২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:১১

‎ছুটিতেও চাকসুর প্রচারণা, ইশতেহারে শিক্ষার্থীদের মন জয়ের চেষ্টা প্রার্থীর

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন চাকসু নির্বাচনের প্রার্থীদের  © টিডিসি ফটো

‎দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন। গত বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরপরই প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন ছাত্রশিবির-ছাত্রদলসহ বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা। ‎হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজার কারণে পাঁচ দিনের ছুটি থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়। তবে শুক্রবার শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় ইতোমধ্যে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কম থাকলেও থেমে নেই প্রার্থীদের প্রচার। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থান, শাটল ট্রেন, হল, মসজিদসহ সবজায়গায় প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। 

‎শুক্রবার জুমার নামাজের পর প্রার্থীদের কুশল বিনিময়সহ প্রচারণা করতে দেখা গেছে। আজও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান ও শহরে প্রচারণা চালাবে প্যানেলগুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, বিজ্ঞান অনুষদ জামে মসজিদ ও জিরো পয়েন্ট জামে মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রার্থী ও ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এছাড়া শাটল ট্রেনের প্রতিটি বগিতে উঠে প্রচারণা চালিয়েছেন প্রার্থীরা। আগের দিন নামাজ শেষে, ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী সাঈদ বিন হাবিব ও শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন একে অন্যের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে দেখা গেছে।

আগামী ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের বহুল আকাঙ্ক্ষিত চাকসু নির্বাচন। কেন্দ্রীয় এবং হল সংসদে সর্বমোট প্রার্থী হয়েছেন ৯০৮ জন। কেন্দ্রীয় সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ৪১৫ জন এবং হল সংসদে অংশ নিচ্ছেন ৪৯৩ জন। নির্বাচনে ২৭ হাজার ৬৩৪ জন ভোট দেবেন।

‎‎আনুষ্ঠানিক প্রচারণার দ্বিতীয় দিনে কেমন সাড়া পাচ্ছে জানতে চাইলে ছাত্রদল সমর্থিত সহ-সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৫ বছর চাকসু নির্বাচন হচ্ছে। তাই নির্বাচন নিয়ে ক্যাম্পাসের সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে কৌতুহল রয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যথেষ্ট সাড়া পাচ্ছি।’

‎‎শিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ইব্রাহিম রনি বলেন, ‘ছুটি হলেও বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ও শহরে রয়েছে। কেননা এখন বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা চলছে, তাই তেমন কেউই বাড়িতে যাননি। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আমরা ভালো রেসপন্স পাচ্ছি। আশা করি তারা আমাদের ওপর আস্থা রাখবে।’

‎‎ছাত্রদল-শিবির ছাড়াও অন্যান্য প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রচারণা চালিয়েছেন। ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’র ভিপি প্রার্থী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে সব শিক্ষার্থীর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছি। আশা করি, আমাদের পাশে থাকবে। কেননা আমরা কোনো দলের না, তাদের হয়েই লড়তে যাচ্ছি।’

‎‎প্রার্থীরা দাবি করেন, তারা নির্বাচিত হলে শুধুই শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করতে চান। দলীয় কোনো প্রার্থীরা নির্বাচিত হলে তারা দলের কথা মতো কাজ করবেন বলেও জানান তাঁরা। 

‎শিবির প্যানেলের ইশতেহারে প্রাধান্য নিরাপদ ক্যাম্পাসসহ ৫ বিষয়
‎প্রচারণায় শিক্ষার্থীদের মন জয় করতে নানা অঙ্গীকার ব্যক্ত করছেন প্রার্থীরা। ছাত্রশিবিরের প্যানেলের ইশতেহারে নিরাপদ ক্যাম্পাসসহ পাঁচটি বিষয় প্রাধান্য পাবে বলে জানিয়েছেন প্যানেলটির ভিপি প্রার্থী ইব্রাহিম রনি। ‎তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে আমাদের ইশতেহার সাজানো হচ্ছে। সেই হিসেবে নিরাপদ ক্যাম্পাস, শতভাগ আবাসন, যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নয়ন, উন্নত চিকিৎসা সেবা এবং টিএসসি নির্মাণ—এই প্রধান পাঁচটি বিষয়কে সামনে রেখেই আমরা কাজ করব। আমরা নির্বাচিত হলে কোনো সংগঠনকে নয় শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট নিয়ে কাজ করব।’

আরও পড়ুন: কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন ১০৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর, অন্য প্রতিষ্ঠানে কত

‎‎শিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক পদপ্রার্থী ও জুলাই আন্দোলনে ছাত্রলীগের হাতে প্রথম নির্যাতনের শিকার মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘চাকসু শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের মাধ্যম। তাই জুলাই আন্দোলনের মতো শিক্ষার্থীদের পাশে কাজ করতে চাকসু নির্বাচনে এসেছি। শিক্ষার্থীরা আমাদেরকে সাদরে গ্রহণ করছে। ইনশাআল্লাহ, আমরা বিজয়ী হব।’

‎‎শিক্ষার্থীদের ভাবনায় ছাত্রদলের ইশতেহার
‎‎শিক্ষার্থীরা যেসব চিন্তা করে, সেগুলোই ছাত্রদল প্যানেলের ইশতেহার বলে জানিয়েছেন ছাত্রদল প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মো. শাফায়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমরা কাজ করব। এছাড়া চট্টগ্রামের যেসব হাসপাতাল, শপিং মল, দোকান আছে, তাদের সাথে আমরা চুক্তি করব শিক্ষার্থীদের কল্যাণের জন্য। উচ্চশিক্ষার জন্য যেসব শিক্ষার্থী বিদেশে যেতে চায়, আমরা তাদের আর্থিক সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।’

‎‎জয়ের ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী, জানতে চাইলে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় বলেন, ‘আমরা নারী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যথেষ্ট সাড়া পাচ্ছি। আশাকরি শিক্ষার্থীরা আমাদের পাশে থাকবে।’

‎‎চাকসুতে প্রথম ১৭ দফার ইশতেহার ইনসিয়াত বিপ্লবের
‎চাকসু নির্বাচনে প্রথম ইশতেহার ঘোষণা করেছে শাখা বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব স্টুডেন্ট ফ্রন্ট সমর্থিত ‘রেভ্যুলেশন ফর স্টেট অব হিউম্যানিটি’ প্যানেল। ‎শুক্রবার দুপুরে তারা চাকসু ভবনের সামনে ১৭ দফা ইশেতহার ঘোষণা করে। এতে তারা দলীয় আধিপত্য, জবরদখল ও দলীয় সংঘাতমুক্ত ক্যাম্পাস, মুক্ত জ্ঞান চর্চার ও স্বাধীন জীবন বিকাশের শান্তিপূর্ণ নিরাপদ ক্যাম্পাস, আবাসন সংকট নিরসন, পরিবহন সংকট সমাধান প্রভৃতির ওপর অধিক প্রাধান্য দেন।

‎‎উল্লেখ্য, আগামী ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের বহুল আকাঙ্ক্ষিত চাকসু নির্বাচন। কেন্দ্রীয় এবং হল সংসদে সর্বমোট প্রার্থী হয়েছেন ৯০৮ জন। কেন্দ্রীয় সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ৪১৫ জন এবং হল সংসদে অংশ নিচ্ছেন ৪৯৩ জন। নির্বাচনে ২৭ হাজার ৬৩৪ জন ভোট দেবেন।