সাম্য হত্যার তদন্ত প্রভাবিত করার চেষ্টা হচ্ছে, দাবি শিক্ষার্থীদের
“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার মূল হোতা এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। পুলিশ প্রশাসনের হাতে লজিস্টিক, তথ্যপ্রযুক্তি, জনবল সবই রয়েছে। তারপরও তদন্তে অগ্রগতি নেই, মূল আসামির খোঁজ নেই, স্বচ্ছতা নেই। এর অর্থ একটাই- এই তদন্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে”-এমন দাবি জানিয়েছেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা।
আজ সোমবার (১৯ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে ‘সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’- এর ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তোলেন তারা। সাম্য হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারের দাবিতে, বিচারকার্যে প্রশাসনিক অসংগতি ও গাফিলতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের ব্যর্থতা, দেশজুড়ে নাগরিক নিরাপত্তার বেহাল দশা এবং নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলার দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আবিদুর রহমান মিশু, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ইসরাত জাহান ইমু, অর্থনীতি বিভাগের মোহাম্মদ মুস্তাকিম এবং থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স বিভাগ রক্তবীজ অর্ক।
লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, ঘটনার পর পাঁচ দিন পর্যন্ত আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুরে গড়িমসি করা হয়েছে। একটি নৃশংস খুনের ঘটনায় যেখানে অবিলম্বে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালানো উচিত ছিল, সেখানে এই অযথা দেরি তদন্তকে ব্যাহত করছে এবং ন্যায়ের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, পুলিশ প্রশাসনের হাতে লজিস্টিক, তথ্যপ্রযুক্তি, জনবল সবই রয়েছে। কিন্তু, তারপরও তদন্তে অগ্রগতি নেই, মূল আসামির খোঁজ নেই, স্বচ্ছতা নেই। এর অর্থ একটাই- এই তদন্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে। হয়ত, কোনো রাজনৈতিক চাপ, প্রশাসনিক নির্দেশ বা পুলিশ বিভাগের অভ্যন্তরীণ গাফিলতি এই প্রক্রিয়াকে অবমাননাকর ও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
আরও পড়ুন: বর্ধিত উৎসব ভাতা নিয়ে হঠাৎ জটিলতা, ঈদের আগে প্রজ্ঞাপন কি হবে?
তারা আরও বলেন, আমাদের একটাই দাবি এই হত্যাকাণ্ডের একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও সময়োপযোগী তদন্ত নিশ্চিত করা হোক। প্রকৃত খুনিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক। তদন্তের প্রতিটি ধাপ জনসম্মুখে তুলে ধরা হোক এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগ তাদের দায়িত্বহীনতার জন্য জবাবদিহির আওতায় আসুক।
এ সময় চার দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো-
১। দ্রুততম সময়ে জুলাই যোদ্ধা শাহরীয়ার আলম সোম্য হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা।
১.২। কমিটির তরফ থেকে নিয়মিত বিচারের অগ্রগতি উত্থাপন করো।
১.৩। তদন্তপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য সংশ্লিষ্ট সিসিটিভি ফুটেজ জন্মসম্মুখে উন্মোচন করো।
২। দায়িত্বগ্রহণের নয় মাসে ক্যাম্পাসে দুই হত্যাকাণ্ডসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে ভিসি ও প্রক্টরকে পদত্যাগ করতে হবে।
২.১। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান কর। বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় উদ্বাস্তু, পথশিশু ও ভ্রাম্যমাণ মানুষদের অত্র এলাকা থেকে সরিয়ে পুনর্বাসনের জন্য সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষকে চাপ প্রয়োগ করতে হবে।
৩। তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডসহ বিগত নয় মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিঘ্নকারী সকল ঘটনার যথাযথ বিচার নিশ্চিত করো।
৩.১। তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ড, ফ্যাসিবাদবিরোধী ঘৃণাস্তম্ভ মুছে ফেলা, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে লাশ ঝুলে থাকা, চারুকলার অভ্যন্তরে মোটিফ পুড়িয়ে ফেলাসহ নিরাপত্তাবিঘ্নকারী সকল ঘটনার বিচারের অগ্রগতি অনতিবিলম্বে উত্থাপন করো।
৩.২। বিচার নিশ্চিতে বিলম্বের জন্য দায়ী সকলের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করো।
৩.৩। ক্ষণিকা বাসে হামলার তদন্তসহ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরেও শিক্ষার্থীরা যে-সকল নিরাপত্তাঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে, সেসকল ঘটনার বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করো।
৪। ক্যাম্পাস এবং নাগরিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তার জন্য কাঠামোগত ও নীতিগত সংস্কার: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্কার, মাদক-সন্ত্রাস দমন, নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি, এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও উদ্যানে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রযুক্তিনির্ভর করা সহ সার্বিক তৎপরতা।
আরও পড়ুন: সাত কলেজ নিয়ে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসক নিয়োগ, প্রজ্ঞাপন জারি