থার্টি ফার্স্ট উদযাপনে কড়াকড়ি, নেপথ্যে টিএসসিতে ছাত্রলীগের হাতে বাঁধনের বস্ত্রহরণ
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৯ PM , আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৯ PM
২৫ বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি এলাকায় ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের সময় ছাত্রলীগের টুটুল-রাসেলদের হাতে বস্ত্রহরণের শিকার হয়েছিলেন ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইনডিপেনডেন্টের বিবিএ’র ছাত্রী শাওন আক্তার বাঁধন। ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ছিল রমজান মাসের ২৩তম দিন। ঘটনাটি ঘটে রাত ৩টার সময়।
তখন ওই ঘটনাটি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে সারাদেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়। বিষয়টি নিয়ে তখন সংসদেও আলোচনা হয়। মূলত: তার পরের বছর থেকেই বাংলাদেশে থার্টি ফার্স্ট উদযাপনে নানারকম কড়াকড়ি আরোপ শুরু হয়। যা ক্রমে বাড়তে বাড়তে এই বছরও বাড়ির ছাদেও কোনো উৎসব আয়োজনের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
আলোচিত এ ঘটনা নিয়ে সাপ্তাহিক ২০০০-এর ২১ জানুয়ারি ২০০০ সংখ্যায় কভার স্টোরি
এ ঘটনায় ২০০০ সালের ৬ জানুয়ারি বাঁধন বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি মামলা করেছিলেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছিল, ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাতে বাঁধন তার বান্ধবী শীলা রহমান, শীলার স্বামী জিল্লুর রহমান ও তার বন্ধু জাহাঙ্গীর একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে টিএসসি এলাকায় ইংরেজি নববর্ষ উদ্যাপন করতে আসেন। এ সময় ১০-১২ জন তাদের গাড়ি থামিয়ে বাঁধনকে নিয়ে টানাটানি শুরু করে। হামলাকারীরা বাঁধনের শ্লীলতাহানিও করে।
এরপর ওই বছরের ১৪ মে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রেজাউল করিম তিনজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। মোট ২৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৫ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী শাহাদাত হোসেন জানিয়েছিলেন, ১৫ জন আদালতে সাক্ষ্য দিলেও বাঁধন নিজেই সাক্ষ্য দেননি।
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা ছিলেন শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি ফজলুল হক রাসেল, খান মেজবাউল আলম টুটুল ও চন্দন কুমার ঘোষ ওরফে প্রকাশ। ওই ঘটনায় প্রথম দিকে গ্রেপ্তার হওয়া মামুন, মোক্তার হোসেন ও সুব্রত তরফদারকে মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফজলুল হক রাসেলকে বহিষ্কার করেছিল।
২০০০ সালের ওই ঘটনার ১০ বছর আট মাস পর ২০১০ সালে বাঁধনের সাক্ষ্য গ্রহণ ছাড়াই তার দায়ের করা মামলার বিচার সম্পন্ন হয়। রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফজলুল হক রাসেলসহ মামলার তিন আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছিলেন ঢাকার একটি আদালত।
রায়ে বিচারক বলেছিলেন, অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে না পারায় আসামিদের খালাস দেওয়া হলো। খালাসপ্রাপ্তরা হলো ফজলুল হক রাসেল, খান মেজবাউল আলম টুটুল ও চন্দন কুমার ঘোষ ওরফে প্রকাশ।
এবারে নির্দেশনায় কী রয়েছে?
থার্টি ফার্স্ট নাইটে রাজধানীর বাসা-বাড়ির ছাদ ও সব ভবন, উন্মুক্ত স্থান, পার্কে আতশবাজি ও পটকা ফুটানো বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টদের এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে গতকাল সোমবার রাজধানীর বাসা-বাড়ির ছাদ ও সব ভবন, উন্মুক্ত স্থান, পার্কে আতশবাজি ও পটকা ফুটানো বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। জনসমাগম ও আতশবাজি ঠেকাতে ওই দিন রাত ১০টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারির মতো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়।
এদিকে, থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষ-২০২৫ উপলক্ষে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে ১১ নির্দেশনা জারি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। আজ ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনা জারি করা হয়। সেগুলো হলো–
১. ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে অনুমতি ছাড়া উন্মুক্ত স্থানে কোনও ধরনের অনুষ্ঠান, সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, নাচ, গান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, র্যালি ও শোভাযাত্রা করা যাবে না।
২. ঢাকা মহানগর এলাকায় কোনও ধরনের আতশবাজি, পটকা ফোটানো ও ফানুস উড়ানো নিষিদ্ধ করা হলো।
৩. ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগর এলাকায় সব বার বন্ধ থাকবে।
৪. আবাসিক হোটেলগুলো সীমিত আকারে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠান করতে পারবে।
৫. ইংরেজি নববর্ষের প্রাক্কালে ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১ জানুয়ারি ভোর ৫টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, জনসমাবেশ ও উৎসবস্থলে কোনও ধরনের লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র বহন করা যাবে না।
৬. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বসবাসরত শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ৩১ ডিসেম্বর রাত ৮টার মধ্যে স্ব-স্ব এলাকায় প্রত্যাবর্তন করবেন এবং রাত ৮টার পর প্রবেশের ক্ষেত্রে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের পরিচয়পত্র দেখাতে হবে।
৭. গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় বসবাসরত নাগরিকদের ৩১ ডিসেম্বর রাত ৮টার মধ্যে স্ব-স্ব এলাকায় প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুরোধ করা হলো।
৮. গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় রাত ৮টার পর বহিরাগতরা প্রবেশ করতে পারবে না। তবে এ এলাকায় বসবাসরত নাগরিকরা নির্ধারিত সময়ের পর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ (কাকলী ক্রসিং) এবং মহাখালী আমতলী ক্রসিং দিয়ে পরিচয় দেওয়া সাপেক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন।
৯. হাতিরঝিল এলাকায় সন্ধ্যা ৬টা পর থেকে কোনও সমাবেশ বা অনুষ্ঠান করা যাবে না। এছাড়া ওই এলাকায় কোনও যানবাহন থামিয়ে অথবা পার্কিং করে কেউ অবস্থান করতে পারবেন না।
১০. সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে গুলশান, বনানী, বারিধারা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকায় যারা বসবাস করেন না, তাদের ওইসব এলাকায় যেতে নিরুৎসাহিত করা হলো।
১১. উচ্চশব্দে গাড়ির হর্ন বাজানো বা গণ-উপদ্রব সৃষ্টি করে এমন গান বাজানো যাবে না।