশালী নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আত্মহত্যার মতো যে ঘটনা ঘটেছে তার সামাজিক কারণগুলো খতিয়ে দেখা উচিত। খতিয়ে দেখতে গিয়ে যদি আইনের কোন বিষয় চলে আসে, তাহলে সে বিষয় নিয়ে আইনের আশ্রয় নেওয়া যেতে পারে। তবে সরাসরি নির্দিষ্ট কোন মেয়েকে দায়ী করা সর্বোচ্চ শাস্তি চাওয়াটা সম্পূর্ণ অনৈতিক কাজ। বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থা ও বিচার অনুযায়ী পরিবারের এ দাবি কতটুকু হালে পানি পাবে, তা আমার জানা নেই। তবে এই ধরণের আইন খুব একটা শক্তিশালী নয়। এবং পরিবারের দাবিটাও অযৌক্তিক।

জানা গেছে, প্রেমঘটিত কারণে হতাশা থেকেই ওই ছাত্র আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয়। সাম্প্রতিক সময়ে ওই ছাত্রের ফেসবুক পোস্ট এই ঘটনার ইঙ্গিত করে। তাছাড়া নিহতের সহপাঠী ও স্বজনরা জানিয়েছেন, এ ঘটনায় সে (ইমাম) মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। সবাই তাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু অবশেষে সে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয়।

জানা গেছে, ইমাম হোসাইনের সাথে রাজধানীর ইডেন কলেজের এক ছাত্রীর প্রেমের সর্ম্পক ছিল। তবে বিষয়টি ওই মেয়ের পরিবার মেনে না নেওয়াতে ইমামের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এরপর ইমাম মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল।

মৃত্যুর আগে ঢাবির ওই ছাত্রের ফেসবুকের কাভার ফটো ছিল ‘তোমাকে পাবো পাবো বলেই আত্মহত্যার তারিখটা পিছিয়ে দেই।’ আর প্রোফাইলে ছিল- ‘সিলিংয়ে ঝুলে গেলো সত্তা, নাম দিলে তার আত্মহত্যা।’ 

এদিকে আত্মহত্যার আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছিলেন ঢাবির ওই ছাত্র। যা নিয়ে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। ওই পোস্টে শুধু ‘আল-বিদা’ শব্দটি লিখেছিলেন ওই ছাত্র। যদিও ওই পোস্ট দেয়ার একদিন পর আত্মহত্যা করলেন তিনি। এর আগে দেয়া এক পোস্টে ইমাম লিখেছিলেন, ‘বিশ্ব-সংসার তন্ন-তন্ন করে খুঁজে এনেছি একশো আটটি নীলপদ্ম। তবুও কেউ কথা রাখেনি।’


সর্বশেষ সংবাদ