আচরণবিধি লঙ্ঘন, সাইবার বুলিংসহ নানান অভিযোগ—তদন্ত কমিটি প্রশাসনের
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছে সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট। সোমবার (২৫ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বরাবর এ স্মারকলিপিটি দিয়েছে প্যানেলটি।
এর পাশাপাশি ব্যানার প্রদর্শন, বিভিন্ন হলে পোস্টারিং, বহিরাগত সমাগম এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নারী প্রার্থীদের হেয় প্রতিপন্ন করে সোশ্যাল মিডিয়ায় অসম্মানজনক মন্তব্য ও বুলিংয়ের অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এসব ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো ব্যস্ত সময় পার করছে। অনেকে বহিরাগতদের প্রবেশের সুযোগ করে দিয়ে ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অনেক প্রার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন। কেউবা আবার শিক্ষার্থীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। অনেকের বিরুদ্ধে আবার নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগও উঠেছে।
এছাড়া জাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও আবাসিক হলগুলোয় ব্যানার ও পোস্টার লাগানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একটি ছাত্র সংগঠনকে জড়িয়ে উস্কানিমূলক শব্দচয়ন সম্বলিত পোস্টার লাগিয়ে ক্যাম্পাসে সহবস্থান বিনষ্ট এবং ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহীদ রফিক জব্বার হলের তৃতীয় বর্ষের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘জাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে সবার ধৈর্য্যশীল আচরণ করা উচিত ছিল। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি বিশ্ববিদ্যালয়কে উত্যপ্ত করার জন্যই উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি হত্যার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে, যা মূলত নির্বাচনি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে বাধার সম্মুখীন করবে।’
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ওয়াসিম আহমেদ অনিক বলেন, ‘ক্যাম্পাসে পোস্টারিংয়ের ব্যাপারে আমি অবগত নই। আমি জেনে পরবতীতে জানাতে পারব। হলের মিটিংয়ের প্রচারণা আমরা করছি না। অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলো হলে হলে প্রচারণা চালাচ্ছেন বলেই শুনেছি।’
জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন পদে বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তারা সাইবার বুলিং, সামাজিক হেনস্তা, ব্যক্তিগত আক্রমণ ও ট্যাগিংয়ের শিকার হতে হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
নারী শিক্ষার্থীরা জানান, নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীরা নির্বাচনের পরিবেশকে আরও প্রতিযোগিতামূলক ও উৎসবমুখর করতে ভূমিকা রাখে। কিন্তু অনবরত তাদের বিরুদ্ধে সাইবার বুলিং, সামাজিক হেনস্তা ও ট্যাগিং করা হয়, যা নির্বাচনি পরিবেশকে হুমকির সম্মুখীন করে।
প্রীতিলতা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান সারা বলেন, ‘জাকসু নির্বাচনে আমার পরিচিত কয়েকজন আপু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কিন্তু তারা অনবরত হুমকি ও সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। এতে করে আমরা যারা আপুর জন্য কাজ করছি সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাই।’
ছাত্রশিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট প্যানেল থেকে এজিএস (ছাত্রী) প্রার্থী আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা বলেন, ‘নারীদের নেতৃত্বে না আসার প্রধান কারণ আমাদের সমাজ ব্যবস্থা। কোনো নারী যখন নেতৃত্বে আসতে চায়, তখন সাইবার বুলিং, ট্যাগিং, ব্যাশিংয়ের শিকার হয়। চরিত্র তুলে কথা বলা হয়। ইসলামী মতাদর্শের হলে ছাত্রীসংস্থার বলা হয়, আর মুক্তমনা হলে শাহাবাগী গোসল কর বলা হয়৷’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন একটি গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এখানে সকল ধর্ম, মত-পথের মানুষ অংশগ্রহণ করবে এমনটিই হওয়া উচিত। কিন্তু কাউকে যখন হেনস্তা করা হয়, বুলিং করা হয় তখন আসলে নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্নিত হয়, আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এটি কারো কাম্য নয়।’
আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে সেনাবাহিনী
জাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে বহিরাগতদের আনাগোনা বৃদ্ধির পাশাপাশি নারী প্রার্থীরা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন এবং আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশকে বিনষ্ট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক প্রার্থী। এসবের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম রাশিদুল আলম বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’।
প্যানেলের জিএস প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘ক্যাম্পাসে জাকসু নির্বাচনের সুস্থ আমেজকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে অনেকের দুরভিসন্ধিমূলক আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। তারা মীমাংসিত কিছু বিষয়কে সামনে এনে নির্বাচনী পরিবেশকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার নেতিবাচক উদ্দেশ্যের ব্যাপারে আমরা উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করছি। একইসাথে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ক্যাম্পাসে পোস্টারিংয়ের ব্যাপার প্রশাসন আমলে নেবে বলে আশা করছি।’
এ বিষয়ে জাকসু নির্বাচন কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের নারী শিক্ষার্থীরা সামাজিক হেনস্তা এবং সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে, এটা আমরা অবগত হয়েছি। আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্বের সহিত বিষয়টি দেখছি। একটি প্যানেল থেকে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। আমরা একটা তদন্ত কমিটি করেছি। তদন্ত সাপেক্ষে আমরা খুব দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাথেও কথা বলছি। যেসব ফেসবুক আইডি বা পেজ থেকে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারব বলে আশা করছি।’